নিভৃতাচারী এক গীতিকার ও সুরকার শোয়েব চৌধুরী

shoeb

পিবিএ ডেস্ক : এই নকল গান আর নকল সুরের সময়টায় সঙ্গীতে সত্যিই যখন ভালো গানের ভীষণ আকালমর্মে-মর্মে উপলব্ধি করছে শ্রোতারা, ঠিক তখন চুপচাপ নিজের ভূবনে একের পর এক গান রচনা করে যাচ্ছেন শোয়েব চৌধুরী। যদিও পেশাগত জীবনে তার সুখ্যাতি একজন সাহসী সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসেবেই। তাকে এ পরিচয়েই এখন পর্যন্ত সবাই চেনে-জানে। কিন্তু যে পরিচয়টা সম্ভবত তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের-পর-যুগ সেটিই হলো গীতিকার এবং সুরকার স্বত্বা। অনেক বছর ধরেই তিনি গান লিখছেন, সুর করছেন। বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তী কন্ঠশিল্পী রুনা লায়লা থেকে শুরু করে সিনিয়র শিল্পীদের মধ্যে প্রায় সবাই তার গান গেয়েছেন। এ প্রজন্মের শিল্পীদের মাঝে রিংকুসহ অন্যরাও গেয়েছেন।

একজন গীতিকার এবং সুরস্রষ্টা শোয়েব চৌধুরী যে শুধু বাংলা গান লিখছেন তা কিন্তু নয়। এরই মাঝে তার লেখা এবং সুর করা উর্দু গজল ‘অ্যায় কাফান তুনে জিন্দেগীসে মুঝকো জুদা কিয়া’ গেয়েছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। তারই লেখা এবং সুর করা একটা ইংরেজী গান ‘উইন্ড ইন দ্যা ক্যাসল’ গাইবেন এ সময়ের হলিউড সেনসেশন টেলর সুইফট। বলিউড ছবির জন্য একটা আইটেম গান ‘রাত রাংগিলী ম্যায় আওর তু’ ও লিখেছেন-সুর করেছেন তিনি। আবার এই শোয়েব চৌধুরীই লিখছেন-সুর করছেন আঁকর মাটির ঘ্রান মেশানো বাংলা লোকগান। এরই মাঝে তার লেখা ও সুরে লোকগান ‘তুই কেনো আমার হইলিনা’, ‘যমের বাড়ী নিতে আমায়’,এবং ‘নিরাকারী মনমহাজন’ গানগুলো গাইবেন কলকাতার জনপ্রিয় লোকশিল্পী পৌষালী ব্যানার্জি। আরো কিছু নতুন আধুনিক ও লোক গান গাইবেন ভারতের অরিজিত সিং, শ্রেয়া ঘোষালসহ আরো অনেকেই। আমরা যারা শোয়েব চৌধুরীর লেখা ও সুর করা গানগুলো শুনেছি তারা জানি, ওই গানগুলোতে কথা ও সুরের কি অসাধারণ মায়ামন্ত্র আছে। এ গান হৃদয়কে নাড়া দেয়, আমাদেরকে ডুবিয়ে দেয় কথা-সুরের অন্য এক জগতে।

ব্যক্তি জীবনে শোয়েব চৌধুরী মাত্র চার বছর বয়স থেকে টানা ষোল বছর পর্যন্ত তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ওস্তাদ আখতার সাদমানী, ওস্তাদ রাম গোপাল মহন্ত, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ খান, ওস্তাদ বারীন মজুমদারদের মতো সংগিতজ্ঞদের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিখেছেন। এ কারণেই তার সুর করা গানগুলোয় যেমন আছে রাগরাগিণীর অসাধারণ খেলা ঠিক তেমনিভাবে আছে হৃদয় কেড়ে নেয়া কিছু উপাদান যা ভাষায় প্রকাশ করাই যায় না। আর ওনার লেখা গানের কথামালার বিষয়ে এক কথায় যদি বলতে হয়, সাম্প্রতিক সময়ে শোয়েব চৌধুরীর সমান্তরাল কেউই নেই। আর যদি লোকগানের কথা বলতে হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, এপার বাংলা এবং ওপার বাংলায় শোয়েব চৌধুরীর তুলনা কেবল তিনিই। তার প্রতিটি গানের কথাতেই গভীরতা ব্যাপক এবং প্রতিটি গানই শ্রোতাকে ডুবিয়ে নেবে ভাবনা আর অনুভূতির অন্য আরেক জগতে। অনেক শিল্পী বলেন শোয়েব চৌধুরীর গানের সুর কঠিন এবং এগুলো কন্ঠে তোলা কষ্টকর।

এ বিষয়ে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সঙ্গীত পরিচালক মিল্টন খন্দকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এটা মানবো না। প্রথমেই বলবো, আমাদের লেখা গানের কথার যেখানে শেষ ঠিক্ সেখান থেকেই শুরু শোয়েব চৌধুরীর গানের কথা। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার গান খুবই পছন্দ করি। আর ওনার সুরের কথা যদি বলতে হয়, তাহলেও বলবো, ওই সুরে মোহিনী যাদু আছে। আমি নিজেও ওনার বেশ কিছু গানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছি। আমি বলবো, যেসব কন্ঠশিল্পীরা চায় ওদের গানগুলো যুগ-যুগ টিকে থাকুক, তাদের শোয়েব চৌধুরীর গান অবশ্যই গাইতে হবে। এসব গান একদিন কালজয়ী হবে।।’

শোয়েব চৌধুরীর কথা ও সুরে দু’টো গান প্রকাশ করতে যাচ্ছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান মিউজেকটেক। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সেলিম রেজা বললেন, ‘অনেক বছর ধরে শখ ছিলো শোয়েব চৌধুরীর লেখা ও সুর করা গান প্রকাশ করবো। কিন্তু আমি জানতাম, যোগ্য শিল্পী না পেলে উনি গান দেবেন না। কারণ উনি গানের সওদাগর নন। তিনি হলেন সঙ্গীতের একজন খাঁটি প্রেমিক। তিনি তো টাকা কামানোর জন্য গান লিখেন না, সুর করেন না। তিনি গান লিখেন নিজের এবং অন্যের আত্মার প্রশান্তির জন্য। এবার আমার প্রতিষ্ঠান ওনার দুটো গান প্রকাশ করতে যাচ্ছে। আমি এখনও শিল্পী চূড়ান্ত করিনি। শিল্পী বাছাই করছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে টেকে। কারণ, শোয়েব চৌধুরীর গান গাইতে পারা যেকোন শিল্পীর জন্য সম্মানের বিষয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে মানুষের লেখা-সুর করা গান ওস্তাদ রাহাত ফতেহ আলী খানের মতো মানুষেরা গান, তার সম্পর্কে আর কী বলবো। আমি শুধু এক কথায় বলবো, কেবল ভাগ্যবান শিল্পীরাই শোয়েব চৌধুরীর গান গাইবে, ভাগ্যহীনরা নয়।’

পিবিএ/এমএস/জিজি

আরও পড়ুন...