দেশের ফুটবলে আবার জাগরণ আসুক!

দ্বীন মোহাম্মদ: লাল-সবুজের এই দেশে ফুটবল যেন ঘুমিয়ে গেছে। খুব ইচ্ছে করে লিখি- বেঁচে থাকার গল্প ও জনমানসের মনে জেগে ওঠা প্রজন্ম, ফুটবল যাদের চেতনায় ও অস্তিত্বে।
একবারও কি ইচ্ছে জেগেছে আমাদের মনে- ইশ! আমাদের দেশ যদি বিশ্বকাপ খেলত? কখনো কি প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে মনে- আমার দেশটি নেই কেন এই বিশ্ব আসরের মঞ্চে? জেগেছে কি কখনো? কখনো কি ভাবনা জন্মেছে কেন আমরা পিছিয়ে?

জেগেছে ঠিকই। আবার হয়তো হতাশা এসে থামিয়ে দিয়েছে মনের সব ঝড়।

মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে জায়গা করে নিতে চলা আমাদের গর্ব করার মতো কিছুই কি নেই? স্যাটেলাইট আছে, আছে সাবমেরিন, সমৃদ্ধ জিডিপি। আছে এগিয়ে যাবার প্রেরণা, উন্নত দেশ গড়ার ইচ্ছা। আছে ক্রিকেটের সাফল্য। আরও অনেক স্বপ্ন, অর্জন, সাফল্য আছে। শুধুই যেন নেই ঝিমিয়ে পড়া অদম্য ফুটবলকে জাগিয়ে তোলা ও বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন। এমন কেউ কি নেই যে দেবদূত হয়ে ভালোবাসার খেলাকে যত্ন করে দায়িত্ব নিয়ে পৌঁছে দেবে বিশ্বদরবারে?

ধরে নিলাম বাংলাদেশে কিচ্ছুই নেই। মানবসম্পদ তো আছে অন্তত। ২০ কোটি জনগণের মধ্যে কি মাত্র ১৫-২০ জন মেধাবী ফুটবলার নেই, যারা প্রতিনিধিত্ব করবে আমার দেশকে, লাল-সবুজের পতাকা উঁচিয়ে ধরবে বিশ্বমঞ্চে?

আছে। কেউ না কেউ আছে। তাহলে তারা কোথায়?

শুধু হিসাব মিলাই আর ইতিহাস পড়ি। যে দেশ তার ভাষার জন্য ৫২-তে হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, যে দেশ তার স্বাধীনতার জন্য ৭১-এ অস্ত্রে সুসজ্জিত বর্বর বাহিনীর কাছে নিরস্ত্র থেকেও ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে, সে জাতি কীভাবে ফুটবল নামের প্রেম থেকে সবার থেকে পিছিয়ে থাকে?

বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন আর জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। এই খেলাটি বুঝতে সহজ। তাছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময়ের হওয়ায় শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও এই খেলা উপভোগ করে।

স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম দিয়ে প্রথম শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবলের অগ্রযাত্রা। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে কাজী সালাহউদ্দিন, অমলেষ সেনরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার জন্য। প্রথম ম্যাচ ছিল তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া একাদশের বিপক্ষে। খেলার ফলাফল ২-২ সমতা। ১৬টি প্রীতি ম্যাচ খেলে মুক্তিযোদ্ধা ফান্ডে ৫ লাখ টাকা জমা করে স্বাধীন বাংলা ফুটবল টিম। তাদের এই ভিন্নধর্মী চেষ্টা প্রমাণ করে দিয়েছিল খেলার মাধ্যমেও এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা যায়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল গঠিত হয়েছিল আন-অফিসিয়ালি ১৯৭২ সালে। ১৯৭৩ সালে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রীতি মাচে ২-২ গোলে ড্র হয়। এরপর মালদ্বীপের বিপক্ষে ৮-০ গোলের এক বিশাল জয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেল এএফসি ও ফিফার অনুমোদন লাভ করে। মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশাল জয়ের অনুপ্রেরণায় আর শক্তিতে উদ্দীপ্ত হয়ে ১৯৮০ সালে বাংলার দামাল ছেলেদের এফসির কোয়ালিফাই পর্বে সবচেয়ে বড় অর্জন গ্রুপ স্টেজে চ্যাম্পিয়ন। সেখানে অন্য গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ছিল ইরান, উত্তর কোরিয়া, চীন, সিরিয়ার মতো দলগুলো। আর তখন থেকেই বাংলার মানুষ স্বপ্ন দেখা শুরু করে দেয় এই ফুটবলকে ঘিরে। এই ফুটবল অনেক দূর যাবে।

