দুই জন পরীক্ষার্থীর দুই জনই ফেল

পিবিএ ,বেনাপোল: শার্শা উপজেলার শাড়াতলা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাত্র দুইজন শিক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তারা দুই জনই ফেল করেছে। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় এটিই যশোর বোর্ডের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেখানে শতভাগ ফেল করেছে। যদিও এর আগে শতভাগ পাসের রেকর্ড রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটির। বিদ্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর এসএসসি পরীক্ষার জন্য এই স্কুল থেকে মোট তিনজন শিক্ষার্থী নাম রেজিস্ট্রেশন করা হয়। অসুস্থতার কারণে একজন পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। আরেকজন একটি মাত্র পরীক্ষা দেয়, বাকিগুলো দেয়নি। সব পরীক্ষা দিয়েছে মাত্র একজন। কিন্তু সেও ফেল করেছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালমা রনি বলেন, ‘তিনজনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাত্র একজন সব পরীক্ষা দিতে পেরেছে। দু’জন পরীক্ষা না দেওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অন্যজন। তাই সেও ফেল করেছে। ওই পরীক্ষার্থী ইংরেজিতে খারাপকরেছে।’ শাড়াতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালে ১০৫ শতক জমির ওপরে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে সর্বপ্রথম এখান থেকে ১৭ জন মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেয়, পাস করে ১৫ জন। পরের বছর ১৪ জনের মধ্যে পাস করে ১২ জন। ২০১৪ সালে ১২ জনের মধ্যে আটজন, ১৫ সালে আটজনের মধ্যে আটজন, ২০১৬ সালে পাঁচজনের মধ্যে তিনজন, ২০১৭ সালে চারজনের মধ্যে দুইজন এবং ২০১৮ সালে দুইজনের মধ্যে দুইজন পাস করে। অর্থাৎ, ২০১৫ ও ২০১৮সালে এই স্কুলের পাসের হার শতভাগ।

২০১২ সালে ১৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও ক্রমান্বয়ে এই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। একপর্যায়ে ২০১৮ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা নেমে আসে দুইজনে। শিক্ষার্থী সংখ্যায় কেন এই বিপর্যয়, এমন প্রশ্নের উত্তরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালমা রনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলে মূলত একটি বিভাগেই (মানবিক) মেয়েরা ভর্তি হয়। কিন্তু স্কুলে ভর্তিও পর তাদের অভিভাবকরা অনেক সময় মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন। সে কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসছে।

তবে, স্থানীয় ডিহি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য কামরুজ্জামান বলেন, ‘পাশেই পাকশিয়া হাইস্কুলের রেজাল্ট বেশ ভালো। অন্যদিকে, এই স্কুলের রেজাল্ট খারাপ। এছাড়া, স্কুলটি এমপিওভুক্ত নয়। শিক্ষকরা বেতনও পান না। সে কারণে মেয়েরা এই স্কুলে ভর্তি হতে চায় না।’ বাল্যবিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে এই ইউপি সদস্য বলেন, ‘বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটলে তো আমার জানার কথা। যদি এমন কোনও ঘটনা ঘটেও থাকে, তাহলে এলাকার বাইরে ঘটছে।’ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শাহিন আলম বলেন, ‘পাশাপাশি দুটি স্কুল হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়। মাঝে অবস্থা খারাপের দিকে ছিল, কেননা, স্কুলের ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এখন নতুন একটা বিল্ডিং হয়েছে। সামনের বছর থেকে ছাত্রী ভর্তির সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে বলে আমরা আশা করছি।’

স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম মাসুদ মজুমদার জানান, মূলত রাজনৈতিক দলাদলির কারণে এখানে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে অভিভাবকদের। সে কারণে প্রথম দিকে স্কুলে ছাত্রীদের উপস্থিতি তুলনামূলক ভালো ছিল। ধীরে ধীরে অভিভাবকরা বিমুখ হয়েছেন। শাড়াতলা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩৫ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ২০ জন, অষ্টম শ্রেণিতে ২৩ জন, নবম শ্রেণিতে ২৫ জন এবং দশম শ্রেণিতে ১২ জন ছাত্রী রয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। নয়জন শিক্ষক তাদের পাঠদান করান।
পাসের হার শূন্য বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা শিক্ষাবিষয়ক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান চৌধুরীর পিবিএ’কে বলেন, বিষয়টি আমি জানি এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেছি। আসলে এমপিওবিহীন স্কুল নিয়ে আমরা যন্ত্রণায় আছি। পেটে ভাত না থাকলে আসলে কোনও কিছুই ভালোভাবে হয় না।

পিবিএ/এসএন/এমএসএম

আরও পড়ুন...