পিবিএ,পঞ্চগড় প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে ভিক্ষুক পূর্নবাসন ও বিকল্প কার্যক্রমের উদ্ধোধন করা হয়েছে। রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো.সাবেত আলী এ উদ্ধোধন করেন।
এসময় সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার লায়লা আরজুমানের সঞ্চালনায় ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক অনিরুদ্ধ কুমার রায়, হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইয়েদ নুর ই আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ সাবেত আলী নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউওনো) থাকার সময় এক অভিজ্ঞতা বিনিময় করে তিনি বলেন, মিজান নামে এক প্রতিবন্ধী আমার অফিসের সামনে দাড়িয়ে ছিলো আমি ডেকে বললাম কি খবর তোমার কি করো তুমি সে বললো আমিতো রিকশা চালাই স্যার। তুমি কিভাবে রিকসা চালাও তুমি তো শারীরিক প্রতিবন্ধী। মিজান বলে জীবনের তাগিদে আমি রিকশা চালাই। আমার শারীরিক অবস্থা দেখে কেউ রিকশায় উঠতে চায়না। আমার আয়-রোজগার নাই স্যার আপনি যে দু’শ টাকা দেন সেই টাকা দিয়ে চাল, ডাল নিয়ে বাড়ি যাই। তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি করতে চাও তুমি। মিজান বলে উঠলো মোক একখান দোকান করে দেও মুই দোকানদারি করিবা পারিম। আমি উদ্যোগ নিলাম উপজেলা মাসিক মিটিং এ চেয়ারম্যান দের জানালাম তারা সবাই সহযোগিতা করলো আমিও কিছু টাকা দিয়ে মালামাল কিনে একটা দোকান করে দেই। ৪ মাস পর দেখতে গেলাম মিজানকে দেখলাম সে খুব ভালোভাবে দোকান চালাচ্ছে।
পরবর্তীতে ৮-৯ মাস পর সে আমার কাছে আসে। বললাম তাকে তোমার কি খবর মিজান বললো দোকান তো ভালো চলছে স্যার মুই কিছু টাকা জমাইছু গরু কিনিবা চাহেচু আরওহ কিছু টাকা লাগিবে মোক। ভালো খবর কয় টাকা জমাইছিত, মুই স্যার ৫-৬ হাজার টাকা আছে মোরঠে। তোর এই টাকায় তো গরু পাওয়া যাবানাহে।পরে মিজান বলে মোক একটা গরু কিনে দিবা লাগিবেই। কি আর করার আরও কিছু টাকা জোগাড় করে একটা গরু কিনে দেওয়া হলো। কিছুদিন পর তার গরুর বাছুর হলো। তার জীবন ঘুরে দাঁড়ালো। একদিকে দোকানে কেনা বেচা ভালো হচ্ছে আবার গরুর দুধও বিক্রি করে সংসার তার ভালোই চলছে। একদিন হঠাৎ করেই তার গাভী গরুর দুধ নিয়ে হাজির আমার কাছে। স্যার মোর গরু দুধ দেছে মুই তোমহার তানে দুধ নিয়ে আইচ্চু। যাক সব মিলিয়ে পরিবারটির সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। তাই আমাদের নিজেদের মধ্যে থেকে এই আগ্রহ থাকতে হবে। সহযোগিতা আমাদের পক্ষ থেকে আপনারা পাবেন, যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ আমাদের কাছে রয়েছে। প্রকৃতভাবে এ ধরনের মানুষ খুজে পেলে আপনারা আমাদের জানাবেন আমরা তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিব।
জানা যায়, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পূর্নবাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় তিনজন ভিক্ষুককে অটোভ্যান,একজনকে মুদি দোকান, চারজন প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার, হাড়িভাসা বাজারের ময়লা বহনের জন্য দুটি ট্রলি, দূর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অসহায় দুস্থ্য শতাধিক মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ, ইউনিয়ন বিএনপি ও জামায়াতের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ ও উপকারভোগীরা।