আবাহনী-মোহামেডান উত্তুঙ্গ দ্বৈরথ কে না জানে। সেই সোনালি অতীত আজও বাবা-চাচাদের পুড়িয়ে বেড়ায়। গ্রামগঞ্জের মানুষ শুধু এই ঢাকা ডার্বি দেখার জন্য পাড়ি দিত শত কিলোমিটার। ভ্যান, বাসের ছাদ, ট্রাক্টরে ভরে আসা মানুষজনের মিলনমেলা হতো স্টেডিয়ামের গ্যালারি। অনলাইনে সেই সাদাকালো প্রিন্টের দর্শকভরা মাঠের ছবি নতুন প্রজন্ম দেখলে অবাক হওয়ারই কথা। ফুটবলের আমেজের শহর হয়েছিল ঢাকা। এ যেন এক রূপকথার শহর।

হঠাৎ এ যুদ্ধ থেমে যায় বারবার নাশকতা আর দর্শকদের ক্ল্যাশের কারণে। ধীরে ধীরে দর্শক হারিয়ে যাচ্ছে মাঠ থেকে। এরই মধ্যে আসে ফুটবল জাগরণের নতুন মৌসুম। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ সাফ গোল্ডকাপ, ২০০৩ সাল। এ বছর মালদ্বীপকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য আজও চোখে লেগে আছে। গ্যালারি ভরা দর্শকের চোখে শান্তি। আহ! এ যেন সুখকে বরণ করে নেয়ার উত্তেজনা। রোকনুজ্জামান কাঞ্চন, আরিফুল কবির, আরিফ খান জয় তখনকার তারকা ফুটবলার ছিল। বারবার ক্যামেরা তাদেরই ফোকাস করছিল। এটা দেখে বুঝেছিলাম, এরাই সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়৷ আহ! জয়ের আনন্দে বিটিভিতে খেলা দেখছিলাম। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। আর এটা দেখে মনে মনে ভাবছিলাম ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো যদি আমরাও ফুটবল বিশ্বকাপ খেলি তাহলে কেমন হবে! শৈশবের ভাবনায় এক রোমাঞ্চকর কল্পনার দৃশ্য।

এরপর আবার মাঠের অসহায়ত্ব বাড়ে। দর্শক আর ফুটবল ঘুমিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে গন্তব্যহীন পথে।

একের পর এক ব্যর্থতা আর নানা দুর্নীতির জাতাকলে পড়ে ঢাকা থেকে ফুটবল হারিয়ে গেছে। আর তখন থেকেই ক্রিকেটের জয়গান শুরু। আর এখন ক্রিকেটের জয়োৎসবের ছায়ায় পড়ে ফুটবল লুকিয়ে গেছে লজ্জার চাদরে।

