আশাভঙ্গ

পরীক্ষায় একাধিকবার ফেল ল্যান্ডার বিক্রম!

পিবিএ ডেস্ক: আশাভঙ্গ হয়েছে। তবে এমনটা যে হতেও পারে, ব্যর্থতার সেই আশঙ্কার বীজটি বহু আগে থেকেই বোনা হয়ে গিয়েছিল ইসরোর অন্দরে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার পথে ল্যান্ডার বিক্রম কতখানি সফল হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিল বিজ্ঞানীদের একাংশের। যার কারণ নিহিত রয়েছে পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যেই।

ইসরোর বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণার ফসল চন্দ্রযান ২। ধাপে ধাপে প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে পরীক্ষার পরই তাকে চাঁদে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। চন্দ্রযানের দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ ল্যান্ডার বিক্রম, চাঁদের মাটিতে নামার জন্য যাকে তৈরি করা হচ্ছিল, সেই অংশেই গলদ রয়ে গিয়েছে । শুক্রবার মাঝরাতে অবতরণের পথে আচমকা বিক্রম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকে এমনই নানা গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে ইসরোর আশেপাশে।

বিক্রমকে সফল করতে তামিলনাডুর নামাক্কালে চাঁদের মতো কৃত্রিম মাটি এবং পরিবেশ তৈরি করে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেখানেই বিক্রমকে পরীক্ষামূলকভাবে অবতরণ করানো হচ্ছিল বারবার। শোনা যাচ্ছে, সেই পরীক্ষায় একবারও নাকি প্রবেশ করতে পারেনি বিক্রম। বারবারই সে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। তবে সাফল্যের হার দিনে দিনে একটু একটু করে বাড়ছিল। তাতেই আশা দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা।

এই বুঝি সফলভাবেই চাঁদের মাটিতে নেমে গেল ইসরোর তৈরি ল্যান্ডারটি। পরীক্ষামূলক অবতরণে বিক্রমের সাফল্যের হার ছিল সাকুল্যে ২৪ শতাংশ। তাতেই ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবন সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন বলে গুঞ্জন বিজ্ঞানী মহলে।

কিন্তু কেন? চন্দ্রযান ২ ভারতের কাছে স্বপ্নের একটা প্রকল্প, কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে মহাকাশ গবেষণায় এক মাইলফলক হতে চলা প্রকল্পের পরীক্ষা পর্বে এত সামান্য সাফল্য নিয়েও কেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাকে পাঠানো হল চাঁদের উদ্দেশে? এই প্রশ্ন ওঠা তো স্বাভাবিক। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে বিক্রমের হারিয়ে যাওয়াকে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যর্থতা বলেই মনে করছে ইসরো।

সেই তুলনায় সাফল্যের হার চূড়ান্ত পর্বে অনেকটাই বেশি, তা বলাই যায়। তবু ১০০ শতাংশ সফল না হতে পারা কিছু না কিছু সমালোচনার জন্ম দেবেই। তা এড়ানো মুশকিল।
বুধবার যখন চাঁদের অন্তিম কক্ষপথে ঘুরছিল বিক্রম, তখন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে তার দূরত্ব ছিল ৩৫ কিলোমিটার। আর অরবিটারের দূরত্ব ছিল ২০০ কিলোমিটার। এমন সময়েই পূর্ব পরিকল্পনা পালটে অরবিটারকে কিছুটা নামিয়ে আনা হয়। ২০০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে নামানো হয়, যা আদৌ চন্দ্রযান ২ -এর প্রোগ্রামিংয়ে ছিল না।

তবু বিজ্ঞানের চলার পথে ধ্রুবক বলে তো কিছু নেই। তাই পরিকল্পনা বদল স্বাভাবিক এক্ষেত্রে। অরবিটারের দূরত্ব কমানোও পরিস্থিতি সাপেক্ষ একটি সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাহলে কি অরবিটারটিকে বাঁচাতে এই পরিকল্পনা বদল? যাতে অন্তত অরবিটার ফিরে এসে বিক্রমের গতিবিধি জানাতে পারে?

এসব প্রশ্নের উত্তর কি মিলবে? তা নাও মিলতে পারে, তবে ২ দিন পর অরবিটার ফিরে এসে কিছু না কিছু উত্তর জানাবে, তা নিশ্চিত। আর সেখানে সুখবর পাওয়ার আশাতেই রয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। সেইসঙ্গে দেশবাসীও।

পিবেএ/সজ

আরও পড়ুন...