পাহাড়ে বাণিজ্যিক মিশ্র ফল বাগানে ঘুরছে ভাগ্যের চাকা


পিবিএ,খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে বাণিজ্যিক ভাবে মিশ্র ফলের বাগান করে দিন বদলে গেছে অনেকের। পেঁপে, আনারস, কলা, আম সহ বিভিন্ন ধরনের ফল এক সাথে আবাদ করে আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে করে প্রতিবছরই কৃষকদের মধ্যে বাড়ছে উৎসাহ ও বাগানের সংখ্যা। একাধিক বাগান মালিকরা জানান, বিষমুক্ত ফল উৎপাদন করায় তাদের ফলের চাহিদা রয়েছে বেশি। এসব ফলে নেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। তাই এসব ফল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে সমতলেও।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় কোটি কোটি টাকার ফল বিক্রি হয়ে আসছে। খাগড়াছড়ির,দিঘীনালা,পানছড়ি,মহালছড়ি,মাটিরাঙা,গুইমারা,মানিকছড়ি,রামগড়,লক্ষ্মিছড়ি উপজেলায় এলাকা রয়েছে হাজার হাজার একর বাগান। আর তাই বলা যায় যে, এই পার্বত্য জেলা সবচেয়ে লাভ জনক ব্যবসা হলো বিভিন্ন ফল মুলের বাগান করা। আর এই এলাকার অধিকাংশ মানুষ এই বাগান করার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে স্বাভালম্বি হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় পাহাড়ি জমি লীজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বিশাল বাগান করেছে আতিউর রহমান নামের এক যুবক। একসাথে পেঁপে,আনারস,কলা,লেবু,আম ও মাল্টার সহ অনেক ফলের আবাদ করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন সে। বর্তমান সময়ে ফলের মৌসমে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। ভালো ফলন এবং লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই তার সফলতা দেখে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকে। এলাকায় বাড়ছে পাহাড়ি জমিতে মিশ্র ফল বাগানের সংখ্যাও। এতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থানও।

ফল চাষিরা বলেন, বিষমুক্ত ফল মানুষকে খাওয়ানোর পরিকল্পনা থেকে এটা শুরু করেছি। পরে পেঁপে আনারস,কলা,আম, হরতোকি ইত্যাদি ফল লাগিয়ে এখন মাল্টা লাগানো শুরু হয়েছে। এতে প্রায় ৭০-৮০ লাখ টাকা আয় করতে পারবো বলে আশাবাদী তারা। তবে স্থানীয়ভাবে বাজার ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বাগান থেকেই ফল কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী জানান, এখান ফল চট্টগ্রাম,ঢাকা,কুমিল্লা,ফেনীসহ বিভিন্ন জায়গা বিক্রি করি। পাহাড়ী টিলা ও জমির বাগান থেকে বছরে প্রায় কোটি কোটি টাকার ফল বেচাকেনা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ সূত্র জানায়, এই ধরনের বাগান করার জন্য আমরা উৎসাহিত করে আসছি। এতে সফলতাও অনিবার্য।

অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে যাদেরই বাগান রয়েছে তাদের পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনের দাবীকৃত মোটা অংকের চাঁদা দেওয়াসহ না দিলে সন্ত্রাসীদের বাগানের ক্ষতিসহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি ও ক্ষতির ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাতে হয় স্থানীয় বাগান মালিক ও কৃষকদের।

কৃষি বিভাগ জানায়, খাগড়ছড়ি হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ফলের বাগান রয়েছে। খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি এলাকায়ও একটি বিশাল বিশাল বাগান করেছে। যার আয়তন প্রায় ৪০ একর। এই বাগানটি স্থাপিত হয় ২০০৪ সাল থেকে প্রাথমিক শুরু তারপর গত ৩-৪ বছর থেকে কৃষক থেকে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়।

এই বাগানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ফলমুলসহ ওষধী গাছ চাষ করা হচ্ছে-আম স্থানীয় জাত, বারি জাত,থাই বেড়াটি,মালশিয়ান বেড়াটি এবং বার মাসি প্রভৃতি, কাঠালঁ,স্থানীয় উন্নতজাত,স্থানীয় বারমাসি, ইন্দোনীশিয়ান ফিরকি, বিয়েতনামী বাড়মাসি প্রভৃতি, পেয়াঁরা: থাই,কেজি,স্থানীয় উন্নত জাত,কলা: সবরী,সাগর,বাংলা,চামপা,সূর্য্যমূখী,আনাজী কলা,বিচিকলা ইত্যাদি,পেঁপে:চাইয়ানী,রেড বেডী, স্থানীয় উন্নত জাত, মাল্টা:বারি ১,বারি ২,পাকিস্তানী। লেবু, কলম্ব লেবু, ইলাচি লেবু, স্ইুটি লেবু,জারা লেবু, সাতকর, জাম্বুরা, বাতামী লেবু, স্থানীয় উন্নত জাত, সরবতী লেবু। লেচু: চায়না ২ ও ৩, স্থানীয় উন্নত জাত, বোম্বাই। ডাগনফুট: বারি ১, লটকন: স্থানীয় উন্নত জাত, ডালিম: স্থানীয় উন্নত জাত, ওষধী গাছ, জলাপাই, আমলকী, হত্যকী, বয়রা, অপচরিত, পাইন্নপল, কামরাঙ্গা, আমড়া, বেলুম্ব ইত্যাদি।

সবজীর মধ্যে রয়েছে, টমেটো বারি ৪ (গ্রীষ্ম ও বর্ষা কালীন), বেগুন: কলীকাতা হাইব্রিড উন্নত জাত, বার্মি কম্পোষ্ট সারও রয়েছে। নারকেল: ভিয়েত নামী খাটো জাত,শুপারী, টেকনাফ, নেওয়াখালী এবং রংপুরের জাত, বেল: স্থানীয় উন্নত জাত। আতিউর এর রয়েছে মানিকছড়ি উপজেলা গচ্ছাবিলেও আরেকটি বড় বাগান।

অন্যদিকে গুইমারা উপজেলা জালিয়াপাড়ায় রয়েছে আরেকটি বিশাল বাগান যার মালিক হচ্ছেন সাহাজ উদ্দিন। তার বাগানেও বিভিন্ন প্রকার ফল মুল যেমন আম, জাম, কাঠালঁ, লেচু, মাল্টা উল্লেখযোগ্য। এই বাগানটি মুলত শুরু হয়েছিল ২০০১ সালে। যখন ওয়াদুদ ভুইয়াঁ পাবর্ত্য উন্নয়ন বোর্ডে চেয়ারম্যান ছিলেন। তিন পাবর্ত্য জেলায় আম,কমলা,বিভিন্ন জাতের বীজ ও চারা এনে পাহাড়ি-বাঙালিদের মাঝে বিতরনে মাধ্যমে শুরু হয় এই বাগানটি।

পিবিএ/ আল-মামুন/এমএসএম

আরও পড়ুন...