পালরদী খালে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কম্পাউন্ড-আশোকাঠী সড়ক

পিবিএ,গৌরনদী (বরিশাল): কর্তৃপক্ষের অবহেলায় খরশ্রোতা পালরদী খালের তীব্র পানির শ্রোতে বিলিন হয়ে যাচ্ছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা কম্পাউন্ড-আশোকাঠী সড়কটি। অতি প্রাচীন এ সড়কটি সংস্কার ও পূর্ননির্মানে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ না থাকায় এ সড়কটি দিয়ে উপজেলার আশোকাঠীস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষ ও পালরদী মডেল স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের অবহেলায় খরশ্রোতা পালরদী খালের পানির শ্রোতের তীব্র টানে বিলিন হয়ে যাচ্ছে জনগুরুত্বর্পর্ন গৌরনদী উপজেলা কম্পাউন্ড থেকে আশোকাঠী পর্যন্ত এ আঁধাপাকা সড়কটি। জানা গেছে, দীর্ঘদিন মেড়ামত না হওয়ায় খালের পানির শ্রোতের টানে এ সড়কটির ইট বিছানো অংশের অধিকাংশ যায়গায় ইট ধ্বসে পড়ে ও দেবে গিয়ে খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। দু তিনটি স্থানে সড়কটি বেশীরভাগ অংশ ধ্বসে খালের পানিতে বিলিন হয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ শুরু হলে সড়কটির কাঁচা মাটির অংশে ধ্বস নামে সব চাইতে বেশী।

পালরদী খালে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কম্পাউন্ড-আশোকাঠী সড়ক
পালরদী খালে বিলিন হয়ে যাচ্ছে কম্পাউন্ড-আশোকাঠী সড়ক

অর্ধেক ইটের ও অর্ধেক কাঁচা মাটির তৈরী এ সড়কের কাঁচা মাটির অংশের বেশীর ভাগ এলাকা খালের পানির তীব্র শ্রোতের টানে পার্শ্ববর্তী পালরদী খালের গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে ভারী যান-বাহনতো দুরের কথা ছোট যানবাহনসহ রিকসা-ভ্যানও চলাচল করতে পারছেনা।

জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির উপজেলা কম্পাউন্ড সংলগ্ন শাহ আলম ঠিকাদারের বাড়ির সামনের অংশ ভেঙ্গে পালরদী খালে বিলিন হওয়ায় বন্ধ হয়ে পথচারীদের চলাচল গিয়েছিল। পরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয়রা ভাঙ্গনস্থলে কাঠ দিয়ে চালা বানিয়ে দেয়। পালরদী খালের ভাঙ্গন এ ভাবে অব্যাহত থাকলে অচিরেই এ সড়ক দিয়ে জনচলাচলও বন্ধ হয়ে যাবে।

এখনই ভাঙ্গন এলাকায় বাঁধ দিয়ে সড়কটিকে রক্ষার জন্য সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। অভিযোগ আছে, এ সড়কটিকে কার্পেটিং করার জন্য ২০১০সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দরপত্র আহব্বান করা হয়। এরপর একজন ঠিকাদার নিয়োগ করে তাকে ওয়ার্কঅর্ডারও দেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সংশ্লীষ্ট ঠিকাদার সড়কটি কার্পেটিং করার কাজ সম্পন্ন করেননি।
গৌরনদী উপজেলা এলজিইডি অফিস ও স্থানীয় ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, এ সড়কটি উপজেলা সদরের অতি প্রাচীন সড়ক হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এ সড়কটিকে কখনো কার্পেটিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

জনগুরুত্বপূর্ন এ সড়কটি দিয়ে উপজেলা সদরের তিখাসার, চর গাধাতলী, আশোকাঠী. গেরাকুল, দক্ষিন বিজয়পুর গ্রামের হাজার হাজার গ্রামবাসী প্রতিদিন অতি অল্প সময়ে উপজেলা কম্পাউন্ড গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পৌরসভা কার্য্যালয়, থানা কম্পাউন্ড, গৌরনদী বন্দর, পালরদী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, গৌরনদী গার্লস হাইস্কুল এন্ড কলেজ, আশোকাঠী বাজার, সরকারি গৌরনদী কলেজসহ বিভিন্ন অফিস বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন।

এ ছাড়া দেশীয় ও বিদেশী পর্যটকদের কাছে আকর্ষনীয় প্রাচীন নিদর্শন গৌরনদীর প্রয়াত জমিদার মোহন লাল সাহার জমিদার বাড়িটিতে যাতায়াতের একমাত্র প্রবেশদ্বার হচ্ছে এ সড়কটি। ফলে ওই জমিদার বাড়ীটি পরিদর্শনে আসা দেশী বিদেশী দর্শনার্থীদেরও বাড়িটিতে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি উন্নয়ন করার দাবীটি ছিল এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি।

এ কারনে স্বাধীনতা পরবর্তী গত ৪৮ বছর ধরে স্থানীয়রা এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধর্ণা দিয়ে আসছে। অথচ গত ৪৮ বছরেও সড়কটিকে কার্পেটিং করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে সড়কটি কার্পেটিংয়ের জন্য ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়।

নিয়ম অনুযায়ী গত ২০১০ সালের জুন মাসে ওই প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হয়। টেন্ডার প্রকৃয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সড়কটির উন্নয়ন কাজ বান্তবায়নের জন্য নিযুক্ত ঠিকাদারকে ওই মাসেই ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া হয়। প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সংশ্লীষ্ট ঠিকাদার সড়কটিকে কার্পেটিং করেনি।

জনগুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াতে পথচারী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ কয়েক হাজার লোকের চরম দুর্ভোগ পোহানোর কথা স্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ অহিদুর রহমান জানান, সড়কটি কার্পেটিংয়ের জন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে। তবে এটি খুবই ব্যায়বহুল।

সড়কটির পার্শ্বে খরস্রোতা পালরদী খালের পূর্ব পাড়ে দীর্ঘস্থায়ী পাইলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঢাকা থেকে লোক এনে এর ডিজাইন ও প্রকল্প গ্রহন করতে হবে। মজবুত পাইলিং ছাড়া এ সড়কের কাজ করলে কোনভাবেই ওই কাজ টিকিয়ে রাখা যাবেনা। আমরা অতি দ্রুতই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছি।

পিবিএ/কেএমএম/আরআই

আরও পড়ুন...