
নকআউট সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। যাত্রাতে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হওয়ায় আশার প্রদীপটা নিভু নিভু জ্বলছে। এখন সেই প্রদীপটা পুরোপুরি জ্বালাতে হবে। অর্থাৎ যেটুকু আশা জিইয়ে আছে বাংলাদেশের সেটাকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগান-পরীক্ষায় ফুল মার্কস পাওয়া চাই।
কাজটা যে মোটেও সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য। একদিকে দুঃস্মৃতির গাদ্দাফি আরেকদিকে আফগান বোলারদের চোখ রাঙানি। কোনো কারণে ভুল করলেই বিপদ। বাংলাদেশ দল এই লাহোরে খেলেছে তিন দফায়। প্রথম ২০০৩ সালে, এরপর ২০০৮ সর্বশেষ ২০২০। এই তিন দফায় কোনোবারই হাসিমুখে দেশে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই লাহোরে একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। যে ম্যাচে বৃষ্টির হানা আর উমর গুলের পেসে চূর্ণবিচূর্ণ হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। একাই ৫ উইকেট নেন গুল, তাও মাত্র ১৭ রান দিয়ে।
এরপর একই ভেন্যুতে আরো চারটি একদিনের ম্যাচ খেলে। যার দুটি পাকিস্তান, একটি আমিরাত আর বাকি ম্যাচ শ্রীলংকার বিপক্ষে। এই চারটির কেবল একটিতে জিতে তারা। সেটিও অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষ আমিরাতে সঙ্গে।
ওয়ানডের বাইরে গাদ্দাফিতে টি-২০ ফরম্যাটও সুখের ছিল না বাংলাদেশের জন্য। ২০২০ সালে এই মঞ্চে পাকিস্তানের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি টাইগাররা। এমন অপয়া একটা ভেন্যুতে কঠিন পরীক্ষা আজ। আফগানিস্তানের মতো ভয়ংকর বোলিং আক্রমণের সামলে কেমন করবে সাকিব বাহিনী সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
এতসব দুশ্চিন্তার মাঝে একটুকরো আশা বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্পগুলো। বড় মঞ্চে বাংলাদেশ চাপে পড়লে যে ভয়ানক হয়ে ফিরে আসে সেটা সবারই জানা। এশিয়া কাপ কেন বিশ্বকাপেও তেমন উদাহরণ অনেক।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও ভয় পেরিয়ে আলো দেখার আশায়, ‘আফগানিস্তান বোলিং আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমরা ওদের বিপক্ষে কিছুদিন আগেই খেলেছি। আমাদের খেলোয়াড়েরা কিছু সাফল্যও পেয়েছে। তবে ম্যাচের দিন কে কেমন খেলে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
তবু দুই স্পিনারকে তো চোখে চোখে রাখতেই হয়। তাদের নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই হয়। সেই দুজন আর কেউ নয় রশিদ খান ও মুজিব। যাদের ভয়টা কিছুতেই সরাতে পারছেন না টাইগার কোচ, ‘দুজন সত্যিকারের বিশ্বমানের স্পিনার ও দারুণ পেসার আছে ওদের। আমরা ওদের বিপক্ষে সম্প্রতি ওয়ানডে ও টি-২০ খেলেছি। আমরা জানি ওরা কী করতে পারে।’
চোটজর্জর বাংলাদেশ। টপ অর্ডারে লিটন দাসকে বড্ড মনে পড়ছে। যদি লিটন থাকতেন তাহলে হাথুরু গেম প্ল্যানও সহজ হতো। তবু হৃদয়-মেহেদীদের পানে চেয়ে বাংলাদেশ কোচ।আস্থা আছে তাদের ওপর, ‘টপ অর্ডারে এত বেশি অভিজ্ঞকে হারানো বড় চ্যালেঞ্জ। এটা যে কোনো দলের ক্ষেত্রেই সত্যি। কিন্তু কিছু করার নেই। একজন চোটের সঙ্গে লড়ছে। আরেকজন অসুস্থ। আমাদের দলে এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের ওপরই ভরসা রাখতে হবে। আর তাঁরা প্রতিভাবান, সে জন্যই তাঁরা দলে আছেন।’
সব কথার শেষ কথা বাংলাদেশের টপ অর্ডারের খেলোয়াড়দের মূল ক্লিকটা করতে হবে। আগের ম্যাচে জুনিয়র তামিম আর সাকিবরা যে ভুল করেছিলেন সেটা শুধরে আজ লাহোরে রানের ফুল ফোটালেই আফগান এক্সামে পাস করা সহজ হয়ে যাবে। সেই আশায় এ দেশের লাখো কোটি ক্রিকেট সমর্থকও।