নিরাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান

প্রতিটি মানুষই কমবেশি গোনাহ করে থাকেন, একমাত্র ব্যতিক্রম নবী-রাসুলরা। বান্দা যখন গোনাহ করার পর ভয়ে ভীত হয়ে গভীর রাতে বেদনা ভরা হৃদয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমার হাত তোলে, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে ওই বান্দাকে নিয়ে গর্ব করেন এবং তাকে ক্ষমার কোলে জড়িয়ে নেন।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি আমাকে ডাকনি। আমার কাছে ক্ষমা ও প্রার্থনা করনি। তারপরও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আর এজন্য আমি কারো পরোয়া করিনি।

শোন হে আদম সন্তান! তোমার পাপ যদি মহাশূন্যের চেয়েও বেশি হয়, আর নিজের ভুল বুঝতে পেরে যদি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। তুমি যদি জমিন ভরা পাপ নিয়ে আমার কাছে হাজির হও, আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তারপরও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। (তিরমিজি শরীফ)

হে বন্ধু দেখুন আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামগুলোর মধ্য থেকে একটি নাম আছে ‘আলিম’। অপর একটি নাম আছে ‘হালিম’। এ নাম দু’টি পবিত্র কোরআন শরীফে একসঙ্গে পাশাপাশি এসেছে। এখন জেনে নেয়া যাক, নাম দু’টির অর্থ।

‘আলীম শব্দের অর্থ হলো তিনি সর্বজ্ঞ। তিনি কেমন জানেন? তিনি এমনভাবে জানেন যা কেউ জানেন না। বান্দা যখন কোনও গোনাহ করার ইচ্ছা করেন। যখন তার মাথায় গোনাহের কথা কল্পনা করেন, তখন থেকে তিনি জানেন। বান্দা কি গোনাহ করবে, কিভাবে গোনাহ করবে? কোথায় গোনাহ করবে? কিসের মাধ্যমে গোনাহ করবে? সবকিছুই আল্লাহ তাআলা জানেন। তারপরও আল্লাহ বান্দাকে পাকড়াও করেন না। শাস্তি দেন না, লাঞ্ছনা করেন না।

কারণ আল্লাহ তাআলার আরেকটি নাম আছে ‘হালিম’। যার অর্থ তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল এবং সহিষ্ণু। অবশ্যই তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল। তা নাহলে, তিনি বান্দার এতকিছু অপরাধ জানার পরও তিনি বান্দাকে কোনো ধরনের শাস্তি দেন না বা অপমান করেন না। তিনি বান্দাকে নিয়মিত তার নেয়ামতগুলো ভোগ করছেন।

দেখুন কোনো সন্তান যদি অপরাধ করে। তখন বাবা তার ওপর রাগ হয়ে যায়। নিষেধ করার পর যদি ফের অপরাধ করে, তখন তার খানা-পিনা অথবা তাকে ঘর থেকে বের করে দেন। অথচ সন্তানের অপরাধ বাবা জানেন একটি। কিন্তু সন্তান আরও এরকম অপরাধের সঙ্গে জড়িত তা সম্পর্কে বাবা কিছুই জানেন না।

সুরা জুমার ৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা কি বলেন জেনে নেয়া যাক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার প্রিয় বান্দা! তোমরা যারা নফসের গোলামী করে নিজেদের জীবন গোনাহে পূর্ণ করে ফেলেছ, আমার রহমত থেকে তোমরা নিরাশ হইও না। নিশ্চয়ই, আমি আল্লাহ ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু’।

এক হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোনাহ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তি এমন যেনও তার কোনও গোনাহ নেই।(ইবনে মাজাহ)

হে বন্ধু! ৬০-৭০ বছরের জীবনে আল্লাহর দেখানো পথে চলতে পারেননি। পাপের পথে চলে জীবনটাকে শেষ করে ফেলেছেন। ভাবছেন, এখন কী কোনও সুযোগ আছে আর? এত এত পাপ কী আল্লাহ ক্ষমা করবেন?

আপনার জন্যই এসব আয়াত, হাদিস ও উদাহরণগুলো উল্লেখ করা হলো। হে বন্ধু! হে যুবক ভাই! হে বৃদ্ধ বাবা! আপনি যদি বিগত জীবনের গোনাহ থেকে ফিরে আসেন, তবে আল্লাহ তাআলা আপনাকে একটি ‘সুবর্ণ সুযোগ’ দেয়ার ওয়াদা করেছেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন, যে তওবা করে পাপ থেকে আমার পথে ফিরে আসবে। এবং ভালো কাজের চর্চা করতে থাকবে, তার পেছনের জীবনের গোনাহগুলো আমি নেক দিয়ে পরিবর্তন করে দেবো। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াময়।’(সুরা ফোরকান : ৭০)

চিন্তা করে দেখুন! আল্লাহ তাআলা তার গোনাহগার বান্দার প্রতি কত দয়ালু। পেছনের জীবনের গোনাহ তো পরিবর্তন করে দেয়ার ওয়াদা দিচ্ছেন। এটা সৃষ্টির প্রতি স্রষ্টার ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত ছাড়া আর কিছু নয়।

আরও পড়ুন...