রাজধানীর রূপনগর থানার ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা থেকে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতা পারভেজ হোসাইনসহ ৪ জন’কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)। সেই সঙ্গে জাল নোট তৈরীতে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকালে রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোসতাক আহমেদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. পারভেজ হোসেন (২৪), মো. রুবেল ইসলাম ওরফে হৃদয় (১৯), নুর আলম ওরফে সাগর (২৩), মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাকিম (২২)।
মোসতাক আহমেদ বলেন, সম্প্রতিকালে জাল টাকা তৈরির সাথে বেশ কয়েকটি চক্র জড়িত আছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে অচল করতে এবং সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে অধিক মুনাফার লোভে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার সংঘবদ্ধ কিছু চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ছে। এই চক্রগুলো জাল টাকা তৈরি করে নির্দিষ্ট কয়েকজন সদস্য দিয়ে আসল টাকার ভেতর জাল টাকা মিলিয়ে দিয়ে সহজ সরল মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সূত্রের মাধ্যমে জানতে পারে ঢাকা মহানগরীর মিরপুরের রুপনগর থানা এলাকায় একটি বাসায় একটি চক্র জাল টাকা তৈরি করে আসছে। আভিযানিক দলটি বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জালনোট তৈরী ও ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতাদের গ্রেফতার করে।
এসময় আসামীদের কাছ থেকে ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা মূল্যমানের জালনোট যার মধ্যে ২০০ টাকার জাল নোট ১২৪০ টি এবং ১০০০ টাকার জাল নোট ১ টি, মালয়েশিয়ার ৫০ রিংগিত মূল্যমানের জাল নোট ৪০টি, ওমান এর ৫০ রিয়াল মূল্যমানের জাল নোট ৪২ টি, সৌদিআরব ২০ রিয়াল মূল্যমানের জাল নোট ২৩ টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০ দিরহাম মূল্যমানের জাল নোট ৪২ টি, জাল নোট তৈরীতে ব্যবহৃত ০১ টি কালার প্রিন্টার, ১ টি ল্যাপটপ, ৫০ পাতা সাদা কাগজ, ৩ টি জাল টাকা তৈরীতে ব্যবহারকৃত ক্যামিক্যাল সহ প্লাস্টিকের কৌটা, টাকা কাটার কাজে ব্যবহৃত ১ টি কাচি, ১টি স্টীলের স্কেল, ১ টি এন্টি কাটার, এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার ১৯০ গ্রাম, ১টি জাল টাকা বহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাভেল ব্যাগ, ৪ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ১ হাজার ১২০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের কাজের ধরন জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত পারভেজ জাল নোট ছাপানো চক্রের মূলহোতা। সে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নেটওয়ার্ক তৈরী করে। এ সকল পেইজ প্রমোট ও বুস্টিং করে অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করে যারা আসন্ন মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতর কে টার্গেট করে জাল নোটের ব্যবসায় লিপ্ত হয়। তারা প্রতি ১ লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত রুবেল দেশী-বিদেশী জাল টাকা ছাপানোর মূল কারিগর। সে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলা হতে টাকা ছাপানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং জাল টাকার ডিজাইনসহ ছাচ সংগ্রহ করে। অনলাইনে প্রাপ্ত চাহিদা অনুযায়ী সে বিভিন্ন মূল্যমানের দেশী বিদেশী জাল টাকা ছাপানোর কাজ করতো।
গ্রেফতারকৃত নুর আলম এই চক্রের কাটিং মাস্টার হিসেবে পরিচিত। তৈরীকৃত দেশী-বিদেশী জাল টাকা প্রিন্টিং এর পর সঠিক সাইজ অনুযায়ী কাটিং এর কাজ করতো। পাশাপাশি ফোনে এবং অনলাইনে অর্ডারকৃত জাল টাকা বিভিন্ন জনের কাছে পৌছে দিতে ডেলিভারি ম্যান হিসেবেও কাজ করতো।
গ্রেফতারকৃত মো. মোস্তাফিজুর রহমান অটোরিক্সা গেরেজের মালিক। তার রিক্সা গ্যারেজকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করে মূলহোতা পারভেজ এর নেতৃত্বে জাল টাকার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল। মাঝে মাঝে সে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে ও কাজ করতো।
উদ্ধারকৃত জাল টাকা, জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদি ও গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।