নওগাঁয় চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কমেছে

ইউনুস আলী ফাইম,নওগাঁ: নওগাঁয় মনের আনন্দে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কাটা মাড়াইয়ের শুরুতেই কৃষকরা তাদের কষ্টের ধান বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি। এদিকে ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়াতে এ প্রভাব পড়েছে নওগাঁর চালের বাজারে।

সকল ধরণের চাল প্রতি কেজিতে গত এক সপ্তাহ থেকে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে কেনা বেচা হচ্ছে।নওগাঁ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, স্বল্প মূল্য সার, তেল ও কৃষিতে সরকারের ভূর্তিকী দেওয়ায় নওগাঁয় ১ লাখ সাড়ে ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জমিতে রোগবালাই না দেখা দেওয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফল হয়েছে।ইত্যে মধ্যে ধান পেকে যাওয়ায় ১০/১২ দিন আগে থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁয় ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় চিকন জাতের ধান ২২ মণ থেকে ২৭ মণ এবং মোটা জাতের ধান ২৮ মণ থেকে ৩২ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় প্রতি বিঘায় ধান বেশি উৎপাদন ও বাজারে বেশি দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।বিভিন্ন হাট-বাজার ঘরে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় প্রায় ১শ’ টাকা বেশি দরে প্রতি মণ ধান কেনা বেচা হচ্ছে। মোটা জাতের ধান ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা এবং চিকন জাতের ৭শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ কেনা বেচা হচ্ছে।মহাদেবপুর উপজেলার ক্ষুদ্রনারায়ণপুর গ্রামের কৃষক লুৎফর হোসেন জানান, তাদের নিজের জমিতে প্রতি বিঘা ধান লাগানো থেকে মাড়াই শেষে প্রায় ৮ হাজার খরচ হয়েছে। তিনি বুধবার দেড় বিঘা জমির জিরাশাইল ধান মাড়াই শেষ করেছেন। এই পরিমাণ জমি থেকে ৩৮ মণ ধান পেয়েছেন। প্রতি বিঘায় ধান গড়ে ২৫ মণের উপর উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ভালো ধান উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকায় তাদের প্রায় ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ হবে।ভীমপুর গ্রামের বর্গাচাষি মোশারফ হোসেন জানান, তিনি ১২ বিঘা জমিতে জিরাশাইল, গোল্ডেন আতব, কাটারি ভোগ ধান ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৭ বিঘা জমি বর্গা করেছেন। বোরো আবাদের সময় জমির মালিককে প্রতি বিঘায় ৭ মণ দিতে হয়। বাকি প্রায় ১৮ মণ ঘরে তুলেছেন। বর্তমান দাম ( গড়ে ৭শ’ ৫০ টাকা) হিসেব করলে বর্গা চাষিদের মাত্র চার হাজার টাকা মতো লাভ থাকে। তবে এই টাকাকে লাভ বলা চলে না।

এদিকে নতুন ধান বাজারের আসতেই এর প্রভাব পড়েছে নওগাঁর চালের বাজারে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকে নওগাঁয় সকল ধরনের প্রতি কেজি চাল ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে কেনা বেচা হচ্ছে। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে খুচরা বাজারে চিনি আতব ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা, বাসমতি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, সম্পা কাটারী ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা, জিরাশাইল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা, খাটো জিরা ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকা, রঞ্জিত ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা, বিআর আটাশ ৪৪ টাকা থেকে ৪৫ টাকা এবং স্বর্ণা ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তর কুমার জানান, নুতন ধান বাজারে আসায় চালের দাম কমেছে। বাজারে বর্তমানে তেমন কেনা-বেচা নেই। জেলায় পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলে চালের বাজার আরো কিছুটা কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, কৃষকদের ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধান ও চাল বেশি করে কিনছে। বর্তমান ধানের বাজার যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামিতে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হবেন।

জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, সরকারী ভাবে চলতি বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা দরে ১০ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা দরে দেড় লাখ মেট্রিকটন আতপ চাল মিলারদের কাছ থেকে এবং ২৬ টাকা দরে ৮ লাখ মেট্রিকটন কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অপর দিকে নওগাঁর প্রায় ১১শ’ চাতাল মালিকরা ধান কেনা শুরু করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য পাচ্ছেন। সরকারি বেশি করে কৃষকদের কাছে থেকে ধান ও মিলারদের কাছে থেকে চাল কেনায় বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী জানান, জেলায় মিলারদের কাছে থেকে ৪৯ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন চাল ও ৬ হাজার ৫১ মেট্রিকটন আতপ চাল কেনা হবে। অপরদিকে কৃষকদের কাছে থেকে লটারি ও কৃষি অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি ২৩ হাজার ২৩২ মেট্রিকটন ধান কেনা করা হবে।নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে নওগাঁ ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্য মাত্র নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, সার, তৈল স্বল্প মূল্য ও সরকারের কৃষি ভূর্তিকী দেওয়ায় আরো আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান করা হয়েছে।তিনি আরো জানান, নওগাঁয় ১৬ ভাগ ধান কাটা মাড়াই শেষ হয়েছে। জেলায় চালে উৎপাদন নির্ধারণ ৭ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিকটন ধরা হলেও ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে। এর মধ্যে চিকন জাতের ধান ১ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চিকন জাতের ধান থেকে ৬ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন ধরা হয়েছে। আরো মোটা জাতের ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। মোটা জাতের ধান থেকে দেড় লাখ মেট্রিকটনেরও বেশি চাল উৎপাদন হবে।
পিবিএ/ইউনুস আলী ফাইম/এএম

আরও পড়ুন...