পিবিএ,ঢাকা: নতুন গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এছাড়া সৃষ্টি করা হচ্ছে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ। নতুন গ্রেড অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক পাবেন ১২তম গ্রেডে বেতন, আর প্রধান শিক্ষক পাবেন দশম গ্রেডে। ১১তম গ্রেড পাবেন সহকারী প্রধান শিক্ষকরা। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত বিধিমালা রোববার রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করেছেন। শিগগিরই তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে যাচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শুধু শিক্ষকরাই নন জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতন ধাপও সংশোধন করা হচ্ছে। সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতনের ধাপ নবম থেকে সপ্তম গ্রেডে উন্নীত করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনস্কেল বৈষম্য দূরীকরণের সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কয়েক দফায় শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকও হয়। এরপরই এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।
জানা গেছে, গত দুই মাস আগে এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। শিক্ষক-কর্মকর্তারা যোগদানের পরই উল্লিখিত গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে যোগদানের পর শিক্ষকরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে তাদের গ্রেড পরিবর্তন না করে বাড়তি ভাতা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ পিবিএ’কে বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নতুন গ্রেডে অন্তর্ভুক্ত করতে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড, প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড, সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ৯তম গ্রেড ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের ৭ম গ্রেডে উন্নীত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
‘এরই ধারাবাহিকতায় সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদেও বর্তমান গ্রেড পরিবর্তন আনা হবে। তবে এ দুই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। নতুন পদ হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে’,- যোগ করেন তিনি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, একটি স্তরে গ্রেড পরিবর্তন করতে হলে আগে-পরে অন্য পদগুলোরও গ্রেড পরিবর্তন করতে হয়। এটি একটি চেইন সিস্টেম, সেই অনুযায়ী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে সংশোধিত নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তাই আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি নিয়ে শিক্ষকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে উল্লেখ করে গিয়াস উদ্দিন আহমেদ পিবিএ’কে বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে আপত্তি রয়েছে, তাই পদ সৃজনের কার্যক্রম চূড়ান্ত করার আগে শিক্ষকদের সঙ্গে আবারও আলোচনা করা হবে। যদি তারা আপত্তি জানান তবে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পাশাপাশি বিদ্যালয়ে নতুন পদ হিসেবে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পদ সৃষ্টি হলে সারাদেশে প্রায় ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।
বিধিমালার গেজেট প্রকাশের পরপরই এ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে এর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে আরও ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আসছে। ১৭ হাজার শিক্ষকের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার ও অন্য স্তরে সহকারী শিক্ষক পদে ৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে (ডিপিই) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে আগামী সপ্তাহে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাজস্ব খাতে ১২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিতে গত বছরের জুনে ‘সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮’ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। তখন ২৪ লাখের বেশি প্রার্থী আবেদন করে। আবেদনকারী বেশি হওয়ায় নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে বিপাকে পড়ে মন্ত্রণালয়। এরপরও আগামী ১৫ মার্চ থেকে ধাপে ধাপে লিখিত পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু আগামী ১৩ মার্চ ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৯’ শুরু হচ্ছে। ওই আয়োজনের ব্যস্ততার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ১৩ মার্চের পর মন্ত্রণালয়ে সভা করে লিখিত পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে শিক্ষক নেতারা পিবিএ’কে জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন স্কেলের এই পরিবর্তনে প্রধান শিক্ষকরা খুশি হলেও সহকারী শিক্ষকরা খুশি নন। তারা সহকারী প্রধান শিক্ষকের নতুন পদটি চান না। তারা মনে করছেন, এ পদ সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পেতে সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। আর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি না থাকলে এক ধাপ পদোন্নতি পেলেই প্রধান শিক্ষক হওয়া যাবে। তারা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপেই বেতন চান।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ পিবিএ’কে বলেন, আমাদের দাবি প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেড। কিন্তু সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হলে আমরা যখন ওই পদে পদোন্নতি পাব, তখন এমনিতেই আমরা ওই পদের স্কেলে বেতন পাব। তাহলে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য থেকেই যাবে। তাই আমরা এ মুহূর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ চাই না। আমরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে বেতন চাই।
পিবিএ/জেআই