নড়াইলে মালটা চাষে নারী চাষীরা সফলতার স্বপ্ন দেখছেন

পিবিএ,নড়াইল: পাঁচ একর জমিতে মাল্টার চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন লোহাগড়ার নারী চাষী আফরোজা আক্তার। ইতিমধ্যে বাগান জুড়ে মাল্টা গাছে ফল এসেছে। আর মাত্র দেড় মাস পরেই পরিপক্ক মাল্টা বাজারজাত করতে পারবেন। এ বছর প্রথম গাছে ফল এসেছে। চার লক্ষাধিক টাকার মালটা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। আফরোজা আক্তারের স্বামী লাবলু সিকদার সৌদি প্রবাসী । মাউলি ইউনিয়নের বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে পাশ্ববর্তী লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের লুটিয়া গ্রামে তাদের নিজস্ব জমিতে আড়াই বছর আগে শুরু করেন মাল্টার বাগান।

চাষী আফরোজা আক্তার জানান, তার স্বামী অনুপ্রেরণায় মালটা চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ইউটিউবসহ ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাল্টা চাষ সম্পর্কে ধারণা নেন। এক পর্যায়ে ভাল চারা কোথায় পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। চারার ব্যাপারে যোগাযোগ হয় ময়মনসিংহ জেলার একটি নার্সারীতে। সেখান থেকে ১৩শ চারা এনে জমিতে শ্রমিক দিয়ে লাগান ।
নিবিড় পরিচর্যা আর যত্নে চারাগুলি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। এক পর্যায়ে এ বছর গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর এক হাজার গাছে কম-বেশি ফল এসেছে। গাছ ভেদে ২০ থেকে ৫০টি পর্যন্ত ফল ধরেছে। প্রথম বছর তুলনামুলকভাবে ফল কম ধরলেও সব মিলিয়ে প্রথম বছরে চার লক্ষাধিক টাকার মাল্টা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
তিনি আরো বলেন, মাল্টা গাছে মাঝে মধ্যে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। তবে এ ব্যাপারে ইউটিউবের পাশাপাশি লোহাগড়া উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করে তা দমন করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় মাল্টা বাগানে সঠিকভাবে পরিচর্যা ও ফলন ভাল হলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারবো। তবে মাল্টা বাজারজাত নিয়ে দুর্ভাবনায় আছি।
এদিকে মাল্টা চাষের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় কৃষকদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চাষীরাই মাল্টার বাগান দেখতে ভীড় করছে এবং চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। আগামীতে মাল্টা চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় একাধিক চাষী। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন পেশার লোকজন মাল্টা বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন এবং নতুন বাগান তৈরির আগ্রহ দেখিয়েছেন।
দিঘলিয়ার ফরিদ মেম্বর বলেন, খবর শোনার পর আমি বাগানটি পরিদর্শনে যাই। সেখান থেকে কাঁচা অবস্থায় মাল্টা রস করে খেয়েছি। স্বাদ খুব ভাল। একজন নারী চাষী সাহস নিয়ে এতো বড় বাগান গড়ে তুলেছে দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছি।
লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ^াস বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধায়নে চাষী আফরোজা প্রায় ৫ একর জমিতে মাল্টার চাষ করেছে। আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আশা করি এ বছর প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করা সম্ভব হয়। পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে নড়াইলের চাহিদার পাশাপাশি যশোর ও গোপালগঞ্জ জেলার চাহিদার কিছুটা হলেও পূরণ করতে সক্ষম হবে। কৃষাণী আফরোজা আক্তারের মাল্টা বাগান তৈরির পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। আজ এক হাজার গাছে মাল্টা ধরেছে। উদ্যোক্ত আফরোজা আক্তারের যে পদক্ষেপ এবং কৃষি বিভাগের যে যোগসূত্র আশা করি আগামীতে মাল্টা চাষ সম্প্রসারণে এলাকার কৃসকরা এগিয়ে আসবে।

পিবিএ/শরিফুল ইসলাম/এসডি

আরও পড়ুন...