নতুন বছর শুরু হোক দোয়ার মাধ্যমে

আলহামদুলিল্লাহ! আমরা আরেকটি নতুন বছরে প্রবেশ করেছি। একজন মুমিন মুসলমানের কাছে নতুন বছরের গুরুত্ব অতি ব্যাপক। কেননা সে বিগত একটি বছরের পর্যালোচনা ও নতুন এক বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে রাত জেগে ইবাদতের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। বিগত বছরের দোষত্রুটির জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করে ক্ষমা চায় আর পাপমুক্ত জীবনের অঙ্গীকার করে।

আল্লাহপাক কোরআন কারিমে ইরশাদ করেন-
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَات وَالأَرْضَ

‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারোটি।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ৩৬)

সাধারণত দেখা যায় নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে আমরাও আনন্দ-উল্লাস করি। বিভিন্ন মন্দকর্মে জড়িয়ে পরি। আর এসব করার ক্ষেত্রে আমাদের হৃদয়ে এ উপলব্ধি সৃষ্টি হয় না যে, আমরা যা করছি তা কোনোভাবেই ইসলাম সমর্থন করে না। নিজেকে একজন মুসলমান ঠিকই দাবি করছি কিন্তু আমার কাজকর্ম ইসলাম সম্মত নয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

‘যদি তুমি খারাপ কাজ করো, আর তোমার খারাপ লাগে, ভালো কাজ করে ভালো লাগে তাহলে তুমি মুমিন। কিন্তু যদি খারাপ কাজ করে ভালো এবং ভালো কাজ করে খারাপ লাগে তাহলে তুমি মুমিন হতে পার না।’ (মুসলিম)

আজ আমাদের অবস্থা এমনই হয়েছে যে, যত প্রকার মন্দকাজ আছে সবই আমরা করছি ঠিকই কিন্তু নিজেদের আবার ভালো মানুষও মনে করছি।

ইসলামি জাহানের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে তার খুতবায় এক ঐতিহাসিক উক্তি উপস্থাপন করেছিলেন; যা ইমাম তিরমিজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজগ্রন্থ তিরমিজিতে এবং ইমাম ইবনে আবি শায়বা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি নিজ গ্রন্থ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বায় উল্লেখ করেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন-
‘হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ (তিরমিজি, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা)

অথচ আমরা এটি ভেবে দেখি না যে, জীবন থেকে একটি বছরের সমাপ্তি ঘটছে আর প্রবেশ করছি নতুন আরেকটি বছরে; যেখানে আমাদের করণীয় হল সৃষ্টিকর্তার দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, নিজেদের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, নতুন বছর যেন সবদিক থেকে মঙ্গলময় ও কল্যাণকর হয় সেই দোয়া করা। অথচ তা না করে আমরা সব ধরণের বৃথা কার্যকলাপ এবং অপকর্ম করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাচ্ছি। নববর্ষের মতো মূল্যবান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বে এমন কোনো কাজ করা সমীচীন হবে না যা আমাদের আমলনামা বা জীবনপঞ্জিকে কলঙ্কিত করে দেয়। তাইতো হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু কত চমৎকারই না বলেছিলেন-

‘তুমি রাতের আঁধারে এমন কোনো কাজ করো না, যার কারণে তোমাকে দিনের আলোয় মুখ লুকাতে হবে।’

বাস্তবে আজ পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির ধর্মের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, তাই তাদের দৃষ্টি সেখানে পৌঁছা সম্ভব নয়; যেখানে একজন মুমিনের দৃষ্টি পৌঁছে। একজন মুমিনের মহিমা হল সে এই সমস্ত বৃথা কার্যকলাপ এড়িয়ে চলে।

একথায় বর্ষবরণের নামে কোনো ধরনের অশ্লীলতাকে কোনো বোধসম্পন্ন ও সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারেন না। একজন প্রকৃত মুসলমানকে সামান্যতম পরোয়াও করা উচিত না যে, কে কি ভাববে। কেননা আল্লাহ পাকের কাছে আমার জবাব আমাকেই দিতে হবে। তাই অন্যের অনুকরণ করে এমন কিছু যেন না করি যার ফলে আল্লাহ নারাজ হবেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

‘যে অন্য জাতির সঙ্গে আচার-আচরণে, কৃষ্টি-কালচারে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত বিবেচিত হবে।’ (আবু দাউদ)

জাগতিক আনন্দ-উল্লাসে ডুবে না গিয়ে মহান আল্লাহর স্মরণে বছরের সূচনা করতে হবে আমাদের এবং সারা বছরই যেন কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত না হয় সেই সংকল্পও করতে হবে সবাইকে।

তাই আসুন, আল্লাহ তাআলাকে স্মরণের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করি। নিশিরাতের তাহাজ্জুদের সেজদায় কেঁদে কেঁদে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করি। আল্লাহ তাআলা নতুন বছরটি দেশ, জাতি এবং গোটা বিশ্বের সবার জন্য অফুরন্ত কল্যাণময় করে দিন।

হে দয়াময় প্রভু! আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে পরিশুদ্ধ করে নতুন বছরে প্রবেশের তাওফিক দিন। বিশ্ববাসীকে মহামারি করোনাসহ সব বিপদ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

আরও পড়ুন...