পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনে ৩ আসনেই তৃণমূলের জয়

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় -ফাইল ফটো

পিবিএ ডেস্ক: গত লোকসভা নির্বাচনের ধাক্কা ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস। বিধানসভার তিনটি আসনের উপনির্বাচনেই জয় পেয়েছে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিস্ময়কর সাফল্যের ছয় মাসের মাথায় ধরাশায়ী হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। দলটি একটি আসনেও জিততে পারেনি। সোমবার অনুষ্ঠিত তিন আসনের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার।

এই প্রথমবারের মতো কালিগঞ্জ ও খড়গপুর সদর বিধানসভা আসনে জয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। করিমপুরের আসনটিও জিতেছে দলটি। উপনির্বাচনে এই অভাবনীয় বিজয়ে উচ্ছ্বসিত মমতা বলেছেন, বিজেপির ঔদ্ধত্য ও অহংকার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। সেই রাজনীতির পরাজয় হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘১৯৯৮ সালে দল প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে ২১ বছর ধরে আমরা কোনোদিন কালিগঞ্জ ও খড়গপুর আসনে জিততে পারিনি। এটা মানুষের জয়।’

এর পরই বিজেপির বিরুদ্ধে গত লোকসভা নির্বাচনে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘কালিগঞ্জ ও খড়গপুরে বিপুল ব্যবধানের জয় মূলত বিজেপির জাতীয় নাগরিক পঞ্জি-এনআরসিকে কেন্দ্র করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরির কারণেই। বাংলার মানুষ সবাইকে নিয়ে চলে। আমরা বদলা নয়, বদল নিয়ে এসেছি।’

খড়গপুর সদর আসনের উপনির্বাচনকে দেখা হচ্ছিল তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যকার মর্যাদার লড়াই হিসেবে। কারণ এই আসনের নির্বাচিত বিধায়ক ছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি জয়ী হলে আসনটি ফাঁকা হয়। কিন্তু বিজেপির এই আসনটিই প্রায় ২১ হাজার ভোটের ব্যবধানে ছিনিয়ে নিয়েছেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার।

একই অবস্থা কালিগঞ্জ বিধানসভা আসনেও। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে ৫৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি। কিন্তু উপনির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর গতকাল ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা গেল, প্রায় আড়াই হাজার ভোটের ব্যবধানে আসনটিতে জয় পেয়েছেন তৃণমূলের তপন দেব। জয়ের পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘এনআরসি ইস্যু সামনে আনায় মানুষ বিজেপির ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। তারা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে।’ একই কথা শোনা গেছে মমতার কণ্ঠেও। তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি কখনও এনআরসি, কখনও অন্য কিছু নিয়ে যা খুশি প্রচার করেছে। অথচ এই মানুষরাই দীর্ঘ দিন ধরে ভোট দিয়েছেন, এমপি-বিধায়ক বানিয়েছেন। এখন বিজেপি বলছে- তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ দিতে হবে!’ কালিগঞ্জ আসনে বিজেপির পরাজিত প্রার্থী কমল চন্দ্র সরকার বলেছেন, ‘এনআরসির কারণেই আমরা হেরে গেছি। এটা আমাদেরই দুর্বলতা। এখন আমরা উপলব্ধি করতে পারছি, এনআরসির কারণে মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত। তাদের বোঝাতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা।’

গত লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের ১৮টিতে জয় পেয়েছিল বিজেপি। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওই রাজ্যে বিজেপি আসন পেয়েছিল মাত্র ২টি। অন্যদিকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল রাজ্যটিতে ৩৪টি আসনে জিতেছিল। গত লোকসভা নির্বাচনে যা কমে হয় ২২টি। গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির তুমুল বাগ্‌যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে কলকাতাসহ আশপাশ এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু তৃণমূল এ সিদ্ধান্তের তুমুল বিরোধিতা শুরু করে। এনআরসি আতঙ্কে বেশ কয়েকজন বাসিন্দার আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হলে রাজ্যটিতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। বিশ্নেষকরা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি নিয়ে বিভক্তির রাজনীতিরই চরম জবাব পেল বিজেপি। সূত্র: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...