সাব্বির আহমেদ সুবীর : প্রায় সময় একটা কথা শুনতে পাই, বিভিন্ন লেখায় পড়ি, কেউ কেউ ফেসবুকে স্ট্যাটাস হিসেবেও পোস্ট করেন – “দেশকে বদলাতে হলে আগে মানুষকে বদলাতে হবে।”
কেউ কেউ উদাত্ত আহবান জানান, “আসুন, নিজেকে বদলাই।” কিন্তু কেউ কি এমন দুইটা উদাহরণ দিতে পারবেন যে, রাষ্ট্র বদলানোর আগে, রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলো বদলানোর আগে, রাষ্ট্র পরিচালনার আদর্শ পরিবর্তনের আগে সব বা অধিকাংশ মানুষ “বদলে” গেছে এবং তারপরে রাষ্ট্র, সরকার, দেশ, সমাজ বদলেছে? ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে এই পর্যন্ত কবে কোথায় এই ঘটনা ঘটেছে? এই প্রশ্নটা কৌতুহল হিসেবে বিবেচনা করুন|
ব্যক্তিকে বদলাতে বলা আসলে বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা। ব্যক্তির আচরণ বদলে ফেলে আপনি বড়জোর নিজের উঠোন পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবেন। দেশের বিরাজমান ব্যবস্থা টিকে থাকার দায় ব্যক্তির ঐটুকুই যে তিনি তা গড়ে ওঠার সময় প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করেনি, কিন্তু চলমান অবস্থার দায় – সব অন্যায়ের দায় তাঁর কাঁধে তুলে দিয়ে তাকেই অপরাধী বানানো, তাকে হতাশ করা, তাঁর চারপাশের মানুষের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরী করার উদ্দেশ্য একটাই – সম্মিলিত প্রতিরোধের ধারণাকে অবহিত করা
“নিজে ঠিক থাকলে সব ঠিক”, “দোষ হইলো মানুষের”, “আমরা যেমন তেমনি অবস্থা” এই জাতীয় কথা বিশ্বাস করা ও বলার জন্যে উৎসাহ জোগানোর উদ্দেশ্য – আপনি ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না, অন্যায় নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না। ওই প্রশ্ন তোলাটাই রাজনীতি; পরিবর্তনের প্রথম শর্ত হচ্ছে শিরদাঁড়া শক্ত করে, মাথা উঁচু করে প্রশ্ন করা। কিন্তু তা যেন আপনি না করতে পারেন সেই জন্যে আপনার ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে একটা অনাচারী ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্যেই বলা হবে আপনিই দোষী, আপনার চারপাশের সাধারণ মানুষ দোষী|
সবাই উদাহরণ দিতে গিয়ে বলে থাকেন “আপনারা বদলালেই সব ঠিক হয়ে যাবে”। যারা এমনটা বলে তারাই অপকর্ম করতে দেখি। তখন অবাক হয়! এই ধরণের কথাবার্তাকে চ্যালেঞ্জ করা দরকার, প্রশ্নবিদ্ধ করা দরকার-এখনই।
লেখক : সাংবাদিক ও সমাজকর্মী