বিদ্যালয়ের টয়লেটের সেফটি ট্যাংক থেকে অজ্ঞাত মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার- ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। গ্রেফতারকৃত স্বামী হলেন দাউদ মোড়লের ছেলে মো জাহাঙ্গীর মোড়ল(৪২)। যশোর জেলার পিবিআই পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন এর নেতৃত্ত্বে এসআই(নিঃ) গোলাম আলী, এসআই (নিঃ)/ শরীফ এনামুল হক সহ যশোর জেলার চৌকস দল গত শুক্রবার ১৪ জানুয়ারি রাত ৪ টার দিকে সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার জালালপুর ইউনিয়ন এর কানাইদিয়া রথখোলা বাজার এলাকা থেকে অভিযুক্ত ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়।
গত ১৩ জানুয়ারি দুপুর ২ টা ১০ মিনিটের দিকে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার নরেন্দ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটের ট্যাংকির মধ্য থেকে একজন অজ্ঞাত মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। সংবাদ প্রাপ্তির পর পিবিআই যশোর জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে তাৎক্ষণিক মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ পূর্বক তার পরিচয় সনাক্ত করে মৃতদেহের নাম ফাহিমা বেগম, পিং-মৃত আনছার আলী, সাং-চরগ্রাম, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলের আশেপাশের লোকজনদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় নরেন্দ্রপুর সাকিনস্থ দফাদার ইট ভাটার শ্রমিক জাহাঙ্গীর মোড়ল ও তার স্ত্রী ফাহিমা বেগমদ্বয়কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পরবর্তীতে পিবিআই যশোর টিম কর্তৃক সাতক্ষীরা জেলার তালা থানায় যোগাযোগ করে ফাহিমা এবং জাহাঙ্গীর মোড়ল নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি সংগ্রহ করে তাদের পরিবারের সদস্যদের সহিত যোগাযোগ করে তাদেরকে যশোরে আনা হয় এবং তারা অজ্ঞাতনামা মৃতদেহটি ফাহিমা বেগম এর বলে সনাক্ত করে। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং প্রকৃত আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে পিবিআই যশোর জেলার চৌকস দল ছায়া তদন্ত করাকালীন তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশি অভিযান চালিয়ে হত্যাকারী নিহতের স্বামী অভিযুক্ত মো. জাহাঙ্গীর মোড়লকে গ্রেফতার করা হয়।
হত্যাকান্ড সংক্রান্তে নিহতের ভাই শরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে যশোর কোতায়ালী মডেল থানার মামলাট উক্ত মামলাটি পিবিআই, যশোর জেলা স্ব-উদ্দ্যোগে গ্রহণ করে মামলার তদন্তভার এসআই (নিঃ) গোলাম আলী এর উপর অর্পণ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রায় ২১ বছর পূর্বে জাহাঙ্গীর মোড়ল এর সহিত ফাহিমা বেগমের ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি কন্যা সন্তান মরিয়ম (১৮) এবং মুসফিকা (১১) জন্ম গ্রহণ করে। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল ও তার স্ত্রী ফাহিমা বেগম যশোর জেলা সহ বিভিন্ন জেলায় ইটের ভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ইটের ভাটায় কাজ করার সময় ফাহিমা বেগম অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়লকে কাশের ঔষধের সাথে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে বিভিন্ন লোকের সাথে অবৈধ মেলামেশা করতো। একপর্যায়ে ফাহিমা বেগমের অপরের সাথে অবৈধ মেলামেশা অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল নিজ চোখে দেখে ফেলে। অভিযুক্ত বারবার তার স্ত্রী ফাহিমা বেগমকে এই খারাপ কাজ ছেড়ে দিতে বললেও সে তার কথা শুনে না।
পরবর্তীতে গত ১৫ ডিসেম্বর গ্রামে ধানের কাজ শেষ করে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল এবং তার স্ত্রী ফাহিমা বেগম সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে নিজ বাড়ী থেকে বের হয়ে অভিযুক্তের শশুর বাড়ী চরগ্রাম যায়। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৩ টা হতে বিকাল ৪ টা সময়ে তালা ব্রীজ পার হয়ে ইজি বাইক স্ট্যান্ড হতে তারা ইজি বাইকে করে চুকনগর আসে। চুকনগর থেকে বাসে টিকিট কেটে যশোরে ইট ভাটার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে চিনাটোলা বাজার থেকে একটু সামনে বাস নষ্ট হয়ে গেলে তারা ইজি বাইকে করে মনিরামপুর থানার পাশে যায়।
মনিরামপুর থানার সামনের ক্লিনিকে ফাহিমা বেগম বাথরুমে যায়। সেখান থেকে বের হয়ে তারা মাছের আড়ৎ পার হয়ে মন্দিরের সামনে থেকে ইজিবাইকে করে নরেন্দ্রপুর মোড়ে এসে নামে। তারপর সেখানে ইজিবাইক বা ভ্যান না পাওয়ায় অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল ও তার স্ত্রী ফাহিমা বেগম পায়ে হেটে ইট ভাটার উদ্দেশ্যে রওনা করে এবং চলতি পথে তাদের ব্যক্তিগত ও সাংসারিক বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া চলতে থাকে। নরেন্দ্রপুর হাই স্কুলের কাছাকাছি আসলে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল তার স্ত্রী ফাহিমা বেগমকে তার স্বভাব-চরিত্র ভালো করতে বলে। তখন ফাহিমা বেগম জাহাঙ্গীর মোড়লের সহিত খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি বেধে যায় এবং ফাহিমা বেগম জাহাঙ্গীর মোড়লকে রেখে সামনে হাটতে থাকে। তখন জাহাঙ্গীর মোড়ল পেছন থেকে রাস্তার পাশে পাওয়া বাঁশ উঠিয়ে ফাহিমা বেগম এর মাথার পেছনে জোরে আঘাত করলে ফাহিমা বেগম উপুড় হয়ে পিচের রাস্তার পাশে পড়ে যায়। ফাহিমা বেগম পড়ে গেলে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল ফাহিমা বেগম এর পরিহিত ওড়না ভিকটিমের গলায় পেঁচিয়ে শক্ত করে ধরে রাখে। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেলে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়ল ফাহিমা বেগম এর মৃতদেহ ওড়না দিয়ে টেনে স্কুলের বাইরে কাচাঁ রাস্তার পাশে বাথরুমের টেংকির কাছে নিয়ে যায়। টেংকির ঢাকনা ঊঠিয়ে ফাহিমা বেগম এর মৃতদেহ টেংকির মধ্যে ফেলে দিয়ে টেংকির মুখে ঢাকনা দিয়ে দেয় মর্মে স্বীকার করে। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মোড়লকে গত শুক্রবার ১৪ জানুয়ারি মাহাদী হাসান, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৪র্থ আদালত, যশোর আদালতে সোপর্দ করলে অভিযুক্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। দী হাসান, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৪র্থ আদালত, যশোর আদালতে সোপর্দ করলে সে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যহত রয়েছে।