শতাব্দী আলম : দেশ পরিচালনায় বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি এবং সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহনের দক্ষতা বিশ্বেই বিরল। করোনাকালে ড. বেনজীরকে আইজিপি হিসেবে নিযুক্ত করা এর সবশেষ উদাহরণ।
আধুনিক শিক্ষায় প্রাজ্ঞ এবং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বেনজীর একের পর এক সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতাকে নতুনভাবে বিকশিত করার কাজ করছেন।
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশী নিহতের বিষয় আর্ন্তজাতিকভাবে আলোচিত একটি ঘটনা। এই ঘটনায় আইজিপির উপলব্ধি বিশেষ গুরুত্ববহন করে। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবন আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’’। তার নির্দেশে যেভাবে দ্রুততার সাথে অপরাধী দালাল ও রিক্রটিং এজেন্সির হোতারা গ্রেপ্তার হয়েছে। এই ঘটনা দেশ তথা আর্ন্তজাতিকভাবেও প্রশংসিত হচ্ছে। কারন বিষয়টির উপর আর্ন্তজাতিক নজর ছিলো। একইভাবে দেশের আলোচিত গাজীপুর সিটির নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার আসামী দ্রুততার সাথে গ্রেপ্তার জনমনে স্বস্তি এনেছে। পাশাপাশি দেলোয়ার হত্যাকন্ডের সাথে জড়িত নেপথ্য গডফাদারগণকে আইনের আওতায় আনার ব্যপারে তাঁর নির্দেশ রয়েছে বলে পুলিশসূত্রে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নবনিযুক্ত আইজিপি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি বিষয়কে ব্যক্তিগতভাবে নজরদারি করেন। এটা তার অন্যতম বৈশিষ্ট।
বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নতির পথ দেখাচ্ছে না। পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতায় উন্নত হয়েছে বাংলাদেশের সিআইডি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা।
ড. বেনজীর করোনাকালে আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তায় উন্নতি ঘটানো এবং করোনায় শহিদ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এমন সহমর্মিতায় পুলিশের মাঝে উচ্চ পর্যায়ের স্বস্তি এসেছে।
পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্যের যায়গায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পুলিশের ভুমিকা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পদক্ষেপ, পরিবহন চাঁদাবাজী রোধ, জনসাধারণের মাঝে করোনা সচেতনতা, গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য সরবরাহসহ অসহায় মানুষের সাহযোগীতায় বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বিশেষভাবে কাজ করছেন ।
অফিশিয়াল কর্মকান্ডেই থেমে নেই তার নিজস্ব কার্যক্রম। অব্যাহত রেখেছেন সামাজিক ও মানবিক কাজ। চলমান পরিস্থিতিতে সাংবাদিক, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তসহ দুস্থদের নীরবে নিভৃতে সাহায্য করে যাচ্ছেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানতে পারি, সম্প্রতি মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো দুই সাংবাদিক দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার সিটি এডিটর হুমায়ুন কবীর খোকন ও সিনিয়র সাব-এডিটর মাহমুদুল হাকিম অপুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ। তাদের পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান ও ঈদ উপহার দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী দৈনিক ভোরের কাগজের অপরাধবিষয়ক প্রতিবেদক আসলাম রহমানের পরিবারকেও দুই লাখ টাকা অনুদান দেন। নিহত সাংবাদিক পরিবারকে ঈদ উপহার হিসেবে চাল, ডাল, চিনি, সেমাইসহ মোট ১১ কেজি সমপরিমাণ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠিয়েছেন আইজিপি।
চলমান করোনাযুদ্ধে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করে জীবন উৎসর্গ করেছেন ১৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদেরকে পাঁচ লাখ টাকা, প্রত্যেকের বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী, শাড়ি-পাঞ্জাবি ও ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন আইজিপি।
পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রাইভেট হাসপাতাল ভাড়া করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে ও আইসোলেশনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের খোঁজখবর রাখার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিদর্শন কমিটি তৈরি করেছেন। তাদের জন্য পাঠাচ্ছেন নিয়মিত ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করার মতো বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছেন ড. বেনজীর আহমেদ।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা প্রতিদিন এসব বিষয় গণমাধ্যমকে অবহিত করছেন। তার প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, পুলিশকে শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক ও মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান আইজিপি মহোদয়। তিনি নিজে এসব কাজ করে যাচ্ছেন।’
‘পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারাও তার কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধরনের সামাজিক ও মানবিক কাজে এগিয়ে আসছেন। আর তাই বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সবার কাছে ‘মানবিক পুলিশ’ হিসেবেই নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’
গত ১৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের (আইজিপি) দায়িত্ব পান তৎকালীন র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। সপ্তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮৮ সালে পুলিশ ক্যাডার হিসেবে যোগদানের মধ্যদিয়ে কর্মজীবন শুরু।
বাংলাদেশ পুলিশে বেনজীর আহমেদ একজন দক্ষ, পেশাদার, আধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক পুলিশ অফিসার হিসেবে পরিচিত। চাকরি জীবনে র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, পুলিশ সদর দফতরে ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ও ডিআইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড বাজেট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পাশাপাশি বেনজীর আহমেদ পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডিএমপি কমিশনার হিসেবে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন অত্যন্ত সাহসিকতা, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেন। এছাড়া ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অগ্নি ও বোমা সন্ত্রাস পেশাদারিত্বের সঙ্গে দমন করেন এই পুলিশপ্রধান। বিশেষ করে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস, বোমা সন্ত্রাস ও পুলিশকে টার্গেট করে আক্রমণ অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে দমন করেন। নগরবাসীর জন্য ফরমালিনমুক্ত খাদ্যদ্রব্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভেজালবিরোধী আন্দোলন শুরু করে সফলতা পান সাবেক এই র্যাব প্রধান।
পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) হিসেবে প্রথম পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন ড. বেনজীর আহমেদ। তার হাতে ধরেই যাত্রা শুরু পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বর্তমান পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট (পিআইও) ইউনিট। পিআইও ইউনিট সৃষ্টির পর পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগ কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের আওতায় এসেছে। ফলে পুলিশের সামগ্রিক কাজে অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক কার্যক্রমে গতি আসে, যা পুলিশের ইমেজ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
২০১০-২০১৫ মেয়াদে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বেনজীর আহমেদ। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি ডিএমপিতে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার শুরু করেন। তিনি ডিএমপির প্রায় সব ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার সূচনা ও তা শেষ করেন। তার মধ্যে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন সিস্টেম, পে-রোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সিস্টেম, রেশন স্টোর সফটওয়্যার সিস্টেম, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, সাসপেক্ট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম উল্লেখযোগ্য।
আইজিপি হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদের শুরু আশাব্যঞ্জক। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জনমুখি কর্মকান্ড বাস্তবায়নে একজন আলোর দিশারী হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জনমানুষের হৃদয়ে পুলিশের উপর আস্থার ও আশার সঞ্চার করেছেন। ভবিষ্যতেও এই আশার আলো মানুষের মাঝে সুবিস্তৃত হতে থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশ হোক বাংলাদেশ তথা বিশ্বের নিপিড়িত মানুষের ভরসার স্থল। জয়তু শেখ হাসিনা। জয় বাংলাদেশ পুলিশ।
লেখক : ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, বার্তা সংস্থা পিবিএ।
পিবিএ/এমএ