মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার বিরাট একটি নিয়ামত হচ্ছে দুধ। তিনি মহাগ্রন্থ আল কোরআনে এ সম্পর্কে বলেন- وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشَّارِبِينَ
অর্থ: ‘তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থিত বস্তুসমুহের মধ্যে থেকে গোবর ও রক্ত নিঃসৃত দুগ্ধ যা পানকারীদের জন্যে উপাদেয়’। (সূরা: নাহল, আয়াত: ৬৬)
বিশ্ব নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পছন্দ করতেন। তাইতো মেরাজের রাতে তার সামনে জিবরাইল (আ.) দুধ আর মধু পেশ করে যেকোনো একটি গ্রহণের কথা বলেন। তখন তিনি দুধ গ্রহণ করে পান করেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুধ খাবার ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়’। আর বিজ্ঞানের আলোকে জানা যায়, দুধ স্বাস্থ্যের জন্য এক অতুলনীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। এ জন্যই দুধকে বলা হয়, ‘সুপারফুড’ বা সর্বগুণ সম্পন্ন খাবার।
যাহোক, আমরা সবাই কমবেশি দুধ পান করি। কিন্তু এ সংক্রান্ত যে সুন্নতগুলো রয়েছে সেগুলো অধিকাংশ মানুষই জানি না। যার কারণে সেগুলো মুসলিম সমাজ থেকে প্রায় হারাতে বসেছে। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন)
নিম্নে দুধ পানে রাসূল (সা.) এর তিন সুন্নত তুলে ধরা হলো-
(১) দুধ প্রত্যাখ্যান না করা: অর্থাৎ কেউ দুধ পান করতে দিলে বা উপহার হিসেবে দুধ দিলে তা ফেরত দেওয়া উচিৎ নয়।
ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তিনটি বস্তু প্রত্যাখ্যান করা যায় না। যথা:
১. বালিশ।
২. সুগন্ধি তেল/সুগন্ধি দ্রব্য ।
৩. ও দুধ। (সুনানে তিরমিজী (তাহকীককৃত) ৪১/ শিষ্টাচার, পরিচ্ছেদ/৩৭. সুগন্ধি দ্রব্যের উপহার প্রত্যাখ্যান করা মাকরূহ, হা/২৭৯০-সনদ: হাসান)
তিবি (রহ.) বলেন, এ কথার উদ্দেশ্য হলো, মেহমানকে বালিশ, সুগন্ধি এবং দুধ দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়। এগুলো খুব সামান্য উপহার। তাই তা ফেরত দেওয়া অনুচিত’।
(২) দুধ পান করার পর বিশেষ দোয়া পাঠ: ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- اللهمَّ بارِكْ لنا فيه وأطعِمْنا خيرًا منه
উচ্চারণ: ‘আল্ল-হুম্মা, বারিক লানা ফীহি, ওয়া আত্ব’য়িমনা খাইরান মিনহু’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, এতে আমাদের জন্য বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম খাবার দাও’।
আর যাকে আল্লাহ দুধ পান করান সে যেন এ দোয়া পড়ে- اللّهُمَّ بَاركْ لنَا فيهِ وَزِدْنَا مِنهُ
উচ্চারণ: ‘আল্ল-হুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়া যিদনা মিনহু’।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এতে আমাদের জন্য বরকত দাও এবং তা আরো বেশি করে দাও’।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘দুধ ছাড়া আর কোনো জিনিস নেই; যা একই সঙ্গে খাবার ও পানীয় উভয়টির জন্য যথেষ্ট হয়’। (সহিহ আবু দাউদ, হা/৩৭৩০)
উক্ত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করার পর বিশেষ দোয়া পাঠ করার কথা শিক্ষা দিয়েছেন।
(৩) দুধ পান করার পর কুলি করা: ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করার পর কুলি করলেন। অতঃপর বললেন, ‘এর মধ্যে তৈলাক্ততা আছে’। [সহিহ বুখারি (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) অধ্যায়: ৬১/ পানীয় দ্রব্যসমূহ]
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের খাদ্য-পানীয় ও জীবন-জীবিকায় বরকত দান করো এবং তোমার আরো বেশি নিয়ামত দ্বারা আমাদেরকে সমৃদ্ধ করো। নিশ্চয় তুমি মহান দয়ালু ও দাতা। আমিন।