পিবিএ, কিশোরগঞ্জ : আট থেকে নয় বছর আগে প্রথমবার তুলা চাষ করেছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা গ্রামের ইসলাম মিয়া। সেবার ভাল ফলন ও লাভ পেয়েছিলেন তিনি। তাই প্রতি বছর বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষ করে আসছেন এ তুলা চাষী। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকা, বন্যা, অতি বৃষ্টি ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অসহযোগিতার কারণে প্রথমবারের পর আর লাভের মুখ দেখা হয়নি তার। তারপরেও আশা ছাড়েননি। এবছরও বিশাল জমি লিজ নিয়ে তুলার চাষ করেছেন। কিন্তু বিধিবাম। এবছরও তার ভাগ্যে লাভ জুটছে না। পোকার আক্রমণ থেকে তুলা গাছকে বাঁচাতে যে ওষুধ প্রয়োগ করেছিলেন, তাতে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কাঙ্খিত ফলন আসেনি। যেখানে ৩০ বিঘা জমি থেকে প্রায় ২০০ মন তুলা পাওয়ার কথা ছিলো। সেখানে পেয়েছেন মাত্র ১৫০মন। এতে করে খরচের টাকাও উঠবে না। ফলে এবারও মুনাফা বঞ্চিত হতে হচ্ছেন এ তুলা চাষীকে।
পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাওনা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তীর্ণ চর ও এর পাড়ে অনেক জমি রয়েছে ইসলাম মিয়ার। বিস্তীর্ণ চরের ওই জমিতে বিভিন্ন রকমের ফসলের আবাদ করলেও তুলা চাষের জন্য আরও ২০ বিঘা জমি এক লাখ টাকা দিয়ে লিজ নিয়ে মোট ৩০ বিঘা জমিতে করেছেন তুলা চাষ। এ উপজেলার একমাত্র তুলা চাষী ইসলাম মিয়া। তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে স্বল্প সুদের ঋণে প্রতিবছর তুলা চাষ করে থাকেন। কিন্তু যথাসময়ে ঋণের টাকা না পাওয়া ও তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার।
তিনি বলেন, তুলা উন্নয়ন বোর্ড চাষীদের উৎসাহ প্রদানে প্রচুর টাকা খরচ করে থাকেন। কিন্তু তুলা চাষ কেউ করেন না। এ উপজেলায় তিনিই একমাত্র তুলা চাষী। যদি তাকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হতো, তবে তিনি বাণিজ্যিকভাবে তুলা চাষে আরও বেশি উৎসাহিত হতেন বলেও জানান।
সরেজমিনে বিস্তীর্ণ চরের ওই তুলা চাষের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা তুলা গাছে সাদা ধবধবে তুলা ফুটে আছে। এ যেন সাদা ধবধবে ফুলের বাগান। হালকা ছোয়াতেই সেগুলো তুলে বস্তায় ভরছেন ৫-৬জন নারী শ্রমিক। জমির পাশেই রয়েছেন তুলা চাষী ইসলাম মিয়া। কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, এবছর ৩০ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছেন। বীজবপণ, নিড়ানি, সার ও কীটনাশক ও তুলা উত্তোলনে শ্রমিক খরচ বাবদ এতে খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
তুলা চাষ করতে সময় লাগে সাত মাস। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বীজ বপন করা হয়। দুই থেকে তিন মাস পর ফল আসা শুরু হয়। এর প্রায় মাস দেড়েক পর তুলা উত্তোলনের উপযোগী হয়। একবারের চাষ থেকে তিনবার তুলা উত্তোলন করা হয়। ৩০ বিঘা জমি থেকে ২শ মন তুলা পাওয়ার আশা করলেও ফলন পেয়েছেন ১৫০মণ। যা তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্ধারিত ২৫০০টাকা দরে বিক্রয় করলে খরচ তোলা কষ্টকর হয়ে পড়বে। এতে তিনি এবছরও লোকসানের মুখে পড়েতে যাচ্ছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
এ ব্যাপারে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের পাকুন্দিয়া অফিসের কটন অফিসার মো.নজরুল ইসলাম তার উপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘তুলার মূল্য আন্তর্জাতিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। এতে আমাদের কোন হাত নেই। এবছর ২৫০০টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তুলা চাষী ইসলাম মিয়াকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।’
পিবিএ/এসএইচআর/জিজি