ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা কৃষক

পিবিএ,নালিতাবাড়ী,শেরপুর: বোরো মওসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ধানের ভালো ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। উৎপাদন খরচের চেয়েও কৃষকরা দেড় থেকে ২০০ টাকা কমে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছে। এ ছাড়াও রয়েছে ধান কাটা শ্রমিকের বেশি মজুরি ও পর্যাপ্ত শ্রমিক অভাব। কৃষকের পাকা ধান সময়মতো তুলতে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। তবে ধান আবাদে কৃষকদের লাভবান করতে উৎপাদন ব্যয় কমানোর কৌশল প্রযোগসহ ধানের ন্যায্যমূল্য পেতে কৃষকদের ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ করে একটু দেরিতে বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগ।

উপজেলার বারমারী এলাকার কৃষক কিতাব আলী পিবিএ’কে বলেন, ‘এক একর অন্যের জমি লিজ নিয়ে বোরো আবাদ করেছি। প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে আমার খরচ অইছে ৭০০ টাকা। বাজারে ধান বিক্রি করতে অইছে ৫০০ টাকায়। মণ প্রতি লোকসান ২০০ টাকা। নালিতাবাড়ী পৌসভার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন ৯০এর দশকে একমন ধান বিক্রিহত ৩০০-৩৫০টকা আর সে সময় গরুর গোস্তের দাম ছিল ৬০-৭০টাকা। ধানের দাম না বাড়লেও বেড়েছে অন্যসব জিনিস পত্রের দাম। ডিম এক হালির দাম ১০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ৪০টাকা। আর এখন ৫০০ টাকামন ধান বিক্রি করে ৫৫০ টাকা দিয়ে ১ কেজি গরুর গোস্ত কিন্তে হয়।

কাপাশিয়া গ্রামের আবু সাঈদ বলেন, ‘ভাত, কাপড়, নতুন ঘর, পোলার লেখাপড়া, মাইয়ার বিয়ার খরচ সব ধান থেকেই জোগাড় করতে অয়। এইবার যে অবস্থা খরচের টাকাই উঠতাছে না। সামনে খালি অন্ধকার দেখতাছি।’ জারুয়াপাড় গ্রামের কৃষক আক্রাম হোসেন বলেন, ‘আগামীতে নিজের খাওয়ার প্রয়োজনে যেটুকু আবাদ করতে হয়, ওইটুকু ছাড়া এক ইঞ্চি জমিতেও ধান আবাদ করবো না।’ এক দিকে ধানের দাম কম অন্যদিকে ধান ব্যাবসায়ীরা এক মন ধানের দামে তারা ঢলতার নামে ধান নিচ্ছে ৪২-৪৩কেজি। এযেন মরার উপর খাড়ার গাঁ।
সরকার প্রতি কেজি চাল ৩৬ টাকা, গম ২৮ টাকা ও ধান ২৬ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এ হিসেবে প্রতিমণ ধানের দাম পড়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। কিন্তু কৃষকরা কখনও সরকারি সুবিধায় ধান বিক্রি করতে পারে না। কৃষি বিভাগ জানায়, কয়েক বছরের তুলনায় এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে আশাতীত। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার এ উপজেলার ২১ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে প্রায় ৯৬ লাখ টন চাল উৎপাদন হবে।

এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরীফ ইকবাল পিবিএ’কে বলেন, এ উপজেলায় এবার এক মণ ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৭শ’ টাকা। আর কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৭০ থেকে ৫৭০ টাকায়। তিনি আর্ োবলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকদের হাতে সরকার নির্ধারিত দামটি তুলে দিতে পারলে, কৃষকরা ধান চাষে আরও উৎসাহিত হতো।

পিবিএ/এএম/হক

আরও পড়ুন...