হ্যাঁ, অনেক ব্যর্থতা রয়েছে। রয়েছে অনেক গ্লানি আর আমার-আপনার দায়বদ্ধতা। বাফুফের একের পর এক লক্ষ্যমাত্রা ফ্লপ হচ্ছে। আর ফুটবলটা ওই যত্নহীন মাঠেই পড়ে আছে। তবে এত সব হা-হতাশার মাঝে কিছুটা আশা জাগানো ভালো সংবাদও আছে। অনূর্ধ্ব পর্যায়ে সফলতা। এই তো ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় বাঘিনীরা। ভুটানে অনুষ্ঠিত ২০১৮ সাফে অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন এবং সে বছরই সাফ অনূর্ধ্ব উইমেনে মেয়েরা শিরোপা জেতে। ছেলেরা যেভাবে পিছিয়েছে, সাবিনা-সানজিদারা ঠিক উল্টো পথে এগিয়ে গেছে। মেয়েদের ফুটবলে এভাবে সফলতা এলেও সব আবার ঘুরে-ফিরে হারিয়ে যায় যত্ন আর পরিচর্যার অভাবে।

১২ জুন ২০১৯, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জামাল ভূইয়ার শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় তাও আবার শক্তিশালী কাতারের বিপক্ষে। ১৫ অক্টোবর ২০১৯ সালে সল্টলেকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করে খেলা বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে থাকলেও শেষ মুহূর্তের গোলে সমতা ফেরায় ভারত। জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ।

যখন খবরে দেখি কাপ জেতা কিশোরী ফুটবলারদের লোকাল বাসে পাঠানো হয় বাড়িতে, আর কোমলমতি কিশোরীরা পথে লাঞ্ছনার শিকার হয়, তখন মনে হয় একটি নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থার দায়িত্ব কি বাফুফের নেই? যখন দেখি সাধারণ জ্বরে একজন ফুটবলার মারা যায়, খবরের কাগজে দেখি অনূর্ধ্ব-১৬ সাফ চ্যাম্পিয়ন করা অধিনায়ক গোলকিপার অভাবের টানাপোড়েনে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে, তখন হতবাক হই। পেশাদার লিগ চলাকালীন জাতীয় স্টেডিয়ামে ক্যামেরায় ধরা পড়ে মিষ্টি কুমড়ার চাষ। এত সব নেতিবাচক খবরে এই অকাল কুষ্মাণ্ড বাফুফেকে তিরস্কার জানাতে কার না ইচ্ছে জাগে!

ফুটবলের সফলতা যেমন দর্শকদের আনন্দ দেয়, তেমনি এর ব্যর্থতা তাদের ভাবায়, পোড়ায়। দিনের পর দিন প্রিয় ফুটবলের ব্যর্থতার দায়ভার ফুটবলের নীতিনির্ধারক বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন- বাফুফের। তারা এক যুগের বেশি সময় ধরে ফেডারেশনে রাজত্ব করলেও ফুটবল ও ফুটবলারদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। দুর্নীতি, ক্যাসিনো, সিন্ডিকেটে পদদলিত হয়ে ফুটবলের উন্নয়ন হারিয়ে যাচ্ছে।

আর কিছুদিন পর বাফুফের নির্বাচন। জনসাধারণ থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্ম ফেডারেশনের গত এক যুগের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ। তারা পরিবর্তন চায়, ফুটবলের উন্নয়ন চায়, দুর্নীতিমুক্ত বাফুফে চায়। আগামী ৩ অক্টোবর নির্বাচন। ১৩৯ কাউন্সিলরের ভোটে নির্বাচিত হবেন আগামী ‍দিনের ফুটবলের অভিভাবক। তরুণদের প্রত্যাশা- এই ঘুণে ধরা চলমান মরীচিকাময় ফুটবল থেকে উত্তরণ।

