নোয়াখালীর চরজুবলী উপেজলার আতঙ্কের নাম রুহুল আমিন

পিবিএ,নোয়াখালী: রুহুল আমিন নোয়াখালীর চরজুবলীর একটি আতঙ্কের নাম। মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, বনায়নের গাছ লুট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সকল কাজের সকল ক্ষেত্রেই তার নাম। তিনি ২০১১ সালের চরজুবলী ইউপিকে ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হয়। জন প্রতিনিধি হয়েই অপরাধের জাল ছড়াতে থাকে আরও বেশী। হয়ে উঠে এলাকার ত্রাস। তার ভয়ে অপরাধের প্রতিবাদ করার সাহস কারই ছিল না। বনদস্যু ও জলদস্যু দিয়ে ধীরে ধীরে গড়ে তুলে নিজস্ব বাহিনী। মাদক, দখল, কুকর্ম, বাহিনী দিয়ে অনবরত অন্যায়ের রাজত্ব কায়েম করতে থাকে। সে ও তার অঘোষিত বাহিনী এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পায়।

এব্যাপারে চরজুবলী এক ইউপি সদস্য ও নোয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম ইউসুফ বলেন, রুহুল আমিনের নির্দেশে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। রুহুল আমিন এলাকার যুবকদের সংঘঠিত করে মাদক ব্যবসা, সরকারি ভূমি দখল, সবুজ বনায়নের গাছ কাটা, চাঁদাবাজি, বিবাহ বিচ্ছেদের সালিশে জামানত নিয়ে ওই জামানতের টাকা ফেরত না দেওয়াসহ নানা রকম অপরাধ মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। গত মাসে কিছু গাছ কেটে রাস্তার পাশে ফেলে রাখার পর, আমরা গাছের গুড়িগুলি জব্দ করে নিলামে বিক্রি করে রাজস্বখাতে জমা দেই।
তার পারিবারিক পরিচয় নিয়ে দেখা যায়, তার বাবা খুরশিদ আলম ছিলেন তুখোড় লাঠিয়াল। ধাঙ্গা-হাঙ্গামা ছিল প্রিয়। তাই ১৯৮০ সালে বেচু মিয়া হত্যার মামলার প্রধান আসামির তালিকায় নাম উঠে। এ সময় পরিবার আর্থিক অনটনে পড়লে হারিছ চৌধুরী বাজারে হোটেলে বয়ের কাজ নেয় রুহুল আমিন। তখন নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তার। হয়ে যায় ভূমিহীন। বয়ের কাজ ছেড়ে কিছুদিন পর স্থানীয় মোবারক মিয়ার বাসায় কাজ শুরু করে। মালিকের দয়ায় নোয়াখালী ইউপি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে সে।

তারপরে, এসএসসি পাস করে রুহুল পাংখার বাজারে সততা নামের এনজিওতে চাকরি নেয়। কয়েকদিন পর এনজিওর ৭০ হাজার টাকা আত্মসাত করে সে। অপরাধের হাতেখড়ি শুরু এখান থেকেই। পরে ঢাকার কাওরান বাজারে পাইকারি সবজি দোকানে কাজ করার সময় আরো টাকা আত্মসাত করে। আত্মগোপনে চলে যায় বরিশালে। পরে পুরাতন কর্মস্থলের মালিক মোবারকের সুবাদে তার ছোট ভাই অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান নাছেরের সহায়তায় জেলা জজকোর্টে আইনজীবী সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। এর পর প্রভাব খাটানো পথ পায় সে। আইনের বুলি দিয়ে এলাকার লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে সে। উপজেলার পাংখার বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে রুহুল আমিন নগর। সেখানে দেখা যায় তার বিলাসবহুল বাড়ি।

প্রতিবেশী সামছুন্নাহার ও শিল্পি বলেন, রুহুল বাহিনীর ভয়ে সবসময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন সবাই। ঘর থেকে বের হলেই আতঙ্ক কাজ করে। গত ইউপি নির্বাচনে ফেল করায় সবাই তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।

সিদ্দিক মিয়া বলেন, সরকারি জমির উপর রয়েছে রুহুল আমিন নগর। সেখানে দোকান বানিয়ে দোকান বিক্রি করেছে রুহুল আমিন। সড়কের সবুজ বনায়নের বড় গাছগুলো বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সে। একরাম নগরে বিভিন্ন মৎস প্রকল্প এবং সড়কের পাশে খাস জমির দখল দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়া তার কাছে সহজ বিষয়। গত বছর আমিন উল্যা ভুলু, আবদুল হক ও দুলাল মিয়ার প্রায় ৩ একর জমি দখলে নিয়ে ব্রিকফিল্ড চালু করেছে রুহুল। এছাড়াও এলাকায় নামে- বেনামে ১০ একর জমি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এলাকার জমি কেনা-বেচা করতে হলে রুহুল বাহিনীর সদস্য হাসান আলী রুলু, জসীম, সাহাবুদ্দিন, দুলাল, তাজল, জনু মাঝি, ফারুক মাঝি ও নূর মোহাম্মদ ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। ভূমিহীনদের খাস জমি ক্রয়-বিক্রয়ে তাদের চাঁদা দিতে হয়। না হলে বেচা-কেনা বন্ধ।

স্থানীয় শাহজাহান বলেন, রুহুল একটি মাদক চক্র নিয়ন্ত্রণ করত। স্বপন, সোহাগ ও সোহেল ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করত। তাদের মাদক সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে আবদুর রবের ছেলে হোসেন ড্রাইভার। এক বছর আগে পুলিশ হোসেনের ভাই আমিন ব্যাপারীকে ইয়াবাসহ আটক করে। বর্তমানে আমিন ব্যাপারী জামিনে রয়েছে।

সিএনজি চালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রুহুল আমিন মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ঘরে মাদক পৌঁছে দিয়েছে। সন্ধ্যায় মাদক সেবীদের উৎপাত দেখা যায়। ২০০১ সালে চর ব্যাগ্যা গ্রামের জয়নাল আবেদিন আমার কাছে ৬৫ শতাংশ জমি বিক্রয় করেন। ২০১৪ সালে রুহুল আমিন সে জমির উপর জয়নালের ছেলে জসীমকে ঘর তৈরি করে দেয়। এ সময় ২০১৬ সালে সালিশের নামে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জমা নিয়ে ঘর ভেঙ্গে দেয়। সে সেই টাকা আত্মসাত করে। এলাকার চোরদের নিরাপদ আশ্রয় রুহুল আমিন। মানুষকে বিপদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়া তার স্বাভাবিক কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

এব্যাপারে চরজব্বর থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, রুহুল আমিনের মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, চাঁদাবাজি, বনায়নের গাছ লুট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ আগে কখনো পায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিবিএ/এমআই/এসআই

আরও পড়ুন...