বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘ধানমণ্ডি ৩২সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, যেটা আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে যায় না। আমরা যে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি সেটার সঙ্গে এটা কখনো যায় না।’
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ভাইরাল ভিডিওতে দেখেছি-আমার বাবার বয়সী একজনকে কানধরে উঠবস করানো ইচ্ছে। আমার বাবার বয়সী একজনকে বিবস্ত্র করা হয়েছে এবং মানুষজন যা ইচ্ছা তাই বলছে। অসংখ্য মানুষের ফোন চেক করা হচ্ছে। আমি দেখেছি আমার মায়ের বয়সী একজনকে গায়ে হাত তোলা হয়েছে। এই রকম অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা সাংবাদিক ভাই-বোনদের ওপরে হামলার বিভিন্ন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি।’
মানুষকে বিবস্ত্র করে গায়ে হাত তোলা মানবাধিকার লঙ্ঘন উল্লেখ করে সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলছি, আমরা খুঁজছি যে এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক যুক্ত আছেন কি না। আমাদের প্রথম সিদ্ধান্ত, তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুরো বাংলাদেশে এসব ঘটনার সঙ্গে একজন সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়কের যুক্ততা পাওয়া গেলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের টিম থেকে বহিষ্কার করব। মানুষকে বিবস্ত্র করা থেকে গায়ে হাত তোলার মতো ঘটনাগুলো যারা ঘটিয়েছে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে৷ এগুলো কোনোভাবেই আইনসংগত নয়। আমাদের দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে যা করা প্রয়োজন, একটি প্রেসার গ্রুপ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সেই কাজটি করবে৷ আমাদের যে দুজন ছাত্র-প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন, তাঁদের মাধ্যমে যেভাবে বিচার নিশ্চিত করা যায়, আমরা সেই কাজটি করব।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে স্পষ্ট বার্তা, ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কেউ ফুল দিয়ে তার শোক পালন করতে চায়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাকে বাধা দিতে পারি না৷ স্বাধীন বাংলাদেশে যখন যে ক্ষমতায় এসেছে; তখন শুধু তার সুপ্রিম মানুষটিকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, বাকিদের শ্রদ্ধা জানানো দূরের কথা, উল্টো ছোট করা হয়েছে৷ যার যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, ইতিহাসে যে জায়গাটুকু তারা ধারণ করেন, তা তাদের দেওয়া হয়নি৷ বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে কথা বললে যে মানুষগুলোর অবদান একদম অনস্বীকার্য, তাদের প্রত্যেককে তাদের অবদানের জন্য স্মরণ করতে হবে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছোট করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছোট করা যাবে না৷ শেখ মুজিবুর রহমানের যতটুকু সম্মান প্রাপ্য, তা তাকে দিতে হবে; একইভাবে জিয়াউর রহমানের যে সম্মান প্রাপ্য, তাকে তা দিতে হবে৷ এত বড় একটি গণ-অভ্যুত্থানের পরে দাঁড়িয়েও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য যখন নেতিবাচক কাজগুলো করা হয়, আমরা আমাদের জায়গা থেকে এগুলো কখনোই সমর্থন করি না৷ আমাদের মধ্যে যদি কেউ এ কাজগুলো করে থাকে, তাঁদের বয়কট করা হোক৷’
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ওপর হামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারজিস বলেন, ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ধানমন্ডি ৩২-এ গিয়েছিলেন৷ তার গাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে।
কেন? তিনি যদি ওই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করেন, তিনি সেখানে ফুল নিয়ে যেতে পারেন, আমরা বাধা দিতে পারি না।’
সারজিস স্পষ্ট করে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ধরনের কোনো কিছুকে প্রমোটই করে না যে কেউ একজন কোনো একটি হোস্টেলে গিয়ে সার্চ করবে, কোনো একটি আবাসিক হোটেলে যাবে, কোনো একজন অধ্যাপককে জোর করে নামিয়ে দেবে৷ আমরা এগুলো সমর্থন করি না৷ আমরা কোনো অথোরিটি নই। আমরা দুর্নীতিবাজ বা ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের অপসারণের জন্য দাবি তুলতে পারি, কিন্তু এটি করতে বাধ্য করতে পারি না।’
নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ‘গত ১৬ বছর যে নির্যাতন-নিপীড়ন কিংবা মানুষের অনুভূতি প্রকাশ করার যে অধিকার ছিল সেটি হরণ হয়েছিল। দুর্নীতি থেকে নিপীড়ন-অত্যাচার এগুলোর বিরুদ্ধেই কিন্তু এই গণবিপ্লব। এটার কারণ ছিল-আমরা এমন নতুন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেই বাংলাদেশে আসলে সবাই সবার কথাটা বলতে পারবেন। সবাই মত প্রকাশ করতে পারবেন। যে যে ধারায় বিশ্বাসী, সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। তার এই স্বাধীনতাটি থাকবে। গতকাল আমরা এমন বেশ কিছু চিত্র দেখেছি, যে জায়গাগুলোতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল৷ আমরা জানি না, ওই শিক্ষার্থীরা কোন মতাদর্শ ধারণ করে, তাদের ডিফাইনও করতে পারব না।’
আওয়ামী সরকারের নিপীড়নের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত ১৬ বছরে দেখেছি-আপনি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দল করলে আপনাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। কিংবা আপনাকে মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হয়নি। আপনাকে জেলে কিংবা আদালতে চক্কর কাটতে হয়েছে।’