পিবিএ ডেস্ক: প্রায় দেড় বছর পর দেশের মাটিতে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ দল। এই জয়ে টাইগাররা পেয়েছেন স্বস্তির সন্ধান। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে স্বগতিকদের সহজ জয় পেতে দেয়নি সফরকারীরা। ৩২২ রান তাড়া করতে নেমে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে জিম্বাবুয়ে। শেষ ওভারে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থামে ৩১৮ রানে। সেই সুবাদে জয় আসে মাত্র ৪ রানের। এক কথায় বাংলাদেশের বুকে কাঁপন ধরিয়ে হেরেছে তারা। অথচ প্রথম সিরিজের ম্যাচে মাত্র ১৫২ রানে গুটিয়ে গিয়ে হেরেছিল ১৬৯ রানে।
২ চার ও ৫ জয়ে ২৮ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করে এই অসাধ্যকে সাধন করেই ফেলেছিলেন পেসার টিরিপানো। এ জয়ে জিম্বাবুযের বিপক্ষে ১১ ও সব মিলয়ে টাইগারদের ২৫ তম সিরিজ জয়। গতকালের জয়ে বড় অবদান ছিল তামিম ইকবালের। দেশের সেরা এই ওপেনার ২৩ ম্যাচ পর নিজের ১২ তম সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেই সঙ্গে নিজের ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১৫৪ রানের রেকর্ড ভেঙে নিজেই করেন ১৫৮ রান। যা টাইগাদের ক্রিকেট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা চতুর্থ সিরিজ জয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার।
প্রথম ম্যাচে ৩২১ রান তাড়া করে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি জিম্বাবুয়ে। সফরকারীদের গুঁড়িয়ে ১৬৯ রানের রেকর্ড জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে দারুণ লড়াই জমিয়ে তোলেন। যদিও শুরুতেই হোচট খেয়েছিল তারা। ওপেন করতে এসে দলের ১৫ রানের সময় শফিউলের শিকার হন ২ রান করা চাকাভা। কাভারে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান লিটন দাস। এরপর দলের ৪৪ রানের সময় অভিজ্ঞ ব্রান্ডন টেইলকে রান আউট করে সাজঘরের ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। একবার রান আউট হতে হতে বেঁচে গিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এরপর আরো বড় ধাক্কা অধিনায়ক শন উইলিয়ামসনের পতনে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের উইকেট তুলে নেন মিরাজ। ৩ চারে মারে উইলিয়ামসন করেন ১৪ রান ২৪ বলে।
৬৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে আরো একটি বড় রানের ব্যবধনে হারের শঙ্কাতে পড়ে জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ওপেন করতে এসে দারুণ ভাবে এক প্রান্ত আগলে রাখেন টিনাশে কামুনহুকামউইর। সেই বিপদের সময় তার সঙ্গী ওয়েসলি মাধেভেরে। তবে তরুণ ওপেনার পেয়েছেন তার নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। ৬৪ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পথে ৫ চার ও ২ ছক্কা মেরেছেন এই ডানহাতি। অন্যদিকে পাঁচ বছর পর ওয়ানডেতে ফেরা আল আমিন হোসেন নিজের দ্বিতীয় ওভারে পেতে পারতেন উইকেট। যদি মাধেভেরে স্লিপে তার বলে তোলা ক্যাচ নাজমুল হোসেন শান্ত হাতছাড়া না করতেন। তবে দু’জনের ৩৫ রানের প্রতিরোধ জুটি ভাঙ্গে তাইজুল ইসলাম। বোল্ড করে ফেরালেন টিনাশে কামুনহুকামউইকে। টাইগার স্পনারকে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন তিনি। কামুনহুকামউই ৭০ বলে ফিরেন ৫১ রান করে।
২৪ ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১০৩ যোগ হতেই হারায় ৪ উইকেট। তবে ক্রিজে ওয়েসলিকে নিয়ে সিকান্দার রাজা ফের প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। টাইগারদের বোলিংও ছিল কিছুটা সাধারণ মানের। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮১ রানের জুটি গড়েন ওয়েসলিকে নিয়ে। কিন্তু নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা ওয়েসলি মাধেভেরেকে ৫১ রানে থামান তাইজুল। সেই সঙ্গে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিয়ে দলকে স্বস্তি এনে দেন। আউট হওয়ার আগে এই তরুণ ব্যাটসম্যান করেন ৫৭ বলে ৫২ রান।
এরপর লড়াই চালিয়ে যান রাজা। ৫ চার ও ২ ছয়ের মারে ৫৭ বলে করে ৬৬ রান। ক্যারিয়ারের ৯৯তম ওয়ানডে ম্যাচে ১৫তম ফিফটির দেখা পান এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তাকে থামান মাশরাফি। ওয়ানডে নায়ক হিসেবে তুলে নেন ১০১তম উইকেট। অবশ্য তার আগেই তাইজুল নিজের তৃতীয় উইকেট পেয়েছেন মুতাম্বিকে ১৯ রানে বিদায় করে। মূলত রাজার ব্যাটে ২শ’ পার করে সফরকারীরা। ২২৫ রানের সময় তার বিদায়ে জিম্বাবুয়ের হার অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ৮ উইকেটে মাটুমবোদজি ও টিরিপানো ৮০ রানের জুটি বদলে সব চিত্র। শেষ ওভার বল হাতে আসেন আল আমিন হোসেন। তার প্রথম বলে ১ রান আসে। দ্বিতীয় বল ওয়াইড হয়। তৃতীয় বলে মাটুমবোদজি ফিরে যান ৩৪ রান করে। চতুর্থ বলে ৬ হাঁকান টিরিপানো। পৌঁছে যান ১০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটিতে। ৫ম বলে রান আসেনি। শেষ বলে ৪ হাঁকালেও জয় পায়নি।
এই ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফুদ্দিনকে বিশ্রাম দেয়া হয়। একাদশে আসেন শফিউল ইসলাম ও আল আমিন হোসেন। তবে দু’জনের শিকার একটি করে উইকেট। এর মধ্যে সবচেয়ে খরচে আল আমিন ৮৫ রান দিয়েছেন ১০ ওভারে। দলের সফল বোলার স্পিনার তাইজুল তার শিকার ৫২ রান খরচ করে তিনটি।
পিবিএ/এএম