পাউবো’র সেচ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখল

পিবিএ, নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁশবাড়িয়া হালকা সেচ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। ১৯৮৯ সালে সুবিধাভোগিদের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে এই প্রকল্প দেখার কেউ নেই। যার কারনে প্রকল্পের পাকা ড্রেন, খাল ভরাট করে বসত বাড়ী, দোকানপাট ও বেসরকারি অফিস নির্মান করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। পুনরায় প্রকল্পটি সরকারী ব্যবস্থাপনায় নিয়ে চালু করার দাবী স্থানীয়দের।

জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগরে প্রায় ৩০ একর জমি অধিগ্রহন করে কৃষকদের সুবিধার জন্য ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করে বাঁশবাড়ীয়া হালকা সেচ প্রকল্প। এর ২ একর জমিতে নির্মিত হয় স্টাফ কোয়ার্টার, অফিস ঘর ও মেশিন ঘর। অবশিষ্ট জমিতে পানি সরবহরাহের জন্য নির্মান করা হয় পাকা নালা ও শাখা নালা। নালাগুলো বাঁশবাড়ীয়া, মুন্সিপাড়া, কৈচরপাড়া, চাঁপাপুকুরের মধ্য দিয়ে কালিকাপুর মাঠ, অন্যদিকে গয়লার ঘোপ পর্যন্ত বিস্তৃত।

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁশবাড়িয়া হালকা সেচ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে।
পাকা ড্রেন, খাল ভরাট করে বসত বাড়ী, দোকানপাট ও বেসরকারি অফিস নির্মান করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা

এসব এলাকার ২ হাজার ৩শ’ একর জমিকে প্রকল্পের আওতায় এনে ১৯৬৮ সালে বড়াল নদী থেকে পানি উত্তোলন করে তা সরবরাহের জন্য ৩০টি ডিজেল চালিত সেচ পাম্প বসানো হয়। পরে পর্যায়ক্রমে খরচ কমাতে ডিজেল পাম্প পরিবর্তন করে বৈদ্যুতিক পাম্প ব্যবহার করা হয়। এর ফলে এক সময় যে সব জমি অনাবাদি হিসেবে পড়ে থাকতো, সে সব জমিতে উর্বরতা ফিরে আসে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে এলাকার কৃষকদের মধ্যেস্বচ্ছলতা ফিরতে থাকে ।

এদিকে ১৯৮৯ সালে হঠাৎ করে এই প্রকল্পের কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সুবিধাভোগিদের কাছে। কিন্তু নানা কারণে পাম্পগুলো বন্ধ থাকে। তাছাড়া নজরদারির অভাবে ওই প্রকল্পের জমিসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেদখল হতে শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমিতে বসত বাড়ী, পাকা দোকান, বেসরকারি অফিস, ড্রেন ভরাট করে রাস্তা তৈরি করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
যার দরুণ এখন আর তেমন কোন সুবিধাই পাচ্ছেনা কৃষকরা। ফলে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছেন। একে একে হারিয়ে গেছে অধিকাংশ সেচ পাম্প, নষ্ট হয়ে গেছে লোহার পাইপ লাইন, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে পাকা নালাও। এলাকার ভুক্তোভোগিদের দাবী প্রকল্পটি দখলমুক্ত করে পুনরায় চালু করার।

পাকা ড্রেন, খাল ভরাট করে বসত বাড়ী, দোকানপাট ও বেসরকারি অফিস নির্মান করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

এবিষয়ে এলাকার কৃষক ইয়াকুব আলী, আবুল কালাম, আয়ুব আলী, হোসেন আলী, বারেক আলী, সেকেন্দার রহমানরা জানান, সেচের অভাবে তারা সুষ্ঠভাবে ফসলাদি উৎপাদন করতে পারছেন না। ফলে তারা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। বর্তমান সেচ প্রকল্পের আওতার সুবিধাভোগী কৃষক সমিতির সভাপতি কাজি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পুরো এলাকাকে তিনটি ডিভিশনে বিভক্ত করে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমানে শুধুমাত্র একটি ডিভিশনের গয়লার ঘোপ অঞ্চলে মাত্র ২টি বিদ্যুৎচালিত মর্টারের মাধ্যমে প্রায় দুইশ’ হেক্টর জমিতে সেচ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় এবং এসব যন্ত্রাংশ মেরামতের আর্থিক সংকুলান না থাকায় অন্য দুটি ডিভিশন বন্ধ রয়েছে। আর এ বন্ধ থাকার সুযোগে সেখানকার জমিগুলো প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।

স্থানীয় জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, প্রকল্পটির পুরো সম্পদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাদের উদাসীনতার কারনে এসব সম্পদ বেদখলে যাচ্ছে। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রকল্পটি বেদখল বা বন্ধ হয়ে গেলে শুধু সরকারের সম্পদেরই ক্ষতি হবেনা এলাকার কৃষকরাও পড়বেন বিড়ম্বনায়। আর সর্বোপরি বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের চালিকা শক্তি কৃষি উৎপাদনে। তিনি দ্রুত দখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।

প্রকল্পের এমন পরিস্থিতিতে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান জানান, সরকারি প্রকল্প সরকার স্থানীয় সুবিধাভোগিদের কাছে হস্তান্তর করেছে। এখন এগুলো তারাই দেখাশুনার করেন। তবে ইতোমধ্যেই দখল হয়ে যাওয়া জমিগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। দখলমুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই দখলদারদের উচ্ছেদ করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা হবে।

পিবিএ/এফআর/আরআই

আরও পড়ুন...