শ্রীমঙ্গলে নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাভ, নির্বিকার প্রশাসন

পিবিএ,মৌলভীবাজার: পরিবেশ ও জনস্বাস্থ‍্যের জন‍্য মারাত্মক হুমকি পলিথিনের সয়লাব শ্রীমঙ্গল। ব্যবহারে সাচ্ছন্দ্য ও সহজলভ্যতার কারনে শ্রীমঙ্গলের হাট বাজারে যত্রতত্র নিষিদ্ধ পলিথিন ছড়িয়ে পড়েছ। যার ফলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে শ্রীমঙ্গলের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে শ্রীমঙ্গলের এসব পলিথিন বাজারজাত করছে। আর সংশ্লিষ্টদের নজরদারী অভাবে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। দেশে প্রথম আশির দশকে শুরু হয় পলিথিনের ব্যবহার। কিন্তু বাংলাদেশে এমন একটা সময় ছিল যখন বাজারে গেলে মানুষজন হাতে করে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে যেতেন। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফা এবং স্বল্প মূল‍্য থাকায় বাজারে এর ব‍্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয় যার দরুন অসাধু ব‍্যাবসায়ীরা রীতিমতো এই ব‍্যাবসায় প্রসার ঘটিয়ে চলে।

পলিথিন এর ব‍্যাপক ব‍্যাবহার ১৫- ২০ বছরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে থাকে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে এর উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করে। সরকারী এ নিষেধাজ্ঞা পালনে শুরুর দিকে বেশ কড়াকড়ি হলেও ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে যায়।

পরিবেশবাদীরা শুরু থেকে পলিথিন এর ব্যাবহারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারা বলেছে মাটিতে পানি ও প্রাকৃতিক যে পুষ্টি উপাদান রয়েছ তার চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে এই দ্রব্য। যার ফলে মাটির গুনগত মান হ্রাস পায়। পরিবেশেবাদীদের দাবী ও পলিথিনের কারনে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যর প্রতি ক্ষতিকর প্রভাব নিরূপণ করে সরকার সারাদেশে পলিথিনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও যথাযত আইনী প্রয়োগের অভাবে কার্যত সে উদ্যোগ পুরোপুরি ভাবে ফল দিচ্ছে না

গত কয়েকদিন সরেজমিন শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট বড় সব বাজার, দোকান সহ অলিগলিতে অবস্থিত দোকান ঘুরে পরিবেশ দূষণকারী এই পলিথিনের যত্রতত্র ব্যবহার দেখতে পাওয়া গেছে । মাছ, সবজির দোকান থেকে হোটেল রেষ্টুরেন্ট, ফুটপাত থেকে বড় বড় সপিং মলে প্রকাশ্যে ব্যবহার হচ্ছে সরকার নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের পাইকারী কাচাঁমালের বাজার সেন্ট্রাল রোড, স্টেশন রোড, মৌলভীবাজার রোড এলাকা শ্রেণির অসাধু পাইকারী ব্যবসায়ীর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পলিথিন আমদানি ও বাজারজাত করছে। আর এসব পাইকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠাগুলো থকে নিষিদ্ধ পলিথিন গোটা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে। এদিকে ব্যবহৃত পলিথিন যত্রতত্র ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পলিথিন নালা নর্দমায় জমে রাস্তা ঘাটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। অপচঁনশীল হওয়ায় মাটি হারাচ্ছে উর্বরতা। আর পরিবেশের বিপর্যয় হওয়াতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ-ব্যাধিতে।

লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক প্রভাষক জলি পাল বলেন, পরিবেশ ও প্রাণীকুলের জন‍্য হুমকি থাকায় সরকার দেশে পলিথিনের বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে। কিন্তু কিছু মুনাফা লোভী ব‍্যাবসায়ীরা অধিক মুনাফার লোভে এটি জনগণের হাতে তুলে দিচ্ছে যা পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। এ ব‍্যাপারে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া অতীব জরুরী।

শ্রীমঙ্গল ব‍্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সদস‍্য অজয় দাশ বলেন, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ‍্যর জন‍্য ক্ষতিকর এই পলিথিন ব‍্যবহারেও সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ এই পলিথিন নিষিদ্ধই থাকা উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সমন্বয়ক আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, পলিথিন অপচনশীল দ্রব‍্য হওয়াতে এর ব‍্যাবহারে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে পাশাপাশি দেশের যত্রতত্র ব‍্যাবহার ও ফেলে দেওয়ার কারনে ড্রেনেজ ব‍্যাবস্থ নষ্ট হয়ে দীর্ঘ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে তাই আমরা চাই এর ব‍্যাবহার ও বিপণন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

এব্যপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিশুদ্ধ পরিবেশ বজায় রাখতে পলিথিন হুমকি স্বরূপ। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই অভিযান চালাবো। এর পাশাপাশি পলিথিন ব্যবহারের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হয় এনিয়ে জনসচেতনতা সৃস্টির উপর তিনি জোর দেন।

পিবিএ/মোঃ আহাদ মিয়া/এসডি

আরও পড়ুন...