পিবিএ ডেস্ক: ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ন স্তম্ভ হলো নামাজ পড়া ও কায়েম করা। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করলেও এই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভটি সম্বন্ধে আমরা অনেক মুসলিমই আজ উদাসীন। এই উদাসীনতার অন্যতম কারণ হলো নামাজের গুরুত্ব অনুধাবনের ব্যর্থতা। যেমন, বেশীরভাগ মুসলিমেরই জানা নাই যে ইমাম আহমাদ(রহিমাহুল্লাহ)সহ অন্যান্য আলেমদের মতামত হলো আপনি নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে মুসলমান থাকবেন না। নামাজ সম্বন্ধে ইসলামের এই কঠোর অবস্থান জানা থাকলে অনেক বেনামাজীই হয়ত সেদিন থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করে দিবে।
নামাজ সম্বন্ধে মুসলমানদের উদাসীনতার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো নামাজ নিয়ে প্রচলিত অসংখ্য ভুল ধারণা, যেগুলো নামাজের সহজ নিয়মগুলোকে কঠিন করে ফেলে। যেমন, আমি এরকম মানুষ দেখেছি যে কিনা ‘ইশার নামাজ পড়ছে না শুধু এই কারণে যে সে দু’আ কুনুত জানে না। অথচ, দু’আ কুনুত বিতর নামাজের অপরিহার্য অংশ নয়, এমনকি বিতর নামাজ ‘ইশার নামাজের অংশ নয়!
বাস্তব হলো, নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া খুব কঠিন কোনো কাজ না। কিন্তু, আমরা অনেকেই ছোটবেলায় হুজুরের কাছ থেকে যখন নামাজ পড়া শিখেছিলাম, তখন হয়তো অনেক কিছু ভুল শিখেছিলাম, আর এখনো সেই ভুল নিয়মগুলোকেই শুদ্ধ ধরে নিয়ে নামাজ পড়ে যাচ্ছি। অথচ, ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা আল্লাহ্ আমাদের জন্য ফরজ করেছেন, কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত ইসলাম সম্বন্ধে, বিশেষ করে নামাজ সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং নামাজ কায়েম করা।
এটা খুবই খারাপ একটা ব্যাপার যে, বাংলাদেশের বইয়ের বাজারে বহুলভাবে প্রচারিত এবং বিক্রিত নামাজ ও অন্যান্য ফিক্হ সংক্রান্ত বইগুলি জাল হাদিস আর মনগড়া নিয়ম-কানুনে ভরপুর। আমরা নিজেরা সেই ভুল বইগুলি পড়ে নামাজ শিখি, আর আমাদের অনেক হুজুরেরাই সেই ভুল বইগুলি থেকেই আমাদের হয়ত ছোটবেলায় নামাজ পড়া শিখিয়েছিলেন। (উল্লেখ্য, এই সব বইয়ের লেখকদের এবং আমাদের সম্মানিত হুজুরদের যত না দোষ, তার চেয়ে বেশী দোষ আমাদের মত উচ্চশিক্ষিত(?) মুসলিমদের, যারা ধর্মকে হুজুরদের ডিপার্টমেন্ট বলে নিজেরা এই বিষয়ে পড়াশুনায় ইস্তফা দিয়েছি)। এই লেখাটির উদ্দেশ্য হলো মুসলিম ভাই-বোনদের মধ্যে নামাজ সংক্রান্ত বহুল প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা সংশোধন করে দেয়া, এবং এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানানো যা কিনা অগণিত সাধারণ মুসলিমের অজানা।
নামাজ পড়ার ব্যাপারে কয়েকটি কোরান-হাদিসের বানী:
১) “আবু হুরাইরা (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যখন আদম সন্তান সিজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সিজদা করে তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে একপাশে সরে দাঁড়ায় এবং বলতে থাকে, হায় আমার পোড়া কপাল, আদম সন্তানকে সিজদা করার নির্দেশ দেওয়া হলো সে সিজদা করলো। ফলে তার জন্য জান্নাত, আর আমাকেও সিজদার নির্দেশ করা হয়েছিল কিন্তু আমি অস্বীকার করেছিলাম, তাই আমার জন্য জাহান্নাম।” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)
২) “আবু যুবাইর (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মাঝখানে নামায বর্জন করাই হচ্ছে ব্যবধান।”*** (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)
৩) আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিঃসন্দেহে নামাজ মানুষকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে”। (সূরা আল আনকাবূত – ৪৫)
৪) তিনি (স) বলেছেন: “আমাদের দলভুক্ত হতে নামায তাদের আলাদা করে দেয় যারা নামায ছেড়ে দেয়, যারাই নামায ছেড়ে দিবে তারাই কাফির”। আত-তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত,২৬১; আলবানী কর্তৃক সহিহ হাদীস রূপে বর্ণিত।
