ঢাকা সিটি নির্বাচন

নির্বাচনী মাঠ সরব, ভোটার নিরব

শতাব্দী আলম,পিবিএ: শেষমুহুর্তের প্রচারণায় রাজধানী আজ উৎসবের নগরী। নগরের অলি গলি খন্ড খন্ড মিছিলে মুখরিত। উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে গোটা দশেক মিছিল চোখে পড়েছে। তবে এর বেশীর ভাগই কাউন্সিলর প্রার্থীদের। আর বিমান বন্দর রেল ষ্টেশনে নামতেই মিছিলের সম্মুখিন হলাম। এটা নৌকার পক্ষে। তবে এত কিছুর পরও ভোটার কিন্তু নির্বিকার। কেহ মুখ খুলে না। নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে যেমন কোন কোন সময় প্রার্থীর পক্ষে রব উঠে। অনেকসময় জোয়ার দেখা যায়। এ নির্বাচনে সেরকম কিছু পরিলক্ষিত হয়নি। ভোটার নিরব।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল। একথা বলাই যায়। দুই চির প্রতিদ্বন্দী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রচারণায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে। প্রচারণার কৌশলেও কেহ কাহারে নাহি ছাড়ে সূচাগ্র এমন পরিস্থিতি। একদিকে নিজ দলের প্রার্থির স্বচ্ছ ভাবমুর্তির পরিচয় তুলে ভোটারের মনযোগ আকর্ষণের চেষ্টা । অন্যদিকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট পাবার প্রত্যাসা উভয়েরই আছে।

আওয়ামী লীগ বা বিএনপি নেতা কর্মীরা জোড় দিয়ে বিজয়ের কথা বলছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা উত্তরের একাধিক আওয়ামী নেতা নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে নৌকার বিজয়ের ব্যপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত এমনটাই তাদের অভিমত। আর বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, জনসাধারণ ভোট দেবার সুযোগ পেলে ধানের শীষ ঠেকানো যাবে না।

ভোটের মাঠ নিয়ে দু চার কথা বলা দরকার। প্রচারণার ক্ষেত্রে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বাহবা দিতেই হবে। দু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রচারণায় বড় ধরনের কোন ব্যত্বয় হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল হিসাবে ঢাক ঢোল পিটিয়েছে বেশি। তবে তুলনামুলকভাবে বিএনপি নেতারা মাঠে বেশী সরব ছিলো। তারা ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়েছে তুলনামুলক বেশী। বিএনপি নেতা কর্মীরা নির্বিবাদে ভোটারের কাছে যাবার সুযোগ পেয়েছে। এখানেই নির্বাচন কমিশনের সাফল্য। তাছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের মাঝে বিএনপির প্রার্থীরা বেশ এগিয়ে। নির্বাচনের ফলাফলে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।

তবে সবকিছু হিসাবে কষে হয় না। ঢাকা সিটি নির্বাচন বাংলাদেশের অন্যান্য নির্বাচনের চাইতে একটু আলাদা। কারন এখানকার ভোটার সচেতন। সারা বিশ্বের সজাগ চোখ। দেশ বিদেশের হাজার হাজার গণমাধ্যমকর্মীর ক্যামারা সদা জাগ্রত। তাই নির্বাচন কমিশন বা সরকার সর্তক থাকবে এমনই হবার কথা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই দলের প্রার্থীর প্রধান কাজই হচ্ছে ভোটারকে কেন্দ্রে উপস্থিত করা। সেক্ষেত্রে বিএনপি প্রার্থীকে বেশী কাজ করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলেও বিএনপি সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে পেরেছে বলে মনে হলো না। খোদ বিএনপি নেতা কর্মীদের কথাবার্তায় আচরণে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। তারা মনে করে ইভিএমে কারচুপি হবে। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তাদের টার্গেট যে কোন মূল্যে বিজয়।

নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা বিষয় না। একটি প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে এটাই আমাদের জন্য আশার বিষয়। অবাধ প্রচারণার সুযোগ পেয়েও বিএনপি গণজাগরণ সৃষ্টি করতে পারেনি। ভোটারকে মাঠে নামাতে পারেনি। মানুষের মুখে মুখে রবও নেই। সামাজিকভাবে বিএনপি নেতৃবৃন্দ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলেমিশে ব্যবসা বাণিজ্য করে। এখানেই আওয়ামী লীগের সুবিধাজনক অবস্থান। কারন দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকার সুযোগ লাগিয়ে এমনিতেই সবকিছু তাদের কব্জায়।

বিএনপির জন্য সেই বেড়াজাল ছিন্ন করার সর্বোত্তম সুযোগ হচ্ছে নির্বাচন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখনো বিএনপি অভিযোগের রাজনীতিতে আছে। তবে ভোটার হিসাবে জনসাধারণের নৈতিক দায়িত্বও কিন্তু কম না। রাত পোহালেই ভোট। মহামূল্যবান ভোটার প্রচারণায় নিরব থাকুন তাতে কোন খেদ নেই। হে ভোটার আসুন ভোট প্রয়োগ করি। নির্বাচনকে সাফল্যমন্ডিত করি। গণতন্ত্রের বিজয় হোক।

পিবিএ/শতাব্দী আলম/বিএইচ

আরও পড়ুন...