পিবিএ ডেস্ক: ১৯৯৮ সালে শুধু আলোকচিত্রীদের নিয়ে কাজ শুরু করে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট। গত বছর থেকে এখানে ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের আওতায় চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোগ্রাম চালু হয়েছে। বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে আছেন মঞ্চ ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব খ ম হারুন। এ ছাড়া পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট হিসেবে এই কোর্স পরিচালনা করছে তারা।
প্রতি বছর মোট ২৫ জন নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে এই প্রোগ্রামে। দেড় বছর মেয়াদের এই প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য এসএসসি, এইচএসসি এবং স্নাতক পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২.৫ জিপিএ/সিজিপিএ থাকা চাই। প্রতি বছর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পাঠশালার এই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। সকল একাডেমিক সনদের ফটোকপি, জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন করলে প্রাথমিক লিখিত পরীক্ষা আর চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়।
সাউন্ড অ্যান্ড মিউজিক, স্ক্রিপ্ট অ্যান্ড স্ক্রিন-প্লে, পরিচালনা, মঞ্চসজ্জা, সম্প্রচারসহ গোটা কোর্সে চলচ্চিত্রের নানা দিক নিয়েই শেখানোর চেষ্টা করা হয় শিক্ষার্থীদের। ছয় মাসের প্রতি সেমিস্টার শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষা। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে ক্লাস, কর্মশালা আর অ্যাসাইনমেন্ট তো থাকছেই। প্রোগ্রাম শেষে সেরাদের জন্য দেশসেরা মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে। ক্যাম্পাসে পুরোনো শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলেছে পাঠশালা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ফোরাম। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা নতুন শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহ জোগায় এবং নানা ধরণের কর্মশালা আয়োজন করে।
পাঠশালায় ঘুরতে গিয়ে দেখা হয় গত বছর থেকে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়া একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। হাতে ক্যামেরা আর চোখে স্বপ্ন বোঝাই এই তরুণ-তরুণীদের দিকে তাকালে চেনা যায় আগামীর বাংলাদেশকে। আলাপ হচ্ছিল আকবর রহমান আর সেফালী আক্তারের সঙ্গে। আকবর রহমান বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করব। কিন্তু দেশে বসে এসব নিয়ে কাজ করার কথা ভেবে ঠিক স্বস্তি পেতাম না। পাঠশালায় এসে বুঝতে পেরেছি যে চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যবহারিকের পাশাপাশি পড়াশোনাও বেশ জরুরি।’ সেফালীর গল্পটাও অন্য রকম। মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছেন। বিয়ের পর স্বামীর পূর্ণ সমর্থনে এখন পর্যন্ত পরিবার, সমাজ, কাজ—সব সামলে তিনি তৈরি করেছেন ৩০ টিরও বেশি প্রামাণ্যচিত্র। কাজ করেছেন দেশ-বিদেশের নানা মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে।
আধুনিক এডিটিং ল্যাব, নিজস্ব ক্যামেরা, রেকর্ডার, ড্রোন, কালার ল্যাব, মুভি হল ব্যবহার করে সব ধরণের প্রোগ্রাম পরিচালনা করে পাঠশালা চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিভাগ। দেড় বছরের এই প্রোগ্রামে একজন শিক্ষার্থীকে খরচ করতে হয় প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। পাশাপাশি আনুষঙ্গিক কিছু খরচও থাকছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে আবেদন করলে ছাড়ের ব্যবস্থাও করে দেয় পাঠশালা।
ধানমন্ডির এই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলতি বছরের শেষ দিকে পান্থপথে বড় পরিসের নিজস্ব ভবনে যাত্রা শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের চলচ্চিত্র প্রাঙ্গণে যে আধুনিকতার ছোঁয়া, সেখানে আগামী দিনের তরুণদের সুযোগ দিতে চায় তারা।
খ ম হারুন
বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন, পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট
পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহীদুল আলম। গত দুই দশকের পথচলায় প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে আমাদের দেশের মিডিয়া জগতে অবদান রেখে চলেছে। আমাদের এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে কাজ করছে। এ ছাড়া বিদেশের নামি-দামি প্রতিষ্ঠানেও তাঁদের কাজের চাহিদা রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা মানের দিক দিয়ে কখনো আপস করবে না। সৃষ্টি, সম্ভাবনা আর ভবিষ্যৎ—এই তিনের মেলবন্ধনে পাঠশালা গড়ে তুলতে চায় আগামীর তরুণদের। আমাদের স্বল্পমেয়াদি প্রফেশনাল কোর্সগুলোতে বছরের যেকোনো সময় ভর্তি হওয়া যায়। এই কোর্সগুলো সম্পন্ন করে যে কেউ মিডিয়াতে তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অধিভুক্ত ইনস্টিটিউট হিসেবে পাঠশালা ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন’ প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রমও শুরু হতে যাচ্ছে। পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত নীতিমালায় পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান থেকে পেশাগত শিক্ষা সম্পন্ন করে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে-বিদেশে নানা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পাবে। জহির রায়হান, তারেক মাসুদ এঁদের কথা স্মরণে রেখে আমাদের নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে জেগে উঠবে। চলচ্চিত্র ও নিউ মিডিয়ায় সারা বিশ্বে তারা প্রতিনিধিত্ব করবে বাংলাদেশের। সূত্র: প্রআ।
পিবিএ/জেআই