পিবিএ, ঢাকা : গত দেড় মাস ধরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের তেমন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যায়নি। এ বিষয়ে জোট শরিকদের ভাষ্য, সর্বশেষ একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরদিন একবার তারা বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর থেকে এপর্যন্ত জোটের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগও করা হয়নি। এ অবস্থায় বেশিরভাগ শরিক জোটের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজ নিজ দল গোছানো ও শক্তিশালী করায় মনোযোগ দিচ্ছে। কোনও কোনও শরিক দল আবার নতুন কর্মসূচিতে রাজনীতির মাঠে জোটের সক্রিয় হওয়ার আশা করছে। এর বাইরে এক শরিক দল অনেকটা হতাশ হয়ে জোটে থাকা না থাকা নিয়ে দোলাচলে রয়েছে। বিএনপির জোট শরিক বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, ‘নির্বাচনের পর একবার জোটের বৈঠক হয়েছিল। এরপর থেকে জোটের আর কোনও মিটিং কিংবা কোনও কর্মসূচি নেই। বিএনপির সঙ্গে তেমন যোগাযোগও নেই। এই অবস্থায় সবাই নিজ নিজ দল নিয়ে ব্যস্ত আছেন।’
২০-দলীয় জোটে থাকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে এ জোটের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ‘জোটের তো কোনও কার্যক্রম নেই। আমরা জোটে থাকবো কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছি। আমি অসুস্থ; তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। সুস্থ হলে দলের বৈঠক করে জোটে থাকা না থাকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’ জোট নয়, নিজ দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছে বিএনপির শরিক দল খেলাফত মজলিসও। দলটির আমির অধ্যক্ষ মাওলানা ইসহাক বলেন, ‘বিএনপি থেকে কেউ কোনও যোগাযোগ করে না। আমি নিজেও কোনও যোগাযোগ করি নাই। তবে জোট ভেঙে যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জোটের কোনও কর্মসূচি না থাকায়, আমরা দেশজুড়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কারণ, জোটের আগে তো দলকে শক্তিশালী করতে হবে। আর সাংগঠনিক কাজে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি জোটের অন্য শরিকরাও বলছে, এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচনে যাবে না। তবে জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ব্যারিস্টর তাসমিয়া প্রধান বলেন, ‘আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি শুরু করেছে জোটের শরিক দল কল্যাণ পার্টি। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘জোটের প্রধান শরিক দল বিএনপি। তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও অন্য জাতীয় কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। অনেক দিন জোটের কোনও বৈঠক বা কর্মসূচি নেই। কবে আবার জোটের বৈঠক হতে পারে, সেটাও জানি না। ফলে এই পরিস্থিতিতে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে ছোট ছোট প্রোগ্রাম করছি।’
শিগগিরই নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে ২০-দলীয় জোট ফের সক্রিয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব বলেন, ‘এখন তো জোটের কোনও কর্মসূচি নেই। তবে আমরা নিজ দলকে শক্তিশালী করতে প্রত্যেক বিভাগ ও জেলায় নতুন কমিটি করছি। এরপর দলের জাতীয় সম্মেলন করবো। আগামী সপ্তাহে দলের জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে।’
জোটের আরেক শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘জোটের কোনও খোঁজ-খবর নেই। এখন আমরা নিজ সংগঠনকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি।’ ২০-দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এ এইচ কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা কোনও কর্মসূচি দিই নাই। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে যেসব জেলায় আমাদের কমিটি রয়েছে, সেইগুলো পুনর্গঠন করার কাজ শুরু হবে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করে আরও শক্তিশালী করা হবে।’
শরিকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচন গেলো, সেই নির্বাচনে কী হয়েছে, সেটা সবাই জানে। আর মাঝখানে প্রায় একমাস আমি অসুস্থ ছিলাম। আশা করি, শিগগিরই জোটের শরিকদের সঙ্গে বসা হবে। কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে তাদের সঙ্গে।’
পিবিএ/জিজি