গাজায় নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল নিয়মতান্ত্রিক নির্যাতন চালিয়েছে কিনা সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। টানা ১১ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অসম শক্তি প্রয়োগে তেল আবিবের হামলা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে। এদিকে ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় সাড়ে নয়শ’ কোটি ডলারের তহবিলের আবেদন জানিয়েছেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি।
ফিলিস্তিন অধ্যুষিত গাজার পথে পথে রকেট, বোমাসহ শক্তিশালী সব মারণাস্ত্র নিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে হামাস সদস্যরা। ১১ দিনের টানা সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতিতে বিজয়োল্লাসে এখনও মেতে আছে সংগঠনটি। ধ্বংসস্তূপ হলেও নিজ ভূমিতে ফেরায় স্বস্তিতে বেসামরিক ফিলিস্তিনিরাও।
সংঘাত চলাকালে গাজায় দিনরাতই বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আড়াইশ’র বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়। অন্যদিকে এ সময়ের মধ্যে হামাসের চার হাজারের বেশি রকেট হামলায় বেশ কয়েকজন ইহুদিও হতাহত হন।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী অসম শক্তি প্রয়োগ করে যুদ্ধাপরাধ করেছে কিনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার স্বাধীন তদন্ত করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) ইসরাইলের বিরুদ্ধে তদন্তের পক্ষে বিপক্ষে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। ৪৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২৫টিই তদন্তের পক্ষে এবং নয়টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। বাকি ১৪টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
জাতিসংঘে পাশ হওয়া এই বিলের নিন্দা জানিয়ে এটিকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের জন্য এটি একটি লজ্জার দিন। সংস্থাটি শুধুমাত্র এমন একটি দেশের মর্যাদা নষ্ট করেনি যারা জঙ্গি হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করে আসছিল বরং হামাসের মতো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বর্বরতাকেও সমর্থন দিয়েছে।’
এর আগে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হওয়া বেশিরভাগ ভবনে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি দল আশ্রয় নিয়েছিল বলে তেল আবিব দাবি করে আসলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মুসলিম দেশগুলো গাজা সংঘাতে ইসরায়েলের অপরাধ খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘ তদন্ত কমিশনকে অনুরোধ করার পর এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে এক বিশেষ অধিবেশনে এ কথা বলেন মিশেল।
একই দিন গাজার বাসিন্দাদের জন্য আগামী তিনমাসে অন্তত সাড়ে নয়শ’ কোটি ডলার ত্রাণ প্রয়োজন জানিয়ে এ ত্রাণের অর্থের জন্য আবেদন করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি। তিনি জানান, শুধুমাত্র খাবার, ওষুধ, চিকিৎসা, থাকার মতো জায়গার সাময়িক মেরামতসহ মৌলিক চাহিদা পূরণেই এ পরিমাণ অর্থ সহায়তা দরকার ফিলিস্তিনিদের।