পিবিএ, লালমনিরহাট : লালমনিরহাট অঞ্চলের বিড়ি শ্রমিকরা, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যাবার কারণে খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। হাতে তৈরী বিড়ি ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারনে দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ অঞ্চলের ৫০ হাজারেরও অধিক নিম্ন আয়ের বিড়ি শ্রমিকদের।
শনিবার বেলা ১১টার সময় মালিক পক্ষ বা সরকারী ভাবে সাহায্যের দাবীতে কয়েক’শ শ্রমিক মানব বন্ধন করে।
বিড়ি ফ্যাক্টরী ১৭ দিন বন্ধের কবলে পড়ায় এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো পর্যন্ত সরকারী বা মালিক পক্ষ থেকে কোন সাহায্য সহযোগীতা পায়নি বলে জানান তারা। এ কারনে ফ্যাক্টরীর সামনে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষে মানব বন্ধন করেছে স্থানীয় বিড়ি শ্রমিকরা।
সরেজমিনে ফ্যাক্টরী পরিদর্শন করে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সামাজিক সুরক্ষা জনিত কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষনার মাধ্য দিয়ে গেল এক সপ্তা বন্ধ রয়েছে ভোটমারী ও ভোটমারী বাজার আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরী। মোট দশ দিন ফ্যাক্টরী বন্ধ ঘোষনা হলেও পরবর্তীতে নতুন করে আরো ৭ দিন সাধারণ ছুটি বৃদ্ধি হওয়ায় টানা ১৭ দিন এই বিড়ি ফ্যাক্টরী বন্ধের কবলে পড়েছে।
লালমনিরহাটে অঞ্চলের মধ্যে আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরীরর ৪ প্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার বিড়ি শ্রমিক বর্তমানে বেকার হয়ে পড়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে তাদের পরিবার গুলো। হাতে তৈরী বিড়ি ফ্যাক্টরী বন্ধ থাকার সুযোগে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকা ও জেটিআই (জাপান ট্যোবাকা) চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেটের রমরমা ব্যবসা।
তাদের প্রোডাক্ট মজুদ এবং মেশিনে তৈরী হওয়ায় তাদের উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শ্রমিক এবং ফ্যাক্টরী পরিচালনাকারী সদস্যরা। এক দিকে বিড়ি ফ্যাক্টরী বন্ধ অন্যদিকে কাজের অভাবে হাজার হাজার শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
শ্রমিকরা জানায়, ফ্যাক্টরীর উৎপাদন বন্ধ থাকা কালিন সময়ের জন্য আমাদেরকে মালিক পক্ষ বা সরকারী ভাবে এখনও কোন সাহায্যের ব্যবস্থা করেনি। গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে দিন কাটাচ্ছি একমাত্র আল্লাহ জানেন। কোন রকম সাহায্য না দেওয়া পর্যন্ত নিয়মানুসারে ফ্যাক্টরীর উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখতে হবে বলে জোর দাবি জানায় তারা। নিম্ন আয়ের সাধারণ শ্রমিকরা বলেন, ফ্যাক্টরী বন্ধ থাকলে আমরা করোনা ভাইরাসে মরবো না বরং না খেয়েই মরবে বিড়ি শ্রমিকরা। মালিক পক্ষ বা সরকারী ভাবে সাহায্যের দাবী নিয়ে আমাদের এই সীমিত পরিসরে মানব বন্ধন কর্মসূচী দেওয়া হয়েছে।
আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরী ভোটমারী শাখার ম্যানেজার মোকলেছুর রহমান বলেন, ফ্যাক্টরীর শ্রমিকরা দিন আনে দিন খায়। দীর্ঘদিন বন্ধের কবলে পড়ায় কোন শ্রমিককে সরকারি বা মালিক পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বা কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা করেনি। সে কারনে সাধারণ শ্রমিক সহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভীষণ কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন। দ্রুত সরকারি বা মালিক পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নিলে না খেয়ে মরতে হবে ৫০ হাজার শ্রমিক সহ জড়িত আরো কয়েক হাজার মানুষের।
এলাকা বাশি জানান, হাতে তৈরি বিড়ি শিল্প মুলত একটি হস্তশিল্প। এই শিল্পে শুধু যশোরের দুই ফ্যাক্টরীতে অন্তত ৫ হাজার শ্রমিক রয়েছে। যাদের একমাত্র উপার্জনের হাতিয়ার এই বিড়ি শিল্পে। করোনা ভাইরাসের কারনে ফ্যাক্টরী বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এখানে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক। সরকারি বা মালিক পক্ষ থেকে দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়াতে বিনীত ভাবে অনুরোধ করেন তিনি।
মালিকপক্ষ থেকে বিড়ি শ্রমিকরা কোনো সহযোগিত না পাওয়ার বিষয়ে ভোটমারী বাজার আকিজ বিড়ি কারখানার সহঃ ব্যবস্থাপক কর্ন পাল বলেন, মালিকের ইচ্ছা থাকার পরও তাদের সহযোগিতা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের বৈষম্যমূলক শুল্ক নীতির কারনে হাতে তৈরি বিড়ি শিল্প র“গ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কারখানা বন্ধ করে রেখেছি।
পিবিএ/ আসাদ হোসেন রিফাত/মোআ