কে দেখাবে নতুন দিনের আলো? ঘুরে-ফিরে যারা ফুটবলকে নিজেদের আখের গোছানোর ব্যবসা বানিয়ে বসে আছেন, তারাই আবার? বাফুফের বর্তমান কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ তরুণরা এক হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে হ্যাশট্যাগের ঝড় তুলেছে। ফেইসবুকে ১ নম্বর ট্রেন্ডিংয়ে আছে #Salauddin_out। গত ১৪ তারিখ ফুটবলের টানে ফুটবলকে ভালোবেসে তরুণ প্রজন্ম মানববন্ধন করেছে। এই মানববন্ধনের চেতনা আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে সারা দেশে। ফুটবলপ্রেমী সমর্থকরা তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। তারা চায় কেউ একজন ত্রাতা হয়ে আসুক, ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে আসুক বাংলার ফুটবল উন্নয়নে। এই ঘুমন্ত ফুটবলকে জাগিয়ে দিতে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ক্রীড়াপ্রেমী একজন মানুষ। আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনার কাছে নিশ্চয় সবকিছুর খবর আছে। তরুণসমাজ বাফুফের ভবিষ্যৎ কেমন চায় একটু দয়া করে দেখুন, জানুন। আপনার কাছে যেন সঠিক বার্তাটা পৌঁছায় সেই আশাটাই তরুণরা করছে। তারা অপেক্ষা করছে, অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছে ফুটবলের উন্নয়নে আপনার মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য। আপনার ভাই শেখ কামাল একজন ফুটবলের সংগঠক। ফুটবলকে ভালোবাসতেন। আপনিও পছন্দ করেন। তাই আপনার একটু সুদৃষ্টিই পারে ফুটবলের বর্তমান দীনহীন প্রেক্ষাপট বদলে দিতে।

সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, মিডিয়া, স্পন্সরশিপের পৃষ্ঠপোষকতা আর আমার-আপনার হাতটা এগিয়ে দিলেই সোনালি অতীত ফিরে পাওয়া যাবে বলে আশা রাখি। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকাটা খুব কঠিন হবে না, যদি একটি সঠিক প্ল্যান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে এগোনো যায়। এক যুগের পরিচর্যার সক্ষমতা নিয়ে এগোলে একটা ফলাফল অন্তত আশা করা যায়। স্কুল ফুটবল শুরু হোক, জেলা লিগগুলো নিয়মিত হোক, DFA কে দেখভাল ও নজরদারি করার জন্য কমিটি করা হোক। দেশের ক্লাবগুলো পেশাদারি মনোভাব নিয়ে দল সাজাক, আধুনিক একাডেমি করুক। বয়সভিত্তিক দলগুলোর পরিচর্যা হোক আধুনিক ফুটবলের মানদণ্ডে।

যেখানে একটা ফুটবল একাডেমি নেই, সেখানে কীভাবে ফুটবলের পাইপলাইন তৈরি হবে? সবার আগে আধুনিক জিমনেসিয়াম সমৃদ্ধ ফুটবল একাডেমি প্রয়োজন। দীর্ঘমেয়াদি কোচিং স্টাফ নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটি দিক খেয়াল করুন। আমি-আপনি কয়জনই বা বাংলাদেশের ফুটবলারদের দু-তিনজনের বেশি নাম জানি? তাদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করান। সবাইকে সামনে নিয়ে আসুন। এই দায়িত্বটা মিডিয়ার নিতে হবে যেমনটা ক্রিকেটে করা হচ্ছে। শিশুরা পর্যন্ত প্রতিটা ক্রিকেটারের নাম জানে। কিন্তু ফুটবলে এই চিত্র নেই। ছোট বাচ্চারা যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করবে বাংলাদেশে কি কোনো ফুটবলার নেই? বাংলাদেশে কি কোনো ফুটবল টিম নেই? তখন আপনি কী বলবেন- ভালো খেলে না ফুটবল টিম, র‍্যাংকিং ১৮৭ নম্বরে? এই লজ্জাবোধ থেকে বাঁচার জন্য হলেও ভালোবাসুন নিজের দেশের ফুটবলকে।

আমাদের মানবসম্পদ আছে, মেধা আছে। শুধু প্রয়োজন চর্চা আর উপযুক্ত দক্ষতাকে সঠিক ব্যবহার করার। যখন পত্রিকায়-টিভিতে দেখি বার্সেলোনা ক্লাব বাংলাদেশে ফুটবল স্কুল খুলবে, যখন দেখি ব্রাজিলের সিবিএফ বাংলাদেশের ফুটবলে কাজ করতে চায়, যখন দেখি সৌদি আরব ক্রীড়া চুক্তি করতে চায় ক্রিকেটের বিনিময়ে ফুটবল উন্নয়ন করতে চায়, তখন আশা রেখে স্বপ্ন বুনতে সাহস পাই। আর বসে থাকি কখন এসব বাস্তবায়িত হবে।

