দাবি দাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার জন্য সচিবালয়ে গিয়েছিলেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দেখা মেলেনি। পরে বাধ্য হয়ে বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ফিরে আসেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধি দলটি।
সচিবালয় থেকে ফিরে আসা পুলিশ সদস্যদের প্রতিদিন দলের একজন এএসআই সাইফুল ইসলাম। তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা এখন সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে সচিবালয়ে যায় প্রতিনিধি দলটি। দলের সদস্যরা হলেন- চাকরিচ্যুত এএসআই সাইফুল, চাকরিচ্যুত কনস্টেবল সাদ্দান, মহিদুল এস আই মামুন, সিরাজুল হক ও শাজাহান সাজু।
বিগত সরকারের আমলে অবৈধভাবে চাকরিচ্যুত সব পুলিশ সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে গত বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা।
পুনর্বহাল প্রসঙ্গে তারা ১৫টি বিষয় উত্থাপন করেছেন
১. বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে প্রায় ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের মনে চাকরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরই ফলস্বরূপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পুলিশ বাহিনীর কিছু সিনিয়র দানবদের অবৈধ আদেশ পালন করে চাকরি বাঁচাতে অনিচ্ছা স্বত্বেও গণহত্যার মতো অপরাধ করতে বাধ্য হয়।
২. স্বৈরাচারী সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীর বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীকে ভয়ংকর দানবে পরিণত করতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে চাকরিচ্যুত করেছে।
৩. বিভাগীয় মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ন্যায়সংগত কোনো পথ অনুসরণ করেনি।
৪. মিথ্যা সাক্ষ্যগ্রহণসহ সব কিছুতেই তাদের পক্ষের একতরফা নীতি অনুসরণ করেছে। তারা এমনভাবে মামলা করেছে যেন, আদালত থেকেও কোনোভাবে বিবাদী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারেন।
৫. আদালত হতে রায় পাওয়ার পরও আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করেনি।
৬. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকা স্বত্বেও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও অন্যান্য অনুমোদনহীন হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিরীহ পুলিশ সদস্যদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে। বেশিরভাগ চাকুরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি।
৭. ডোপ টেস্টে যারা মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়েছে বা যারা স্বৈরাচারী সরকারের লোক ছিলেন তাদেরকে চাকরিতে বহাল রেখেছেন। আর যারা টাকা দিতে পারেনি তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করেছেন।
৮. যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন তাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন।
৯. বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কিছু পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করতে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছেন।
১০. পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পরিচিত লোকের মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করেছেন।
১১. ২০০৭ সালে সাবেক আইজিপি জনাব নূর মোহাম্মদ স্যার বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেন কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের দোসরার আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ছোটখাটো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি চাকুরিচ্যুত করেছেন।
১২. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার অব. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবিক বিবেচনায় সব পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের আদেশ প্রদান করার পরও স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োজিত দোসররা তা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছেন।
১৩. অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার পর যদি বিজ্ঞ আদালতে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় তা হলে গুম খুনের হুমকি দিয়েছেন। এসবের ভয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেনি।
১৪. অনেক পুলিশ সদস্যকে জোরপূর্বক অথবা স্বাক্ষর জাল করে চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অবসর বা বাধ্যতামূলক অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।
১৫. পুলিশ প্রধান পি আর বি ৮৮৪ প্রবিধান মতে সব চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকলেও বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের বাধার কারণে তা প্রয়োগ হচ্ছে না।