নির্বাচনি প্রতীক পেয়ে সদলবলে দ্বারে দ্বারে প্রার্থীরা

পিবিএ,ঢাকা: আসন্ন একাতশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোটা দেশজুড়ে নির্বাচনী ঊত্তাপ। দশ বছর পর সব দলের অংশ গ্রহনে হতে যাওয়া নির্বানে গতকাল সোমবার প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে দসদলবলে ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। শুরু করেছেন শো-ডাউন। ছুটে চলছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে। করছেন শুভেচ্ছা বিনিময়,নিচ্ছেন ভাল মন্দ খোজ-খবর । কাতর ভাষায় চাচ্ছেন ভোট।

এদিকে আওয়ামীলীগ ও ঐক্যফ্রন্ট সারাদেশে নির্বাচনী প্রচারনার সময় চূড়ান্ত করেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুকরার কথা রয়েছে। আগামী বুধবার সকাল ৮টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রওনা হয়ে সড়ক পথে মুন্সিগঞ্জ হয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার যাবেন। দুপুর ১২টায় তিনি টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছাবেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহাপাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেবেন। এরপর দুপুর আড়াইটায় প্রধানমন্ত্রী তার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুত্ফর রহমান সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। ওইদিন রাতে শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে রাত্রিযাপন করবেন। পরদিন সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে ফিরবেন মানিকগঞ্জ হয়ে। টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জে জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী নির্বাচনী সফর শুরু হবে সিলেট। সেখানে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.)’র মাজার জিয়ারত শেষে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। উত্তরবঙ্গে চার জেলা-বিভাগীয় শহর সফর করবেন শেখ হাসিনা। সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও দিনাজপুরে হবে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নির্বাচনী সফর করবেন শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার গোপালগঞ্জ-৩ ছাড়াও শ্বশুরবাড়ি রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি রংপুরের আসনটি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ছেড়ে দেন।

পক্ষান্তরে বিএনপি দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে এবার ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। বুধবার সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.)মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে বরাবরের মতো এবারও ভোটের প্রচার শুরু করবেন ধানের শীষ মার্কার প্রার্থীরা। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শীর্ষ নেতারা ওইদিন সিলেটে যাবেন। সেখানে হজরত শাহজালাল (রহ.), হজরত শাহপরাণ (রহ.) ও মুক্তি বাহিনীর অধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর মাজার জিয়ারত শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারে অংশ নেবেন তারা।সেখানে তারা রাত্রিযাপন করবেন। পরদিন ঢাকা ফিরবেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ড. কামাল হোসেন হয়তো সিলেটের পর ঢাকার বাইরে যেতে পারবেন না। তবে তিনি ঢাকা মহানগরীর নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে অংশ নেবেন। তবে সারা দেশে প্রচারে , ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা থাকবেন। সূত্র জানায়, সিলেটসহ সারা দেশে প্রচারের জন্য ইতিমধ্যে সম্ভাব্য তারিখসহ একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে দুই জোটের শীর্ষ নেতাদের প্রচারে অংশ নেয়ার বিষয়ে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুটি করে আসনে নির্বাচন করছেন। তাই তারা সারা দেশের অনেক জায়গায়ই প্রচারে যেতে পারবেন না। কারণ তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায়ও সময় দিতে চান। তবে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন না করার কারণে তাকে সব সময় পাওয়া যাবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা ১১ ডিসেম্বর শুরু করার কথা থাকলেও বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধামন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা দেশে না থাকায় সময় পরিবর্তন করে ১২ ডিসেম্বর থেকে প্রচারণায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার দুপুরে ধানমন্ডিস’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আগামী ১২ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচারে নামছে আওয়ামী লীগ। এদিন দুপুরে টুঙ্গিপাড়া থেকে এই প্রচার কার্যক্রম শুরু করবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে নির্বাচনী প্রচারের কাজে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে গতকাল প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসারে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে কোনো বাধা নেই। নির্বাচনী প্রচারনায় পিছিয়ে নেই ঢাকার প্রার্থীরা। জানা গেছে, এবার ১৯ দিন প্রচার কাজ চালানোর জন্য সময় পাচ্ছেন প্রার্থী-সমর্থকরা। প্রচার কাজ বন্ধ করতে হবে ২৮ ডিসেম্বর মধ্য রাত ১২টায়।

এদিকে মহান বিজয় দিবসের পর আগামী ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর প্রকাশ করা হবে।’ জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ‘দিন বদলের অভিযান, অদম্য বাংলাদেশ’, ‘গ্রাম হবে শহর’, ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’সহ এমন ১৪টি স্লোগানসহ ইশতেহারের খসড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে একটি বেঁছে নিবেন শেখ হাসিনা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে গুরুত্ব পাচ্ছে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি বিষয়েরও ঘোষণা থাকবে।

পিবিএ/ইএইচকে

আরও পড়ুন...