পালিয়েছেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন: ফাইল ছবি

পিবিএ,ঢাকা: ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন পালিয়ে গেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে লুকোচুরির পর এখন পুলিশ মোয়াজ্জেমের পালানোর কথা বলছে। ফেনী ও রংপুর দুই জায়গার পুলিশই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

গত ২৮ মে’তেই সংবাদমাধ্যমে প্রথম ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুজরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আলোচনায় আসা ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গা ঢাকা দেয়ার খবর আসে।

তার আগেরদিন সোমবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর খোঁজ নিতে গেলে কেউই বলতে পারেননি ওসি মোয়াজ্জেম এখন কোথায়। অথচ তার দুদিন আগেও তাকে রংপুরে দেখা গিয়েছিল বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর আসে। আবার আত্মগোপনে যাওয়ার পরেরদিন অর্থাৎ ২৯মে তার পক্ষে জনৈক অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানাকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন চাইতেও দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল সোনাগাজী থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর গত ৮ মে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হলে তিনি সপ্তাহ খানিক পর রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য গতকাল শনিবার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গ্রেপ্তএরি পরোয়ানা রংপুরে এসেছে। কিন্তু মোয়াজ্জেম হোসেন অনুমতি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন। পরোয়ানাটি সোনাগাজী থানার ওসির কাছে পাঠানো হয়েছে। রংপুরে পাঠানোর ক্ষেত্রে বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বিধি মোতাবেক কাজ করার জন্য তিনি ফেনীর পুলিশকে জানাবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। কিন্তু পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। এখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন সটকে পড়েছেন। এর আগে তাঁর মুঠোফোনটি সচল থাকলেও গতকাল তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

এর আগে ২৯ মে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের স্টাফ অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকায় গেছেন। তার ভাষায়, ‌”সংযুক্তির আদেশ দেয়ার পর কয়েক দিন আগে মোয়াজ্জেম হোসেন রংপুর রেঞ্জে যোগদান করেন। ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে তলব করায় তিনি ঢাকায় গেছেন বলে শুনেছি। এখন কোথায় আছেন সেটা জানি না।”

মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, মামলাটির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক নিজেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন, নেননি। এখন যেহেতু পরোয়ানা ফেনী ও রংপুর দুই জায়গাতেই পৌঁছেছে বলে পুলিশ স্বীকার করেছে, দেখা যাক তারা এখন কী করে। তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমকে কোথাও দেখলে ধরে পুলিশে দিন।’

প্রসঙ্গত,মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করতে গিয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের হয়রানির শিকার হয়েছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওসি তার নিজের কক্ষে ঘটনা জানার নাম করে আরেক দফা হয়রানির করেছিলেন মেয়েটিকে। এসময় অঝোরে কাঁদতে থাকা মেয়েটির ভিডিওচিত্র ধারণ করা হচ্ছিল।পরে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন ফেনীর সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

পরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

সোমবার ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানালে শুনানি শেষে বিচারক গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...