নরসিংদীতে অটিস্টিকদের আপন ঠিকানা সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল

পিবিএ,নরসিংদী: অটিস্টিকদের আপন ঠিকানা নরসিংদীর একমাত্র সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুল। কেননা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রয়োজন রয়েছে বিশেষ শিক্ষার পাশাপাশি বিশেষ প্রশিক্ষণ। আর এই বিশেষ উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারলে তারাও হয়ে উঠতে পারে সমাজের অন্য আট দশ জন সাধারণ শিশুদের মতোই শিক্ষিত ও কর্মক্ষম। তাই নরসিংদীতে বিশেষায়িত শিশুদের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে উঠেছে প্রতিবন্ধিতার বাধা জয়ের বিশেষ একটি স্কুল সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুল।

প্রতিবন্ধী পরিবার ও শিশুদের আস্থা আর নির্ভরতার জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই স্কুলটি। এই স্কুলের বুদ্ধি ও অটিস্টিক শিশুদের আশ্রয়স্থল এবং আপন ঠিকানা মনে করেন অটিস্টিকে আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকগণ।

স্কুলটি পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, নরসিংদীতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক স্কুল নামে একটি প্রতিষ্টান যাত্রা শুরু করে। স্কুলের কার্যক্রমের অন্যতম বিষয়গুলোর মধ্যে হাতের কাজ শিখানো, বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষাদান, খেলাধুলা, চিত্রাঙ্কন, অকুপেশনাল ও স্পিচ থেরাপি, কাউন্সিলিং ও বিহেভিয়ার থেরাপি ইত্যাদি। ২০১০ সাল থেকে অবৈতনিকভাবে ৮ জন, ৬ জন কর্মচারী শিশুদের পরিচর্যার মাধ্যমে মানবসেবামূলক পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

নরসিংদী সুইড বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্র্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন সরকার জানান, স্কুলটির নিজস্ব জায়গা না থাকায় ২০১০ সাল থেকেই প্রথমে নরসিংদী শহরের রেলস্টেশনের বটতলায় এবং ২০১১ সাল থেকে শহরের ব্যাংক কলোনীতে একটি ভাড়া বাসায় পরিচালিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে স্কুলটি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০১৮ সাল থেকে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফরহানা কাউনাইন স্কুলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে। এই স্কুলটির মূল লক্ষ্য হলো, যে সকল পরিবারে অটিজম আক্রান্ত বিশেষ শিশু রয়েছে তাদের শিক্ষাসহ অধিকার বাস্তায়ন করা।

এ স্কুলে গিয়ে কথা হয় অটিজমে আক্রান্ত শিক্ষার্থী মুনিয়া আক্তারের মা নুপুর বেগমের সাথে। তিনি জানান, মুনিয়ার বাড়ি নরসিংদীর শেখেরচর, বাবা মা উভয়-ই চাকরীজীবী। মুনিয়াকে স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে গেলে শিক্ষকরা মুনিয়ার আচরণ দেখে অটিজমে আক্রান্ত হওয়ায় ভর্তি না করে ফিরিয়ে দেন। এই অবস্থায় নরসিংদীর শহরের এই স্কুলের খোঁজ নিয়ে তাতে ভর্তির সুযোগ পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। বর্তমানে মুনিয়া এখান দেথে নাচ এবং চিত্রাঙ্কন বিষয়ে খুবই ভালো করছে।

তারমতোই অটিজমে আক্রান্ত আরেক শিশু মির্জা ইকবাল মাহমুদ। সে কথা বলতে না পারায় কথা হয় তার মা জিনাতুন্নেছার সাথে। তিনি জানান, ইকবাল দুই বছর যাবৎ এ স্কুলে আসা যাওয়া করে। ফলে এখন সে রং, বর্ণ, নাম, নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশের নাম, ডাকলে ফিরে তাকানো, বিভিন্ন ফল ও ফুলের নাম বলতে পারে ও ছবি অঙ্কন করতে পারে। এছাড়া এখন ইকবাল সালাম প্রদান করে এবং শরীর চর্চায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে। ছেলের এই উন্নতিতে আমি খুবই খুশি।

ডাউন সিনড্রাম আক্রান্ত শিশু প্রত্যয়। তার মা খালেদা আক্তার লিপি জানান, প্রত্যয়দের বাড়ি নরসিংদী শহরের চৌয়ালা এলাকায়। সে দুই বছরে ধরে এই স্কুলে আসে। বাবা আইনজীবী, মা গৃহিনী। দুই বোন এক ভাই। প্রত্যয়কে সাধারণ স্কুলে ভর্তি করানো হলে সে প্রতিবন্ধী বলে শিক্ষক ও সহপাঠিরা অবহেলা করে। এই এবস্থায় তাকে এই স্কুলে ভর্তি করি। এখন আমার ছেলে প্রত্যয় গান করা, ছবি আঁকা, শরীর চর্চা করা ছড়া গান করা, হাতের কাজসহ অনেক কাজই একা একা করতে পারে। আমি তার এ অগ্রগতিতে সন্তোষ্ট।

এ স্কুলটি প্র্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর সুনাম এরইমধ্যে নরসিংদী জেলাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় মন্ত্রী, এমপি, সচিব, ডিসিসহ একাধিক সরকারী বেসরকারী উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাগণ স্কুলটি পরিদর্শন করেন।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জানান, এই স্কুলটি খুবই নির্ভরযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। এরফলে অটিস্টিকে আক্রান্ত শিশুরা সহজেই বিভিন্ন খেলাধুলা আর লেখাপড়ার পাশাপাশি থেরাপী দেওয়া একটি উত্তম কাজ। এছাড়া শিশুদের উপযোগী করে প্রশিক্ষণ দেওয়াটাও একটি ভালো লক্ষন তাই সমাজের ধনাট্য ব্যক্তিরা এই কাজে সহায়তা প্রয়োজন। আমি স্বউদ্যোগী হয়ে স্কুলের জায়গার ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি স্কুলের একটি ভবন তৈরীর কাজও শুরু করে দিতে পারবো।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...