
আরিফ মোল্ল্যা,কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ): ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার। কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের মোঃ হযরত আলীর ছেলে সাকাওয়াত হোসেন নামের এক ব্যাক্তি দীর্ঘদিন ধরে এই পানির ব্যবসা করে যাচ্ছেন। অবাধে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন কারখানার জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার নামের বিশুদ্ধ পানি। এ ধরনের কারখানা নির্মাণে মানা হয়নি কোনো রকমের বিধিমালা। এসব কারখানা নির্মাণে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতার সনদ, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কল-কারখানার সনদের বিধান থাকলেও এর একটিরও কোন অস্তিত্ব নেই। কারখানায় নিজস্ব ল্যাব বা কেমিস্ট নেই।
এসব বিধিবিধান অমান্য করেই বারবাজার, মান্দারতলা, সূবর্ণসারা, সাতমাইল, চুরামনকাঠিসহ বিভিন্ন বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার।
সরেজমিনে রোববার (৯ মার্চ) গিয়ে দেখা যায় পরিত্যাক্ত একটি রান্না ঘরে গড়ে উঠেছে জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার তার পাশেই আছে গোসলখানা ও প্রস্বাব করার জায়গা।। পরিত্যক্ত যে ঘরে বিশুদ্ধ পানি তৈরি করা হয় সেই ঘরে রয়েছে বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব পরিত্যাক্ত ঘরটির উপরের অর্ধেকটাতে ভাঙাচোর টিন ও অর্ধেকটাতে ভাঙাচোরা টালি। নিচের মেজেতে অনেক পুরাতন সিমেন্ট বালুর প্লাস্টার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীতের সময় প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০টি পানির জার বিক্রি হয় এবং গরমের সময় প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টি পানির জার বিক্রি করে থাকেন। বিভিন্ন বাজারে নসিমনে করে এই পানি বিক্রি করে থাকেন।
বছর খানেক ধরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতার সনদ, পরিবেশগত ছাড়পত্র ও কল-কারখানার সনদ ছাড়াই পানি উৎপাদন আর বিপণন কাজ চালিয়ে আসছে তারা। অবৈধভাবে পরিচালিত জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার কোম্পানি ২০ লিটার পানির প্রতিটি জার বোতল ৪০ থেকে ৫০টাকা দরে বিক্রি হলেও গরম মৌসুমে এ পানি কোম্পানির দৈনিক বিক্রি প্রাায় ২৫০ থেকে তিন শতাধিক বোতল। তবে এর ক্ষতিকর দিকগুলো না জেনে বিশ্বাস করে এবং প্রয়োজনের তাগিদে পানিগুলো ব্যবহার হচ্ছে এইসব বাজারের বিভিন্ন ব্যাংক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দফতরে।
তবে জারের মুখ বেশিদিন খোলা থাকলে পানিতে মশা ডিম পাড়াসহ জন্ম নিতে পারে নানা ধরনের পোকা, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস। পানিতে সৃষ্টি হতে পারে দুর্গন্ধও। তবে এ কাজে নিয়োজিত দুইজন শ্রমিক তাদের নেই কোন গ্লাভস ও শরীরে অ্যাপ্রোন। পায়ে থাকেনা স্যান্ডেল। যা পানি ফ্যাক্টরি নীতিমালাবর্হিভূত। বোতল পরিষ্কার বা ধোয়ার কাজে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে পানি।
জেরিন প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার তৈরির কোন বৈধ কাগজ আছেকিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সব আছে তবে দেখানো যাবেনা। ক্যামেরায় বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান জেরিন প্যাকেজিড ড্রিংকিং এর মালিক সাকাওয়াত হোসেন।
তিনি দাবি করেন, তাদের পরিচালিত কারখানার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দফতরে আবেদন করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তা নিশাত মেহের বলেন কোন ভাবেই নোংরা পরিবেশে ড্রিংকিং ওয়াটার তৈরি হতে পারেনা । আমরা অভিযুক্ত জাযগায় যাবো এবং পরিবেশ খারাপ দেখলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো
বিএসটিআই সহকারী পরিচালক (সিএম) কুষ্টিয়া দেবব্রত বিশ^াস বলেন, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ড্রিংকিং ওয়াটারের কোন অনুমোদন নাই। অতি শিঘ্রই আমরা এইসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ কর্মকর্তা মুনতাসিরুল রহমান বলেন সকল কাগজপত্র না থাকলে তিনি কোন ভাবেই ড্রিংকিং ওয়াটার প্লান্ট করতে পারবেন না। বিষয়টি আমরা দেখবো।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডাঃ রেজাউল ইসলাম বলেন, নোংরা পরিবেশের পনি পান করলে পানিবাহিত সকল রোগ হতে পারে। আমি বিষয়টি দেখবো ।
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম জানান, এমন কোন বিষয় আমার জানা নেই আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।