৫) “আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাদি আল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন কাজটি আল্লাহর নিকট বেশী প্রিয়? তিনি বললেনঃ সময়মতো নামাজ আদায় করা।” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান অধ্যায়)
নামায না পড়ার ১৫ টি কঠিন শাস্তি:
যারা নামায পড়েনা তাদের জন্য আল্লাহ্ পাক পনেরটি আজাব নির্দিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন। পনেরটি আজাবের মধ্যে ছয়টি দুনিয়ায়, তিনটি মৃত্যুর সময়, তিনটি কবরের মধ্যে এবং বাকি তিনটি হাশরের মধ্যে দেয়া হইবে।
দুনিয়াতে যে ছয়টি আযাব দেওয়া হয়। তা নিম্নরূপ:
১. তাহার জীবনে কোনরূপ বরকত পাইবেনা ।
২. আল্লাহ্ তার চেহারা হইতে নেক লোকের চিহ্ন উঠাইয়া লইবেন।
৩. সে যাহা কিছু নেক কাজ করবে, তাহার ছওয়াব পাইবেনা।
৪. তাহার দোয়া আল্লাহ্ পাকের নিকট কবুল হইবে না।
৫. আল্লাহ্ পাকের সমস্ত ফেরেশতা তাহার উপর অসন্তুষ্ট থাকবে।
৬. ইসলামের মূল্যবান নেয়ামত সমূহ হইতে বঞ্চিত করা হইবে ।
মৃত্যুর সময় যে তিনটি আযাব দেওয়া হয়। তা নিম্নরূপ।
১. অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত হইয়া মৃত্যুবরণ করিবে।
২. ক্ষুধার্ত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করিবে।
৩. মৃত্যুকালে তাহার এত পিপাসা পাইবে যে,তাহার ইচ্ছা হইবে দুনিয়ার সমস্ত পানি পান করিয়া ফেলিতে ।
কবরের মধ্যে যে তিনটি আযাব দেওয়া হয়। তা নিম্নরূপ:
১. তাহার কবর এমন সংকীর্ণ হবে যে তাহার এক পাশের হাড় অপর পাশের হাড়ের সংগে মিলিত হইয়া চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া যাইবে।
২. তাহার কবরে, দিনরাত্রি সবসময় আগুন জ্বালাইয়া রাখা হবে।
৩. আল্লাহ্ তাহার কবরে একজন আজাবের ফেরেশ্তা নিযুক্ত করিবেন। তাহার হাতে লোহার মুগুর থাকবে। সে মৃত ব্যক্তিকে বলতে থাকবে যে,দুনিয়ায় কেন নামায পড় নাই। আজ তাহার ফল ভোগ কর। এই বলিয়া ফজর নামায না পড়ার জন্য ফজর হইতে জোহর পর্যন্ত, জোহর নামাযের জন্য জোহর থেকে আছর পর্যন্ত, আছরের নামাযের জন্য আছর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, মাগরিবের নামাযের জন্য মাগরিব হইতে এশা পর্যন্ত এবংএশার নামাযের জন্য এশা হইতে ফজর পর্যন্ত লোহার মুগুর দ্বারা আঘাত করতে থাকবে।
আর বাকি তিনটি দেওয়া হবে রোজ হাশরের দিন কিয়ামতের ময়দানে:
আমাদের মধ্যে যারা মুসলিম আছে আসুন ভাই আমরা সকল ভাই ও বোনেরা নিয়মিত এবং সময়মত নামাজ পড়ি, অপর ভাইদের ও বলি নামাজ পরার জন্য । তাহলেই একমাত্র আমাদের সমাজ এ প্রকৃত শান্তি ও মুক্তি আসবে।
জেনে নিন সালাতের শারীরিক/ স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:
আমরা অনেকেই হয়ত জানি সালাত অর্থাৎ নামাজের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল শারীরিক উপকারিতা। আর মুসলিম হিসেবে আপনি এটাও হয়তো জেনে থাকবেন যে, নামাজের শ্রেষ্ঠতম অংশ হল সিজদা।
১) নামাজের সিজদা অনেকগুলো শারিরিক সমস্যা থেকে আমাদেরকে মুক্তি দেয়-
ক) সিজদাতে ব্রেইনে এবং মুখমন্ডলে স্বাভাবিকের চাইতে বেশি রক্ত সঞ্চালিত হয়। সেজন্য চিলব্লালাইন(chilblain) নামক এক ধরনের চর্মরোগ এবং এজাতীয় আরও অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
খ) ব্রঙ্কাইটিস(bronchitis) হবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
গ) সিজদা করলে এবডমিনাল ভিসেরা(abdominal viscera) ডায়াফ্রামের(diaphragm) উপর চাপ প্রয়োগ করে,। যা ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
২) নামাজের রুকুতে যাওয়া কিংবা সিজদা যাওয়ার মাধ্যমে যে অঙ্গভঙ্গি করি, তা আমাদের মেরুদন্ডের বিভিন্ন রকম রোগ থেকে বাচিয়ে রাখে।
৩) নামাজে অঙ্গভঙ্গি ও শরীরের বিভিন্নরকমের নাড়াচাড়ার কারণে তার অর্শ(hemorrhoid) বা পাইল্স(piles) এবং হার্নিয়া (hernia) হবার সম্ভাবনাও কমে যায় অনেকাংশে।
৪) সারাদিনের কাজের ব্যস্ততার মাঝে ৫বার নামাজ শরীর ও মনকে সতেজ ও চাঙ্গা করে তুলে, যা কর্ম উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে দেয়।
৫) শরীরের ভিতরে আলসেমিটাও দূর করে এ নামাজ
৬) নামাজের জন্য ৫বার অজু, শরীরের ময়লা দূর করে, যা বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
পিবিএ/এমএসএম