নওগাঁয় শ্রমিক সংকটে জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাকা ধান

পিবিএ,নওগাঁ: ধান কাটার শ্রমিকের চরম সংকট। নওগাঁয় মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকের ফলানো ইরি বোরো পাকাধান মাঠের পর মাঠ জমিতেই খড়ায় পুড়ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে জেলার কৃষকরা।

নওগাঁ জেলা সদরসহ জেলার ১১টি উপজেলার মাঠের পর মাঠ ধান কাটার শ্রমিকের চরম সংকটের কারণে জমিতেই তীব্র খড়ায় পুড়ছে কৃষক-কৃষানীর স্বপ্ন পাকা ইরি বোরো ধান। এমনকি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো ইরি বোরো পাকা ধান ঘরে তুলতে অনেক কৃষকরা প্রতি মন ধানের বিপরীতে (অর্থাৎ প্রতি ৪০ কেজিতে ২০ কেজি ) ধান, ধান কাটার শ্রমিকদের দিয়ে মাঠ থেকে ধান কেটে এনে ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। তারপরও মিলছেনা শ্রমিক।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মিনহাজুল (৫২), মোকলেছার রহমান (৪৭) ও পত্নীতলা উপজেলার জাহিদুল রহমান (৫১) সহ ১৩/১৪ জন কৃষক ধান কাটার শ্রমিক নেয়ার জন্য নওগাঁর মাথা চৌমাশিয়া নওহাটা মোড় বাজারে এসে সকাল থেকে যোহর নামাজ পর্যন্ত বসে থেকে ও কোন শ্রমিক মেলাতে পারেননি জানিয়ে ওই কৃষকরা বলেন, এবার আমাদের পাকা ধান শ্রমিক সংকটের কারণে জমিতেই পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তারা আরো বলেন, গত বছর ইরি বোরো মৌসুমে ও আমাদের এ বিপদে পড়তে হয়নি। গত বছর যেখানে মাত্র জমি থেকে ধান কেটে বাড়িতে তুলতে প্রতি মন ধানের বিপরিতে (প্রতি ৪০ কেজিতে ৫কেজি ) ধান কাটার শ্রমিকরা নিয়ে আমাদের ধান কেটেছেন। আর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই একই জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে প্রতি মন ধানের বিপরিতে (অর্থাৎ প্রতি ৪০ কেজিতে ২০ কেজি ) ধান কাটার শ্রমিকদেরই দিতে বাধ্য হচ্ছি।

একই সময় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, একদিকে ধান কাটার শ্রমিকের চরম সংকট অপরদিকে বাজারে ধানের মূল্য নেই জানিয়ে তারা বলেন, শ্রমিক সংকট সমাধান না হলে এবং প্রতিমন ধানের বিপরিতে (অর্থাৎ প্রতি ৪০ কেজিতে ২০ কেজি ) ধান কাটার শ্রমিকদের দিয়ে ধান কেটে নিলে সর্বনিম্ন প্রতিমন ধানের বিপরিতে শুধুমাত্র আমাদের খরচই পড়বে সাড়ে ৮ শত টাকা থেকে সাড়ে ৯ শত টাকা, জানিয়ে একই সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কৃষকরা বলেন, বর্তমান ধানের হাট-বাজারে লম্বা জিরাশাইল প্রতিমন কেনাবেচা হচ্ছে সাড়ে ৫শত টাকা থেকে সাড়ে ৬ শত টাকা, আর খাটো জিরাশাইল ধান প্রতিমন কেনাবেচা হচ্ছে সাড়ে ৬শত টাকা থকে ৭ শত টাকা পর্যন্ত।

কৃষকরা প্রতিমন ধানের যে মূল্য হিসাব দিয়েছেন ঠিক সেই দামের মধ্যেই ঐ হাটে ধান কেনাবেচা হচ্ছিল। এহাটে ধান বিক্রি করতে আসা আজিপুর অজুনি গ্রামের কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েকদিন আগে ফনী নামের ঝড় ও বাতাসের কারণে আমার মাঠের সব ধান জমিতে হালিয়ে পড়ে এবং কিছুধান পানিতে তলিয়ে থাকায় অনেক কষ্টে ১৩ জন শ্রমিক লাগিয়ে ধান কেটে তুলেছি জানিয়ে তিনিও আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কৃষকরাই সারা জীবন লোকসান দিয়ে বেঁচে থাকি। আর কিছু দিন বা বছর পর আমাদের মত মাঝারি আকারে কৃষকদের জমি বিক্রি করে খেতে হবে, না হয় অন্যের বাড়িতে দিনমজুরীর কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ধান রোপনের খরচ থেকে শুরু করে সার, কিটনাশক ও সর্বশেষ ধান কাটার সময় ফের শ্রমিককেই দিতে হচ্ছে প্রায় অর্ধেক ধান এতে করে আমরা প্রতিমনে যে খরচ করছি কিন্তু বাজারে গিয়ে সেই খরচের টাকাও উঠছে না।

অপরদিকে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া, বাগধানা, খোর্দ্দনারায়ণপুর ও নলবলোসহ বেশ কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে মাঠের পর মাঠে জমিতে ধান পেকে তীব্র খড়ায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব গ্রামের কৃষকদেরও একই অভিযোগ ধান কাটার শ্রমিকের চরম সংকট। এই ধান কাটার শ্রমিক সংকটের সমাধান যদি চলতি সপ্তাহেও না হয়। সেক্ষেত্রে অনেক মাঠে কষ্টে ফলানো কৃষকদের ইরি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে, এমন ধারণা পোষণ করে সচেতন মহল। একই সাথে সাধারণ কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে হাট-বাজারে ধানের মূল্য সর্বনিম্ন প্রতিমন কাটাপেটা অবস্থায় সাড়ে ৮ শত থেকে ৯ শত টাকা দরে বিক্রি যেন হয় বা কৃষকরা বিক্রি করতে পারে এজন্য বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁর সুযোগ্য জনপ্রিয় নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদারসহ খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জরুরী আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

পিবিএ/এসএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...