দোকানে কুকুর আসতে পারবে, তবে কাশ্মীরি লোকজন নয়

kasmir-hosue-search

পিবিএ ডেস্ক: কাশ্মীরজুড়ে আতঙ্ক বেড়েই চলছে। এতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অবস্থিত অঞ্চলটি ফের প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দিকে চলে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক টলোমলো অবস্থায়। ভারতের বিভিন্ন স্থানে কাশ্মীরি ছাত্রদের জড়ো করে হামলা করা হচ্ছে।

হামলার পর থেকেই ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে। ঘরে ঘরে ঢুকে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খোঁজ করছেন। এতে কাশ্মীরের বেসামরিক নাগরিকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। দেরাদুনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে- তোদের জীবিত ফিরতে দেব না।

একটি মোবাইল ফোনের দোকানের বাইরে লেখা রয়েছে- কুকুর আসতে পারবে, তবে কাশ্মীরি লোকজনের এখানে আসার সুযোগ নেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দেরাদুনে সংঘবদ্ধ লোকজন কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিকদের তুমুল ভর্ৎসনা করছেন ভারতীয়রা। বিশেষ করে বলিউড অভিনেতারা এতে যোগ দিয়েছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিতে সাম্প্রতিক সহিংসতা ভারতজুড়ে উগ্র দেশপ্রেম উসকে দিয়েছে। সর্বত্র তিন রঙা পতাকার ছড়াছড়ি। ভারতীয়রা বলছেন, তারা প্রতিশোধ নিতে চান।

কাশ্মীরের ভারতনিয়ন্ত্রিত অংশে বিদ্রোহীদের সমর্থনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে চিরবৈরী পাকিস্তানের।

সাম্প্রতিক সহিংসতায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে ভারতের হাতে খুবই কম সুযোগ রয়েছে। জনগণও এমনটি দেখছে।

ভারতীয় লেখক গুরুচরণ দাস বলেন, এখানে হতাশা ও ক্ষোভের সত্যিকার কারণ আছে। কারণ পাকিস্তান একটি ছায়াছবির মতো। বহু ভারতীয় মনে করেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া কঠিন না হলেও সে ক্ষেত্রে ভারত পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, কেউ যুদ্ধ চাচ্ছেন বলে আমি মনে করি না।

কাশ্মীর হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। কিন্তু যেখানে দুই দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ আছে, সেখানে পাল্টা আঘাতে ব্যাপক ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক গতিবিধিও খুব স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে।

আফগানিস্তানের দীর্ঘ ১৭ বছরের যুদ্ধ থেকে সরে আসতে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সহায়তা চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর সেখানে পাকিস্তানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ ছাড়া আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভারতে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। মোদি চাচ্ছেন না, এমন একটি সময়ে তার দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে যাক। কাশ্মীরে সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে ভারতের বিরুদ্ধে নিজের ছায়াশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে পাকিস্তান।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের কাছ থেকেই অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের দাবি, পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার বিস্ফোরক পাকিস্তান থেকেই এসেছে।

হামলার মুখে কোনো রকম একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে পালিয়ে আসেন প্রকৌশল বিদ্যার শিক্ষার্থী জুনায়েদ আইয়ুব রাদার। তিনি বলেন, আমি খুবই আতঙ্কিত।

জুনায়েদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে সংঘর্ষ ও দারিদ্র্যে হাজার হাজার বেসামরিক কাশ্মীরি নিহত হয়েছেন। কিন্তু আপনি কখনও শুনেছেন কী ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের কোনো বেসামরিক লোকের হামলা কিংবা ভয় দেখিয়েছেন কাশ্মীরিরা?

কূটনৈতিকভাবে প্রতিবেশী দুই দেশই পরস্পরের সমালোচনা করছে। শুক্রবার পাকিস্তানে নিজের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছে করেছে ভারত। পাকিস্তানও সোমবার একই কাজ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সমালোচনা কিংবা হামলাকারীদের অনুকূলে লেখাজোখা করায় ইতিমধ্যে ভারতে ডজনখানেক লোক আটক হয়েছেন। কেউ কেউ চাকরি খুইয়েছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে অনেককে।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...