রাস্তায় চলার সময় প্রতিদিনের মতো আজও নজরে পড়লো কিছু নামঃ হালাবট,গড়বড়ি, বুড়াবুড়ি, কেতার মোড় ইত্যাদি। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকম হাজারো স্থানের উদ্ভট নাম,যেমন বাউরা,গলাচিপা,আগৈলঝোড়া,গৈলা ইত্যাদি। যেগুলো উচ্চারণ যাই হোক- কোন অর্থ নেই। ইদানিং মানুষের নামও রাখা হচ্ছে যাচ্ছেতাই।সেদিন শুনলাম একজনকে ডাকছে” তিনতি” এর অর্থ কি আমার মাথায় আসে না।এভাবে সিনা,তিনা,ইলু,বিলু,হেনর ইত্যাদি কত বাহারী মুসলমানের নাম। রংপুরে একজনকে পেয়েছিলাম “ইবনে মিজান”। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ” আপনার বাবার নাম কি মিজান? উত্তরে বলেছিল “আমার নামইতো মিজান”। আমি শুনে থ।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর অন্যতম একটি সুন্নাহ হলো উত্তম নামে ডাকা।বিশেষ করে নবুওয়াতের পর থেকে কোন জায়গা বা ব্যাক্তির বিশ্রী কিংবা বাজে অর্থবোধক নাম পেতেন,তৎক্ষনাত তা উত্তম (শ্রতিমধুর ও ভাল অর্থসম্পন্ন) নাম দিয়ে পরিবর্তন করে দিতেন।
সুরা হুজরাতে ইমানদারদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে ” তোমরা একে অন্যকে বিকৃত নামে সম্বোধন করো না।”
তাহলে যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে নামের এই বেহাল দশা কেন?
সমাজে কি মুসলমান বাস করে না?
মুসলমানেরা কি এখানে সংখ্যালঘু?তারা কি চাকুরী বা কর্মক্ষেত্রে নামের কারণে কোন বৈষম্যের শিকার?
সব প্রশ্নের উত্তর আসবে “না’।
সবাই একমত যে কয়েক শত বছর একটানা মুসলিম শাসনের পর মাত্র ১৯০ বছরের বিজাতীয় শাসনে ভারতবর্ষে সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়।বিশ্বের কোথাও হতে হিন্দু আমদানী ছাড়াই মুসলিম ভারত রাষ্ট্র রাতারাতি হিন্দু প্রধান ভারত হয়ে গেল।তো মুসলমান গুলো গেল কোথায়?
তাদেরকে তো জাহাজে তুলে বরফের দেশে ফেলে আসা কিংবা মাঝ সমুদ্রে ছিদ্রকরে ডুবিয়ে মারা হয় নাই।
কিংবা স্পেনের মতো এক জায়গায় জমায়েত করে চারিদিক ঘিরে গুলি করে অথবা পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়ে মারাও হয় নাই। তাহলে তারা হারিয়ে গেল কোথায়???
মধ্যযুগ তথা মুসলমানদের উন্নত শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানগবেষনা ভিত্তিক ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের শাসনকাল কে যেমন ইতিহাসে “অন্ধকার যুগ’ আখ্যায়িত করে অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।ঠিক তেমনি ভারতবর্ষে ওই দুঃসময়ে মুসলমানদের উপর কত কঠিন ভয়ংকর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে হিন্দুতে পরিণত হতে বাধ্য করা হয়েছে- তার কোন রিপোর্ট ইতিহাসে পাওয়া দুষ্কর।
যতদুর সম্ভব ওই সময়েই কোন দুরদর্শি গ্রুপের চিন্তায় ও পরিচালনায় আমাদের সমাজে মুসলিম নামধারী হিন্দুদেরকে অভিবাসন করা হয়। যারা পরবর্তীতে বাংগালী সংষ্কৃতির ছ্দ্মাবরণে বিভিন্নরকম কুসংস্কার ও রীতিনীতি মুসলমানদের মাঝে পাকাপোক্ত ভাবে কায়েম করে দেয়।কথাবার্তা, আচরণ, পরিভাষা, লেনদেন ও সামাজিক প্রত্যেকটি কার্যক্রমেই সফলভাবে এই আগ্রাসন চালানো হয়েছে।এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র খ্রীষ্টানের ভাষা ইংরেজি না শেখার অজুহাতে মুসলমানদের কুরআনের উচ্চতর দারস,তাফসীর ও বিজ্ঞান চর্চা থেকে দূরে থাকা।তাদের চোখে তখন প্রিয় করে তোলা হয়েছিল অর্থ না বুঝে তিলাওয়াত,দোয়া-তাবীজ ও মুস্কিল আসানের জন্য বিভিন্ন রকমের খতমাদি।
মুসলমান নামধারী অভিবাসিত সেই সমস্ত হিন্দু অদ্যাবধি সমাজে বসবাস করছে।তাদের বংশধর দিয়ে গোটা বাংলার সমাজে মুসলমানে ভর্তি।কিন্তু তাদের রুচি,বিভিন্নপ্রকার কুসংস্কার, নোংরামী এখনও সমাজে বেগবান।তাই নাম পরিবর্তনের কথা তুললেই প্রশ্ন আসে “কেন?
এইগুলোইতো আমাদের কানে খুব সুন্দর লাগে।
আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য!!!
কুড়িগ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনেছিলাম।স্বাধীনতার পর জাতির জনক যখন দেশগড়ার কাজে ব্যস্ত,সে সময় একদিন তিনি ভোলায় অবস্থিত ওই সময়ের দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদের ইমামকে ডাকেন এবং হিন্দুদের অসুবিধার কারণে আজান মাইকে না দেওয়ার জন্য আইন করার প্রস্তাব করেন।সেই ইমাম(আল্লাহপাক তাকে উচ্চমর্যাদা দান করুন) তখন জাতির জনককে যথাযথ সম্মান করেই সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন।ফলে তাকে অকথ্য গালিগালাজ ও গলাধাক্কা দিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছিল।অসংখ্য শুকরিয়া যে সারা গণ মানুষের সেন্টিমেন্টকে সম্মান করে জাতির জনক ওই ধরনের কোন আইন পাশ করেন নাই। উল্লেখিত মুক্তিযোদ্ধা সেই অফিসে কর্মরত ও ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী।
আর বলার প্রয়োজন নেই। রাত গভীর হলেই শেয়াল হুক্কা হুয়া করবে।সুতরাং আমরা যারা নিজেকে মুসলমান দাবী করি,পারতপক্ষে নিজ নিজ জায়গার নাম,ছেলেমেয়েদের নাম ডাকের সময় সুস্পষ্ট উচ্চারণ,শ্রতিমধুর,অর্থবোধক হওয়ার জন্য বিশেষ যত্নবান হয়ে প্রিয় রাসুলের সুন্নাহ বাস্তবায়ন করব,আমীন। -ওয়ামা তাওফীকি ইল্লা বিল্লাহ।
লেখক: মোঃ তাহমিদুর রহমান, কলামিষ্ট।