দুর্যোগে মানুষের পাশে নেই খাগড়াছড়ি জেলার বিএনপি

পিবিএ,খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন জেলা শহর, ৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম পর্যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্টির ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এমন দুর্যোগে মানুষের পাশে নেই খাগড়াছড়ি জেলার বিএনপি।
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসসহ অন্যান্য সীমিত কর্মসুচীছাড়া জেলায় নিষ্ক্রিয়তার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও হারাচ্ছে দলটি। কোটি টাকার মালিক জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

যে কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলতা। জেলা বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকেই দেখা যায়নি ত্রাণ সহযোগিতা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক নেতা বলেন, খাগড়াছড়ি বিএনপিতে আফসার- আ: রব রাজা, সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুইয়ার এপিএস সাংবাদিক এইচএম প্রফুল্ল সহ অনেক ধনী ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি এবং ঠিকাদার রয়েছেন। যারা দলের সুসময়ে ক্ষমতা থাকাকালীন দলকে ব্যাবহার করে প্রচুর আর্থিকভাবে ফুলেফেঁপে উঠেছে। বর্তমানেও অনেকে ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যাবসা-বাণিজ্য করে যাচ্ছে। কিন্তু রাজনীতির মাঠে কিংবা করোনা মহামারির এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ কিংবা অস্বচ্ছল নেতাকর্মীদের পাশে তারা দাঁড়াননি। বর্তমানে আমাদের অনেক নেতাকর্মী খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন। আমাদের নেতারা একটিবারও খোঁজখবর নেয়নি। ক্ষোভে অভিমানে অনেক নেতাকর্মী আজ দলীয় কর্মকান্ড থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি একসময় জনবিচ্ছিন্ন সংগঠনে পরিণত হবে।

ইতি মধ্যে বিএনপি’র জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুইথি কার্বারী ও তখনকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং পরবর্তীতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বিএনপি’র দল ত্যাগ করে বর্তমান ক্ষমতাসীন শরিক মহাজোট জাতীয় পাটি(এরশাদ) জেলা শাখার সহ-সভাপতি কার্যকরী কমিটিতে যোগদান করেছেন। এতেও কেউ দল থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি।

সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের ভুয়াছড়ির ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: ইসমাঈল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকাটি খাগড়াছড়ির অন্যতম প্রত্যন্ত এলাকা। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। করোনার কারণে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে না পারার কারণে আমরা নিদারুণ কষ্টে আছি। এই পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন এখানে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিএনপি নেতাদের ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা যায়নি।
খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৪নং মহাজনপাড়ার বাসিন্দা জেবিকা চাকমা বলেন, করোনার কারণে আমাদের কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে আছে। পরিবারে দু’বেলা খাবার ব্যবস্থা করতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। পৌরসভার মেয়র মো: রফিকুল আলমের ত্রাণ সাহায্য ছাড়া আমরা আর কোথাও থেকে সহযোগিতা পাইনি।
ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহীত কর্মসূচি পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভুঁইয়াকে ফোন দিলে তিনি এই ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে ফোন কেটে দেন।

এদিকে গণআন্দোলনেই বেগম জিয়ার কারামুক্তির একমাত্র পথ। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মরণে আলোচনা সভা করেছে খাগড়াছড়িতে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ক্ষেত্র মোহন রোয়াজার সভাপতিত্বে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আনিসুল আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বিএনপির খাগড়াছড়ি আসনের সাবেক এমপি প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূইয়া ফরহাদ,সাংগঠনিক সম্পাদক আ: রব রাজা,জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল, জেলা ছাত্রদল সভাপতি শাহেদ সুমন,জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রমূখ। তাতে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এম এন আবছার, যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ হোসেনসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা এতে অংশ নেয়। এতে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, গণআন্দোলনেই বেগম জিয়ার কারামুক্তির এক মাত্র পথ। কারণ বর্তমান সরকার এর হাত থেকে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হলে বেগম জিয়ার কারামুক্তির কোন বিকল্প নেই। এ সময় তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের দেশ প্রেমের নানা স্মৃতি চারণ করে জাতীয় বিপ্ল্ব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন।

পিববিএ/চাইথোয়াই মারম/এসডি

আরও পড়ুন...