ইনসান সাগরেদ,পঞ্চগড় থেকে : পঞ্চগড়ে ইট ভাটাগুলি গিলে খাচ্ছে ফসলের মাঠ ব্যাহত হচ্ছে কৃষি পণ্য উৎপাদন।ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।পঞ্চগড়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে প্রায় অর্ধশতাধিক ইট ভাটা। আর এসব ইট ভাটায় ইট তৈরির জন্য নির্বিচারে কাটা হচ্ছে ফসলী জমির উপরিভাগের মাটি। এতে করে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি।দিন দিন কমছে কৃষি পণ্য উৎপাদন ক্ষমতা। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লোকালয়ে ইট ভাটাসমূহ গড়ে উঠায় পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।পঞ্চগড়ে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক ইট ভাটার জন্য প্রতিদিন প্রায় ২০টিরও বেশি এক্সকেভেটর দিয়ে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল)। আর এসব মাটি পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে ১০০ শ এর অধিক ট্রাক্টর। ফসলী জমি থেকে অবাধে মাটি কেটে নেয়ায় এসব জমি যেমন উর্বরতা হারাচ্ছে তেমনি হচ্ছে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি। ফসলী জমির পাশে ইট ভাটা গড়ে তোলায় ফসল উৎপাদন কমে এসেছে। এছাড়া এলাকায় বিবর্ণ হয়ে পড়েছে গাছের পাতা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি ভাটা গড়ে ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আর এ ভাবেই পরিবেশের ছাড়পত্র না নিয়েই তারা ইট তৈরি করে বাজারজাত করছে বছরের পর বছর ধরে। ফসলী জমির পাশে ইট ভাটা থাকায় তাপ ও ধুলো-ময়লায় বোরোসহ অন্যান্য আবাদের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয় চাষীরা।সারাদিনই ইটের ধুলো, ধোঁয়া, ময়লার কারণে চোখে জালাপোড়াসহ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে বলে জানান ভাটা সংশ্লিষ্ট এলাকায় থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ফেলায় জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুবোধ চন্দ্র রায় বলছেন, ইট ভাটায় ফসলী জমির মাটি, চাষীরা যাতে ভাটা মালিকদের কাছে বিক্রি না করে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ভাবে উদ্বুদ্ধ ও সচেতনাতো মূলক কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলী বলেন জেলায় ৫১ টি ইট ভাটার মধ্যে ১০টি ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে।
এবছর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৪ টি ইটভাটা মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। দুটো ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে এবং পাঁচটি ইট ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে পরিদর্শন প্রতিবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র পরিবেশ অধিদপ্তর সদর দপ্তর ঢাকা মনিটরিং ইমফোর্স মেন্ট শাখায় প্রেরণ করা হয়েছে। হালনাগাদ ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে ভবিষ্যতেও থাকবে বলে তিনি জানান।অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে পঞ্চগড় বাপা’র সভাপতি ও পঞ্চগড় জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবি আবুল খায়ের মোঃ আনোয়ারুল বলেন, ইট ভাটা গুলোর মধ্যে শুধুমাত্র দুটির বিরুদ্ধে মামলা কেন, সবগুলোর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। পঞ্চগড় জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে তিনটিতে (আটোয়ারী, বোদা ও দেবীগঞ্জে) মোট ৫১টি ইট ভাটা থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে মাত্র ১০টির।