আওয়ামী লীগ যদি অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তাই দেশ নিয়ে ছেলে খেলা না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ অন্যরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের রাজপথে নামার প্রয়োজন ছিল না উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, কিন্তু ওই কুচক্রী মহল ও ফ্যাসিজমের দোসররা এখনো চক্রান্ত করছে। তারা দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন জনের সাথে মিলে বিভিন্ন অপকর্ম করছে। তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করে যে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে, সেটি প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্র-জনতাকে আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না আমাদের রাস্তায় নামার মাধ্যমে আমাদের একজন ভাই-বোনের চলাফেরায় বিন্দুমাত্র অসুবিধা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন আমাদের কষ্ট করে হলেও রাস্তায় নামতে হয়। কারণ দেশ যদি দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সে জায়গা থেকে আমরা ছাত্র-জনতা আজকে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি।
তিনি বলেন, আমরা শুনছি বিভিন্ন মহল থেকে আজকের ১৫ই আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারের যারা দোসর ছিল তারা আবার একটি পাল্টা গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্র-জনতা গত ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে, তারা যদি আবার দেশে একটি পাল্টা গণঅভ্যুত্থান ঘটানোর বিন্দু মাত্র চেষ্টা করে, তাহলে তাদের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না। এজন্য তাদের আমরা ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে হুঁশিয়ার এবং সাবধান করে দিতে চাই, এদেশ নিয়ে আর কোন ছেলেখেলা করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি আরও বলেন, এ দেশটা ছাত্র জনতা মিলে একসাথে যেদিকে যাওয়া প্রয়োজন সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা করা প্রয়োজন আমরা তাই করব।
কেউ যদি আমাদের এই দেশ নিয়ে বিন্দুমাত্র কোন অপচেষ্টা করে ছাত্র-জনতা যে কোন মুহূর্তে রাস্তায় নেমে তাদের প্রতিহত করবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার দফার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, আমরা এই ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দিয়েছি এই জায়গা থেকে যে, বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে কিছু দোসর শয়তানকে নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) এই সপ্তাহে একটি পাল্টা গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে চায়। সেই জায়গা থেকে আমাদের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দেয়া। তারা যদি তাদের জায়গা থেকে কোনো নোংরা পরিকল্পনা করে, এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য আমরা ছাত্র-জনতা এই ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে আমরা বিশ্বাস করি সেটি ছাত্র জনতার সরকার। আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করবো, চাপে রাখবো। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, তাদের সদিচ্ছা রয়েছে। তারা আমাদের দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেনে নিবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে দাবিগুলো জানিয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে, তাদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। আমাদের এই সরকারের ওপর আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেগুলো করবে। কিন্তু তাদের মধ্য যদি আমরা কোন দীর্ঘসূত্রিতা দেখি, আমরা বলে দিচ্ছি, আমরা তাদেরকে যেমন ওই গদিতে বসাতে পারি, তাদেরকে আমরা নামাতেও পারি। আমরা তাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমরা জানি কোন কাজটা করতে কতটুকু সময় লাগে। ততটুকু সময়ের মধ্যে এই কাজটি অবশ্যই হতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতা এই শাহবাগের মঞ্চ থেকে পুরো বাংলাদেশে আবার তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলবে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগের জাদুঘরের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি চলছে। অন্যদিকে শাহবাগের ফুলের দোকানে সামনে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করছে বৈষম্যবিরোধী সাংস্কৃতিক জোট।