নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা!

পিবিএ, ঢাকা: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণী গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বৈঠকের কার্যপত্র প্রস্তুত করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকা এবং উপকূলীয়, দুর্গম ও পার্বত্য এলাকার ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য পৃথক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। দশম জাতীয় নির্বাচনের আদলে এবারো আইনশৃঙ্খলায় থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা।

জানা গেছে, ভোটকেন্দ্র পাহারার ক্ষেত্রে সাধারণ কেন্দ্রে একজন পুলিশসহ ১৪ জন, মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রে তিনজন পুলিশসহ ১৫ জন এবং দুর্গম ও উপকূলীয় এলাকার কেন্দ্রে দুজন পুলিশসহ ১৪ জন ফোর্স রাখার বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা রেখেছে ইসি।

তবে ভোট কেন্দ্র সুরক্ষিত রাখতে বাইরে থাকবে সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে থাকবে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। আর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), কোস্টগার্ড ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল দেবেন। কিন্তু কেন্দ্রে প্রবেশে অনুমতি লাগবে রিটার্নিং বা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার। এছাড়া নির্বাচনের বিধিভঙ্গ, প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য, চরিত্রহনের অপচেষ্টা প্রতিরোধে মাঠে থাকবে নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা। ইসির কার্যপত্রের তথ্যানুযায়ী, এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সব মিলিয়ে প্রায় সাত লাখের কাছাকাছি মোতায়েন হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনী।

এসব বাহিনী ৩০০ সংসদীয় আসনের ৪০ হাজার ১৮০টি কেন্দ্র পাহারা ও ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৩ জন ভোটারের নির্বিঘ্নে ভোটদানে সহায়তা দিতে কাজ করবে।

ইসি সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে ১৩ ডিসেম্বর বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন। ওই বৈঠকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্রের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেবে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বিন্যাস পরিকল্পনায় খুব একটা বেশি পরিবর্তন নেই। তবে কেন্দ্র বাড়ায় ফোর্সের সংখ্যা বাড়বে। এ নির্বাচনে সব বাহিনী থাকবে; যার পরিকল্পনা নির্ধারণ হবে ১৩ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে।

কমিশনের যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ বেশি হলেও ভিআইপি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা-প্রশাসন শূন্য করে সব নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে এ কাজে যুক্ত করা যাবে না। বৈঠকে কীভাবে ফোর্স মোতায়েন হলে সব কুল বজায় থাকবে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে।

সূত্র মতে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোট গ্রহণের আগে ও পরে ভিন্ন মেয়াদের জন্য সেনা, র‌্যাব ও পুলিশসহ অন্য বাহিনী মোতায়েন করতে যাচ্ছে ইসি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ২৪ ডিসেম্বর মাঠে নামবেন। ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন। বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা স্ট্রাইকিং ও মোবাইল টিম হিসেবে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। ২৯ ডিসেম্বর ৩০০ আসনে সব মিলে ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামবেন। তারা ভোটের পর দুই দিনসহ সব মিলে চার দিন মাঠে থাকবেন।

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা : পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতি ভোটকেন্দ্রের পাহারায় থাকবেন ১৬ জন সদস্য। এর মধ্যে অস্ত্রসহ পুলিশ সদস্য তিনজন, অঙ্গীভূত আনসার ১২ জন ও একজন গ্রাম পুলিশ। এসব এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোয় পুলিশের সংখ্যা দুজন বাড়িয়ে ১৮ জন রাখা হবে। অপরদিকে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের ভোটকেন্দ্রগুলোয় একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৪ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে দুজন পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন সদস্য রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দুর্গম ও দ্বীপাঞ্চলের ভোট কেন্দ্রগুলোয় দুইজন অস্ত্রধারী পুলিশসহ ১৫ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য একজন বাড়িয়ে ১৬ জন মোতায়েন করা হবে।

ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে এবং ভোটের দিন ও ভোটের পরের দিনসহ চার দিন মাঠে থাকবেন। আর অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা ভোট গ্রহণের তিন দিন আগে মাঠে নেমে থাকবেন পরের দিন পর্যন্ত। তবে এবারো প্রথম নির্বাচনে গ্রাম পুলিশ (দফাদার ও চৌকিদার) সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় জানায়, দেশের ৪৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ১০ জন করে মোট ৪৫ লাখ গ্রাম পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের ভোট গ্রহণের আগের দিন ও ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় রাখা হবে। নোডাল পয়েন্টে থাকবেন

সেনা ও নৌ সদস্যরা : বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তায় ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় সারা দেশে সেনা সদস্য মোতায়েন করা হবে। তবে উপকূলবর্তী এলাকায় মোতায়েন থাকবে নৌ বাহিনীর সদস্যরা।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও একইভাবে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছিল ইসি। তবে ২০০৮ সালে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে সেনা মোতায়েন করা হয়।

ভোটারদের নিরাপত্তায় আরো যা থাকবে : ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভোটারদের যাতায়াতের পথ নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ ইউনিটগুলো নিবিড় টহল দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিবেশ যাতে সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনে মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করা হতে পারে। ভোটকেন্দ্রে ফল প্রকাশের পর তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিরাপদে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। দুর্গম এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের যাতায়াতে হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হবে। ভোটের দিন যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন:

আরও পড়ুন...