পিবিএ,লালমনিরহাট: গরুর অভাবে নিজেই ঘানি টেনে সরিষার তেল তৈরী করে সংসার চালানো ছয়ফুলের পাশে দাঁড়ালেন লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার(এসপি) আবিদা সুলতানা ও বসুন্ধরা গ্রুপ।
গত বছর ৩১আগষ্ট এ এসবি বাংলাদেশ নামক ইউটিউব চ্যানেলে কাকিনা ইউনিয়নের দুই তরুন সালমান সাকী ও হাসানুজ্জামান হাসান একটি ভিডিও প্রতিবেদন তৈরি করে প্রচার করে।ভিডিও টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ব্যাপক সারা ফেলেছে এই দম্পতির।
চলতি মাসের ৮ আগষ্ট এ এসবি বাংলাদেশের ভিডিওটি দেখে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ছুটে যায় ছয়ফুল দম্পতির বাড়িতে। তাদের নিউজ দেখে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার ও বসুন্ধরা গ্রুপের দৃষ্টি গোচর হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার(১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ছয়ফুলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে একটি গরু অনুদান হিসেবে প্রদান করেন লালমনিরহাটের এসপি।
এর আগে বুধবার(০৯ সেপ্টেম্বর) বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী আফরোজা বেগম তাকে এক লাখ টাকা এবং এলপি গ্যাসের পক্ষ থেকে একটি গরু দেয়া হয়েছে।
জানা যায়,ঘানি টানা ছয়ফুল ইসলাম(৪৮) কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।সরিষা দিয়ে বাড়িতে ঘানিতে তেল তৈরী করে বাজারে বিক্রি করা ছয়ফুলের বাপ-দাদার পেশা।
আধুনিক যুগে ঘানি তেলের চাহিদা কমে গেলেও পৈত্রিক পেশা আঁকড়ে ধরে ২৫ বছর ধরে সংসার চালাচ্ছেন ছয়ফুল।
ঘানি টানতে গরুর প্রয়োজন হলেও অভাবি তেলি ছায়ফুল ইসলামের গরু কেনার মত সামর্থ্য ছিলো না। তাই উপায়ন্তর না দেখে তিন সন্তানের লেখাপাড়ার খরচসহ ৫ সদস্যের সংসার পরিচালনার প্রয়োজনে গরুর পরিবর্তে নিজেই তেলের ঘানি টানতেন তিনি।
মাত্র একটি গরুর অভাবে দিনভর কঠোর পরিশ্রম করেন তিনি। তার এ কাজে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম। স্বামী স্ত্রী দু’জনে দিনভর তেলের ঘানি টেনে সংসার চালিচ্ছিলেন তারা।
গরুর অভাবে নিজেই তেলের ঘানি টানেন এমন একটি ছবি সম্প্রতি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গনমাধ্যমেও গুরুত্বসহকারে খবরটি প্রকাশিত হয়।
ফলে বসুন্ধরা গ্রুপসহ প্রশাসনের অনেকের নজরে আসে ছয়ফুলের কঠোর সংগ্রামী জীবনের করুন চিত্র। এটি দেখে অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তার দিকে।
তেলি ছয়ফুল ইসলামের করুন চিত্র দেখে বৃহস্পতিবার(১০ সেপ্টেম্বর) তাকে সহায়তা করতে একটি গরু নিয়ে তার বাড়িতে আসেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার(এসপি) আবিদা সুলতানা। এ সময় তার সাথে ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর দপ্তর) আতিকুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার(বি সার্কেল) তাপস কুমার, কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আরজু মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ও কাকিনা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক প্রমুখ।
টাকা আর গরু পেয়ে বেজায় খুশি তেলি ছয়ফুল বলেন, মোর কষ্ট এবার দুর হইছে। যারা মোর কষ্ট দেখে টাকা ও গরু কিনে দিছেন আল্লায় তাদের মঙ্গল করবেন। মুই সব সময় তাদের জন্য দোয়া করিম। বসুন্ধরা গ্রুপ ও এসপি স্যারের সহযোগীতা পেয়ে এলা মোর তেলের ঘানি টানতে হইবে না।
পিবিএ/আসাদ হোসেন রিফাত/এসডি