দুই কোরিয়ার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলো কিম জং-উন

পিবিএ ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকাণ্ডে দোষারোপ করে দেশটির সঙ্গে আর কোনো ধরনের সংলাপে না বসার ঘোষণা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের দেওয়া ভাষণের জবাবে এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আজ শুক্রবার ভোরে আবারও জাপান সাগরে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া। এ নিয়ে এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ছয়বার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাল দেশটি। ছয়দিন আগে জাপান সাগরে দুটি স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া।
গত জুন মাসে এক বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে নতুন করে সমঝোতা আলোচনায় বসার ব্যপারে একমত হন। এরপর থেকেই ধারাবাহিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার জেরে উত্তর কোরিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
কী বলেছিল দক্ষিণ কোরিয়া?
জাপানের কাছ থেকে কোরিয়ার স্বাধীনতা অর্জন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসের এক ভাষণে ২০৪৫ সালের মধ্যে দুই কোরিয়াকে এক করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপানের কাছ থেকে কোরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে। এরপর দেশটি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া নামে দুটি দেশে ভাগ হয়ে যায়।
টেলিভিশনে দেওয়া এক পূর্বধারণকৃত ভাষণে মুন বলেন, ‘আমাদের জন্য এক নতুন কোরিয়ান উপদ্বীপ অপেক্ষা করছে। এই উপদ্বীপ নিজ অঞ্চল, পূর্ব এশিয়া ও গোটা বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।’
উত্তর কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া কী?
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের ভাষণের পরিপ্রক্ষিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুই কোরিয়ার মধ্যে সংলাপের অর্থ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংলাপ বলতে কী বোঝাতে চাইছে দক্ষিণ কোরিয়া? তারা তো কিছুদিন আগেও (যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে) যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণ অর্থনীতি কিংবা শান্তিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার কথা বলার কোনো অধিকার তাদের নেই।’
প্রেসিডেন্ট মুনকে উদ্দেশ্য করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “যিনি নব্বই দিনের মধ্যে আমাদের সিংহভাগ সেনা ধ্বংস করার পরিকল্পনা এঁটে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন, সেই তিনিই যখন উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ‘বৈঠকের’ কথা বলেন, তখন তাঁকে প্রশ্ন করতেই হয়, তাঁর চিন্তা-ভাবনা স্বাভাবিক কি না। তিনি আসলেই একজন নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সময়ে যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির ভাষ্য, এমন মহড়া ট্রাম্প ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের মধ্যেকার চুক্তির লঙ্ঘন। পাশাপাশি এ ধরনের মহড়াকে ‘যুদ্ধের প্রস্তুতি’ বলেও উল্লেখ করেছিল উত্তর কোরিয়া।

এর আগে ২০৪৫ সালের মধ্যে দুই কোরিয়া ফের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার টার্গেট বেঁধে দিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন। সে বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শতবর্ষ পূর্ণ হবে। যে কারণে দুই কোরিয়ার ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য এই সময়কে বেছে নিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। একইসঙ্গে ২০৩২ সালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মিলে অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।

১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানের শাসনে ছিল কোরিয়া। ১৫ অগস্ট তারা স্বাধীনতা পায়। যুদ্ধের সময় থেকে দু’দেশের সম্পর্কে তিক্ততা চরমে। কোরিয়ার স্বাধীনতার ৭৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে এদিন এক ভাষণে ইন বলেন, জাপানের সঙ্গে চলতি বাণিজ্য সংঘাত মিটিয়ে নিতে আগ্রহী দক্ষিণ কোরিয়া।

এদিন টোকিওতে এক অনুষ্ঠানে যুদ্ধের সময়ের ভুমিকার জন্য ‘গভীর অনুশোচনা’ প্রতাশ করেন জাপানের জানা নারুহিতো। সে সময় তাঁর দেশের ভূমিকা সঠিক ছিল না বলে আরও একবার স্বীকার করে নিল জাপানর রাজ পরিবার।

আরও পড়ুন...