আমরা কেন বিশ্বকাপ খেলব না? যেখানে বরফের রাজ্যে ফুটবলের রূপকথা রচিত হয়েছে। হ্যাঁ, আমি আইসল্যান্ডের কথা বলছি। ছোট একটি দেশ, যার জনসংখ্যা আমাদের একটা উপজেলার সমানও না, মাত্র ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৫২ জন। আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা আমাদের দেশের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। যদি ওরা পারে আমরা কেন পারব না? যদি উত্তর আফ্রিকার ছোট একটি দেশ তিউনিসিয়া বিশ্বকাপ খেলে দেখাতে পারে, আমরা কেন পিছিয়ে থাকব?

কায়সার হামিদ, মোনায়েম মুন্না, আফজাল, আরিফ খান জয়দের মতো কিছু নতুন প্রজন্মের সুপারস্টার বেরিয়ে আসুক। দর্শক শুধু তাদের খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়াম পাড়ায় আবার ভিড় জমাবে। ফুটবলে একজন মাশরাফি প্রয়োজন, যে যুগের পরিবর্তন করে দেবে। ফুটবলে একজন সাকিব প্রয়োজন, যে একাই নিজের দেশকে পরিচয় করিয়ে দেবে বিশ্বমঞ্চে।

ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে কিছুটা ক্লান্ত। এবার একটু বিকেলের বারান্দায় চেয়ারে বসে চা নিয়ে অঙ্ক কষি; আমার বয়স ৩৮ বছর, সাল ২০৩৮, বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং চলছে। একদল দামাল বেপরোয়া তরুণ সব বাধা পেরিয়ে এশিয়ান অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েছে। এই অনুভূতিটা অতিরিক্ত আবেগে হাসিমুখের জল আসার মতো। তখন থেকে দেশের পতাকাও বিক্রি হবে পাল্লা দিয়ে। আর লাল-সবুজের পতাকাটা হবে ভিনদেশি পতাকার চেয়েও বড়। এই তরুণ তারকায় ভরা দল সবার মন জয় করে নিয়েছে। আবার ঢাকায় ফুটবলের আমেজ জন্মেছে। তবে এটা অতীতের আবাহনী-মোহামেডান নয়। এটা নর্থ ঢাকা আর সাউথ ঢাকার লড়াই। হুম এটাই নতুন ঢাকা ডার্বি। প্রতিটি বড় বড় শহরের নামে দল। এ যেন লন্ডনের সভ্যতা আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। তত দিনে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। অনেক অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম হবে। প্রিয় দলের জার্সি পরে সমর্থন দিতে মানুষের অভাব হবে না। এমন দিনে বাংলাদেশ বুঝে যাবে ফুটবল আসলেই খেলা নয়, এটা আবেগ, এটা এন্টারটেইনমেন্ট, এটা ব্যবসা আর এটাই গ্লোবালাইজেশন অব স্পোর্টস। স্পেন ফুটবলকে বিজনেসে রূপান্তর করছে। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাব প্রতিষ্ঠা করে তাদের দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

চলুন না বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে পরিবর্তন চেয়ে রাস্তায় নামি। নিজের দেশের মরিচাধরা ফুটবলকে একটু বাঁচিয়ে তুলি। তবেই বিশ্বকাপের আসরে আমার অস্তিত্ব, আমার অহংকার, লাল-সবুজের পতাকা উড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারব নতুন করে। আর বুকে হাত রেখে প্রিয় দলের সমর্থক হয়ে বলব- ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’

লেখক: শিক্ষার্থী, মেরিন সায়েন্স (২০১৪-১৫ সেশন), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

পিবিএ/এসডি

আরও পড়ুন...