আল-মামুন,খাগড়াছড়ি: গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দুজন শিক্ষক নিয়োগের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন’র বিরুদ্ধে।
এতে শুন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে অবৈধভাবে ২০১৫ সালে দীর্ঘ কয়েক বছর পূর্বের তারিখ দেখিয়ে সুলতানা ও ফরিদ নামের ২ জন সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অতছ সহকারী শিক্ষক পদে ২০১৯ সালে এ নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন। এতে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়,সহকারী শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর গুইমারা মডেল হাই স্কুলে কর্মরত ছিলেন। অথচ সহকারী শিক্ষক পদে তাকে ২০১৫ সালে হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে সুলতানা বেগম গুইমারা স্কুল,মাদ্রাসা ও শহীদ মুশফিক বিদ্যালয়ে ২০১৪ থেকে ২০১৯পর্যন্ত কর্মরত থাকলেও একই ভাবে ২০১৫ সালের নিয়োগ দেখানো হয়।
জনমনে প্রশ্ন উঠে একজন শিক্ষক একই সাথে দুটি প্রতিষ্ঠানই কি করে একই সময়ে কর্মরত ছিলেন এ দুজন শিক্ষক। এ ছাড়াও অভিযোগ উঠেছে এ স্কুলে অধিকহারে বেতন,অযৌক্তিক সেশন ফি ও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফরমপুরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন খাতের আয়কৃত টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, তার নিকট আত্মীয়দের টাকার বিনিময়ে কৌশলে শিক্ষক পদে নিয়োগও দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ও অনিয়ম বিষয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করলে সব বেরিয়ে আসবে। উক্ত প্রধান শিক্ষক মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়েছে দুইজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ স্থানীয়রা ক্ষুব্দ বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের বিষয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক ফরিদ উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে তিনি অর্থ আদায়ের সত্যতা শিকার করে তিনি বলেন, সব কিছু প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের ২জন সহকারী শিক্ষক বলেন, হঠাৎ করে ২জন শিক্ষক স্কুলে আসতে শুরু করলে আমরা অবাক হই। পরে প্রধান শিক্ষক রেজুলেশন নিয়ে আমাদের কাছে স্বাক্ষরের জন্য আসলে অনিয়মের কারনে আমরা তাতে স্বাক্ষর করিনি।
২নং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্কুল ম্যানিজিং কমিটির কার্যকরী সদস্য বলেন, এত বড় অবৈধ কাজ প্রধান শিক্ষক কি করে করলো আমার ভোদগম্য নয়। এমন শিক্ষকের কাছে আগামী প্রজন্ম কি শিক্ষার্জন করবে?
এলাকাবাসী ও অভিবাবকরা জানান, হাফছড়ি জুনিয়র হাই স্কুলের ফাউন্ডেশানহীন এ ছাদে টাওয়ারটি ভেঙ্গে পড়ে যে কোন সময় শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনায় মৃত্যুসহ ঝুঁকি থাকলেও মোবাইল টাওয়ারের নির্মানসহ মোট অঙ্কের টাকা মোবাইল কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে প্রতি বছর হাতিয়ে নিচ্ছে। এ নিয়েও রয়েছে বির্তক।
এ বিষয়ে হাফছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন অবৈধ ভাবে নিয়োগের বিষয় স্বীকার করে বলেন, নিয়োগের খরচের জন্য আমি ৫০ হাজার টাকা নিয়েছি। তবে এ সময় তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের কথা অস্বীকার করে বলেন, দুজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। ম্যানেজিং কমিটিসহ সকলকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এম.দুলাল আহম্মদ জানান, শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। হঠাৎ একদিন প্রধান শিক্ষক আমার নিকট রেজুলেশন বইটি নিয়ে আসে আমি ব্যস্ত থাকার কারণে কিছু না দেখে ওনাকে বিশ্বাস করে স্বাক্ষর করেছি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানতে পারি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাইথোয়াই চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টা আমি কিছুটা জানি, প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেছে। এ বিষয়ে স্কুলের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও স্বার্থের জন্য কিছু টাকা নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়টির অনিয়ম প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রহমান আনম মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, তবে বিস্তারিত অবগত নই। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
পিবিএ/হক