পিবিএ ডেস্ক: হত দরিদ্র পরিবার থেকে আজকের অবস্থায় এসেছেন ভূবনখ্যাত চিত্রঅভিনেতা নানা পাটেকার । সে কথা ভোলেন নি। কথার কথা নয়। বিলাসী জীবনের প্রোপাগান্ডাও নয়। আক্ষরিক অর্থেই তিনি বিলিয়েছেন জীবনের প্রায় সকল অর্থ উপার্জন। মুম্বাইয়ের সাগর পাড়ের আলীশান কোন ভিলায় তিনি থাকেন না। থাকেন নিতান্তই যতটুকু দরকার ততটুকু জায়গার ছোট্ট এক ফ্লাটে ।
মাকে নিয়ে থাকতেন ৭৫০ বর্গ ফুটের এপার্টমেন্টে ।গত জানুয়ারিতে ৯৯ বছর বয়েসে মা নির্মলা পাটেকর প্রয়াত হন। এ যাবৎ উপার্জনের ৯০ শতাংশ দিয়েছেন বিলিয়ে। এ কোন সিনেমার গল্প নয়। এ গল্প এক আয়নায় নিজেকে নিত্য দেখা লড়াকু মানুষের। যি নি আপনার আমার মতই রক্ত মাংসের তৈরী।
অত্যন্ত মধ্যবিত্ত জীবনযাপন, বিলাসিতার একেবারেই ধার ধারেন না। এমনকি, জনপ্রিয় এই অভিনেতা যা উপার্জন করেন তার সিংহ ভাগটাই বিলিয়ে দেন গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে। মাকে নিয়ে অত্যন্ত সাধারণ জীবন কাটান তিনি।
তিনি নানা পটেকর। বলিউডে অভিনয়ের জন্য তিনি ঠিক যতটা জনপ্রিয়, তার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি লোকপ্রিয় তাঁর এই উদার মনোভাবের জন্য। তারকারা উপার্জন তো অনেক বেশি করেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েক জনই এই ঔদার্য দেখাতে পারেন। নানা তাঁদেরই অন্যতম।
১৯৫১ সালে আরব সাগরের তীরে মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে জন্ম নানা পটেকরের। বাবা গজানন পটেকর এক জন কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। মা নির্মলা পটেকর সংসার সামলাতেন। নানা পটেকরের আসল নাম বিশ্বনাথ পটেকর।
ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। কিন্তু সংসারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় কখনও তিনি নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবা-মাকে জোর দেননি। বরং মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি রোজগার করতে শুরু করেন।
ওই বয়সেই তিনি ফিল্মের পোস্টার আঁকার কাজ শুরু করেন। পোস্টার পিছু ৩৫ টাকা পেতেন। একটা সময় রাস্তার জেব্রা ক্রসিং রং করেও উপার্জন করেছেন তিনি।
শোনা যায়, ছোটবেলায় নানা পটেকর ভীষণ দুষ্টু ছিলেন। ছেলেকে সামলাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে এক বার তাঁর মা তাঁকে মাসির বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পরেই ব্যাগ গুছিয়ে নানাকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন মাসি। মাসির অভিযোগ ছিল, তুতো ভাইবোনদের খারাপ বুদ্ধি দিতেন নানা।
কলেজে পড়ার সময় নাটকের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। তার পর বেশ কিছু বিজ্ঞাপন এজেন্সির সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। কলেজের সহপাঠী নীলকান্তি পটেকরকে বিয়ে করেন নানা। তখন নানার বয়স ২৭।
নানার কেরিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবন— দুটোই অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে। বিয়ের এক বছর পর তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। নানা নিজের প্রথম সন্তানকেও ওই সময় হারিয়েছেন।
দ্বিতীয় সন্তানের নাম মলহর পটকর। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে স্ত্রীর থেকে আলাদা থাকেন নানা। মুম্বইয়ে একটা ৭৫০ বর্গ ফুটের এক ফ্ল্যাটে তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতেন । এখনও সেই ফ্লাটেই আছেন । অত্যন্ত সাদামাটা জীবন কাটান। তাঁর এই ছোট ফ্ল্যাটে প্রয়োজনীয় আসবাব ছাড়া আর প্রায় কিছুই নেই।
১৯৭৮ সালে ‘গমন’ ছবিতে ডেবিউ করেন তিনি। তাঁর অভিনয় এত প্রশংসিত হয়েছিল যে, এর পর প্রচুর ফিল্মের অফার আসতে শুরু করে। ‘প্রহার’ ছবির জন্য তিনি তিন বছরের জন্য সেনা ট্রেনিং নিয়েছিলেন। এর পর তাঁকে ভারতীয় সেনার ক্যাপ্টেন মর্যাদা দেওয়া হয়েছল। কথিত আছে, কার্গিল যুদ্ধেও নাকি তাঁকে কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
১৯৭৮ সাল থেকে তিনি যা উপার্জন করেছেন তার ৯০ শতাংশই গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন। অনেক সময় এমনও হয়েছে, ফিল্মে কাজ করার পুরো পারিশ্রমিকটাই কোনও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে দিয়েছেন।
২০১৫ সালে নানা নিজের সংস্থা ‘নাম ফাউন্ডেশন’ গড়ে তোলেন। মহারাষ্ট্রের খরা কবলিত এলাকায় কাজ করে তাঁর অসরকারি সংস্থা। ২০১৫ সালে বিদর্ভ, লাতুর অঞ্চলের ১৭৫টি চাষি পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা করে চেক দিয়েছিলেন তিনি।
বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য মহারাষ্ট্রে ৫০০টি ঘর তৈরি করার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে।
নানা পটেকর কেন গরিবদের জন্য এত কাজ করছেন? না, রাজনীতিতে আসার কোনও ইচ্ছাই তাঁর নেই। শিবসেনার অফার তিনি আগেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। নানা জানিয়েছেন, এগুলো তাঁর মনকে শান্ত রাখে। মানুষের উপকারের মধ্যেই আত্মতৃপ্তি ঘটে তাঁর।
পিবিএ/বিএইচ