নিউজিল্যান্ডে নিহত নরসিংদীর জাকারিয়া ভূঁইয়া নিজ গ্রামে শায়িত হলেন

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত জাকারিয়া ভূঁইয়া

শরীফ ইকবাল রাসেল, পিবিএ, নরসিংদী: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩ বাংলাদেশীর মধ্যে নরসিংদীর জাকারিয়া ভূঁইয়ার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২৭ মার্চ) বেলা ১১টায় পলাশ উপজেলার জয়পুরা গ্রামের ঈদগাহ মাঠে জানাজা নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এরআগে গত ২০ মার্চ স্বামীর মরদেহ আনতে নিউজিল্যান্ডে যান স্ত্রী রিনা আক্তার। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার ২৬ মার্চ রাত ১০ টা ৪০ মিনিটে স্বামী জাকারিয়ার মরদেহ সিংগাপুর এয়ারলাইনস এসকিউ ০৪৪৬ বিমানে করে ঢাকার হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবস্থান করে। বিমান বন্দরে নিহত জাকারিয়ার বড়ভাই আলমগীর, বাবা আব্দুল বাতেন সহ আত্মীয়-স্বজনরা তার লাশ গ্রহন করেন। সেখান থেকে রাত প্রায় দেড়টায় লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যানে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় পলাশ উপজেলার জয়পুরায় গ্রামের বাড়ীতে।

জাকারিয়া ভূঁইয়ার জানাজা নামাজের অংশ

জাকারিয়ার মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌছলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃস্টি হয়। যেন আকাশ বাতাশ বারি হয়ে আসে। আর কালো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। সাথে সাথে বুকচাপা কান্না প্রতিবেশীদের মনেও। এঅবস্থায় রাতেই জাকারিয়ার মরদেহ এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসে প্রতিবেশীরা।
সকালে মরদেহ পৌঁছার খবর পেয়ে একনজর দেখার জন্য জাকারিয়া ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ীতে ভিড় করেন আত্মীয় স্বজনসহ আশেপাশের গ্রামের লোকজন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন শোকে স্তব্ধ পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনেরা। উপস্থিত এলাকাবাসী শান্তনা দিয়েও থামাতে পারছিলেন না শোকার্ত পরিবারটিকে। কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা-মা ও স্ত্রী রিনা আক্তার। এসময় শোকের ছায়া নেমে আসে জয়পুরা গ্রামজুড়ে।

পাশাপাশি দুরদুরান্ত থেকেও লোকজন আসতে শুরু করে জাকারিয়ার লাশটি এক নজর দেখার জন্য। বেলা ১১টায় নিজ বাড়ির পাশেই ঈদগাহ মাঠে জানাযা নামাদের জন্য জাকারিয়ার মরদেহটি রাখার পর জনতার ঢল নামে একনজর দেখার জন্য। পরে সেখানে জনপ্রতিনিধি ও আত্মীয়-স্বজনদের অনুভূতি প্রকাশের পর জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে অংশ নেন নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ।

গত ১৫ মার্চ দুপুরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল-নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাওয়া মুসলমানদের উপড় এক বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে হত্যা করে ৪৯জন মুসলিম। তারমধ্যে তিনজন রয়েছেন বাংলাদেশের। এদেরই একজন নরসিংদীর পলাশের জাকারিয়া ভূঁইয়া। জাকারিয়া পলাশ উপজেলার জয়পুরা গ্রামের আব্দুল বাতেন ভূঁইয়ার ছেলে। দুই ভাই ও তিনবোনের মধ্যে জাকারিয়া চতুর্থ সন্তান।

জাকারিয়ার বাবা আব্দুল বাতেন ভূইয়া জানান, দীর্ঘ ৮ বছর সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন নিউজিল্যান্ডের একটি কোম্পানীতে চাকুরি পান জাকারিয়া। আড়াই বছর আগে দেশে ফিরে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের ১৭ দিন পর নিউজিল্যান্ডে চাকুরিতে যোগদান করেন জাকারিয়া। সর্বশেষ ৬ মাস আগে দেশে ফিরে ৪০ দিনের ছুটি কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডে যান তিনি। স্ত্রী রিনা আক্তারকেও নিউজিল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি শেষ করেছিলেন জাকারিয়া ভূঁইয়া। নিয়মিত নামাজ আদায়কারী জাকারিয়ার মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা। কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা-মা, স্ত্রীসহ স্বজনেরা। ক্রাইস্টচার্চে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীও জানান তারা।

বিদেশে কোন বাংলাদেশী বৈধভাবে গিয়ে মারা গেলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে লাশ দাফন কাফনের জন্য বাংলাদেশের বিমান বন্দর থেকেই ৩৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলে তারা সেই অর্থ না দিয়েই মরদেহটি হস্তান্তর করে দেয় বলে জানালেন নিহত জাকারিয়ার বড় ভাই আলমগীর হোসেন।

পিবিএ/এসইআর/এমএসএম

আরও পড়ুন...