পিবিএ ডেস্ক : নির্বাক একটা ছবি। নিছকই একটা চুম্বন দৃশ্য। কিন্তু শুধু কি তাই! গোটা পৃথিবীর হয়ে শান্তি ঘোষণা করা সেই ছবি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী দুনিয়া ভুলতে পারেনি আর। গত রবিবার শেষ হয়ে গেল সেই মুহূর্তকথা। ছবির নায়িকা গ্রেটা ফ্রিডম্যান পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন আগেই। এবার নাবিক-নায়ক জর্জ মেন্ডোসাও। রবিবার ৯৫ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জর্জ। জন্মদিনের মাত্র দু’দিন আগেই তার দেহত্যাগ ঘটলো।
১৯৪৫ সালের ১৪ অগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করল জাপান। শেষ হল সর্বক্ষয়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধশেষের খবর ছড়াতেই মানুষের ঢল নেমেছিল রাস্তায়। হাজার হাজার যুদ্ধক্লান্ত নিউ ইয়র্কবাসীর মধ্যে সেদিন মিশেছিলেন জর্জ-গ্রেটাও। জয়ের আনন্দে ভাসা শহরে হঠাৎই কাছাকাছি এসে পড়েন নাবিক জর্জ ও পেশায় নার্স গ্রেটা। দু’জনেই তখন বয়সে একুশ। শান্তির আনন্দ, আবেগ, উচ্ছ্বাস মিলেমিশে সেদিন একটা মুহূর্তের জন্ম হয়েছিল। নার্সের সাদা পোশাক মিশে গিয়েছিল নাবিকের কালো ওভারকোর্টে। জয়ের আনন্দে আত্মহারা জর্জ অপরিচিতা গ্রেটার কোমর জড়িয়ে গভীর আশ্লেষে চুম্বন এঁকে দিয়েছিলেন তার ঠোঁটে।
নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন চিত্রসাংবাদিক আলফ্রেড আইজেনস্টাট। কিছুদিন পরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জনপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই ছবি। গ্রেটা ওই ছবিটি দেখেন তারও প্রায় ১৫ বছর পরে। ১৯৬০ সালে আলফ্রেডের তোলা ছবির একটি সংকলনে। পরে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সেদিন শুধুমাত্র আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ছিল অপরিকল্পিত ওই চুম্বন। জর্জও জানান, দাঁতের চিকিৎসকের সহকারী গ্রেটাকে সেদিন জর্জ চুমু খেয়েছিলেন কিছু না জেনেশুনেই। রক্তক্ষয়ী বিশ্বযুদ্ধ শেষের আনন্দে কিছুটা মদ্যপানও করেছিলেন সেদিন। সব মিলিয়ে ঘটে যায় ঘটনাটা।
সেদিন টাইমস স্কোয়ারে হাজির ছিলেন জর্জের প্রেমিকা রিটা পেট্রিও। পেশায় তিনিও ছিলেন নার্স। পরে রিটাকেই বিয়ে করেন জর্জ। বিখ্যাত ওই চুমু নিয়ে নাকি জর্জের সঙ্গে রীতিমতো মশকরা করতেন তিনি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত পৃথিবী জানতই না, ছবির নায়ক-নায়িকার পরিচয়। ছবিটি বিখ্যাত হওয়ার পরে অন্তত ১১ জন দাবি করেন, তারাই ওই ছবির নাবিক। অন্তত তিন জন মহিলা দাবি করেছিলেন তারাই ছবির চুম্বনরত ওই মহিলা। ২০১২ সালে লরেন্স ভেরিয়া-র লেখা ‘দ্য কিসিং সেলর: দ্য মিস্ট্রি বিহাইন্ড দ্য ফটো দ্যাট এন্ডেড ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’ বইয়ে মেলে জর্জ ও গ্রেটার যাবতীয় তথ্য। লেখক জানান, প্রযুক্তির সাহায্যেই ওই নায়ক-নায়িকার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিলেন তিনি।
বছর তিনেক আগে মারা যান গ্রেটা। এবার চলে গেলেন জর্জও। রয়ে গেল সেই ছবি। রয়ে গেল নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে তাদের মূর্তি ‘আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার’ (নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ)। আর রয়ে গেল শান্তির আন্তর্জাতিক বার্তাটুকু।
পিবিএ/জিজি